ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত সংস্থায় ৬৯৭ অভিযোগ তদন্তাধীন

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ২ জুন ২০১৯

  তদন্ত সংস্থায় ৬৯৭ অভিযোগ তদন্তাধীন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত সংস্থায় ৬৯৭ অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে ৩ হাজার ৫০৩ জন আসামি রয়েছে। এ পর্যন্ত তদন্ত সংস্থা তদন্ত করে ৭০টি মামলার প্রতিবেদন দিয়েছে। যার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৩৭টি মামলায় বিচার শেষে রায় ঘোষণা করেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩৩টি মামলায় ১৭১ আসামির বিভিন্ন পর্যায়ে বিচার কাজ চলছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় সারা দেশের জেলা, থানা ও অঞ্চলে হত্যা, ধর্ষণ লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিত, দেশান্তরকরণ ও গণহত্যার প্রায় ৪৭০ অভিযোগ যা দেশের বিভিন্ন বিচারালয়ে থেকে স্থানান্তর হয়ে তদন্ত সংস্থায় আসে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী ও শহীদ পরিবারের সরাসরি অভিযোগের আবেদনে ২২৭সহ মোট ৬৯৭ অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। চীফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে যার মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৩৭ মামলায় রায় ঘোষণা করেছে। ৩৭ মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছে ৫৯ জনকে, আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে ২৪ জনকে। আর একজনকে যাবজ্জীবন করাদন্ড প্রদান, একজনকে ৯০ বছরের দন্ড একজনকে ২০ বছরের কারাদন্ড প্রাদন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে ৭ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যার মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। আর একজনকে আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত দানবীর রণদা প্রসাদ (আরপি) সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাসহ ৭ জনকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের মোঃ মাহবুবুর রহমানের মামলা রায় ঘোষণার অপেক্ষায়। এটি হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৩৮তম রায়। ২৪ এপ্রিল এর মামলার উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি (অপেক্ষমাণ) রাখা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া দন্ডের বিরুদ্ধে ২৯ মামলা আপীল শুনানি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এবং জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপীল শুনানি ১৮ জুন। আদালত এ দিন নির্ধারণ করে বলেছে, ওই দিন আজহারের আপীল মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ১ নম্বরে ও কায়সারের আপীল মামলাটি কার্যতালিকায় ২ নম্বরে থাকবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেন। আপীল বিভাগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট মীর কাশেম আলীর মামলার রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়ার পর নতুন মামলার শুনানি হয়নি। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ একাত্তরে রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ৫টি অভিযোগই প্রমাণিত হয়।এর মধ্যে ৩টি অভিযোগে ফাঁসি, ২টিতে ৩০ বছরের কারাদন্ড ও একটিতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপীল করেন আজহারুল ইসলাম। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবীরা এ আপীল করেন। আপীলে খালাস চান তিনি। মোট ৯০ পৃষ্ঠার আপীলে খালাসের পক্ষে ১১৩টি যুক্তি তুলে ধরা হয়। একই অভিযোগে সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মৃত্যুদন্ড প্রদান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬ অভিযোগের মধ্যে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, মুক্তিপণ আদায়, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন এবং ষড়যন্ত্রের ১৪ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ৭ অভিযোগে ফাঁসি, ৪টিতে আমৃত্যু কারাদন্ড, ৩টিতে ২২ বছরের কারাদন্ড ও দুটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়। ২৩ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেন। ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আপীল করা হয়। সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের পক্ষে এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন এই আপীল করেন। এ মামলার শুনানি করবেন এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। আপীলে খালাসের আরজিতে ৫৬ যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ৫০ পৃষ্ঠার মূল আপীলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত রয়েছে।
×