ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মরা ডালের টেন্ডার নিয়ে তাজা গাছ সাবাড়

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২৮ মে ২০১৯

 মরা ডালের টেন্ডার নিয়ে  তাজা গাছ সাবাড়

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী নির্মূলচরে অবস্থিত বন বিভাগের গাছ ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া মরা ডালপালার টেন্ডার দেয়া হলেও তাজা গাছ কেটে নিয়েছে ঠিকাদার। এ ঘটনায় ঠিকাদারের এক প্রতিনিধিকে আটক করা হলেও মুচলেকা দিয়ে ছাড় পান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রেমতলী নির্মূলচরে অবস্থিত বন বিভাগের গাছ ঝড়ে পড়ে যাওয়া মরা গাছ ও ডাল ২০১৬-১৭ অর্থবছর ১০৬ নম্বর গ্রুপে টেন্ডার দেয়া হয়। ওই টেন্ডারের ভিত্তিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার স্বাক্ষরে ২০ মে ২ হাজার ৯৩৩.৪০ ঘনফুট কাঠ (জ্বালানি) অপসারণের জন্য নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামের নাজিম স-মিল মালিক নাজিমুদ্দিনকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়। এলাকাবাসী ও সুবিধা ভোগীদের অভিযোগ, গত ২০ মে থেকেই ঠিকাদারের লোকজন উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামের উপস্থিতিতে বনের সর্বোচ্চ তাজা ও মোটা গাছ কাটতে শুরু করে। গত শুক্রবার পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক্টর বনের গাছ কেটে নিয়ে চলে যায়। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, টেন্ডারের নামে ঠিকাদার, উপজেলা বন কর্মকর্তা, পাহারাদারসহ স্থানীয় ও কয়েকজন যোগসাজশ করে তাজা গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হলে, শনিবার নওগাঁ জেলার সহকারী বন সংরক্ষক মেহেদী জামান, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল আকতার ও বন বিভাগের জেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সত্যতা পাওয়ায় প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঠিকাদারের প্রতিনিধি জাকিরকে গ্রেফতার করে। ফরাদপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম বলেন, বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম ও পাহারাদাররা দাঁড়িয়ে থেকে তাজা গাছ কাটিয়েছে। একই গ্রামের আসির উদ্দিন বলেন, বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম দাঁড়িয়ে থেকে ঠিকাদারের লোক দিয়ে গাছ কাটানো হয়েছে। সুবিধাভোগী আব্দুল ওহাবসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন পাহারাদার জিল্লুর রহমান, আশরাফ, শরিফুল ও উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামসহ স্থানীয়রা যোগসাজশ করে টেন্ডারের আড়ালে বনের গাছ কেটেছে। শুধু তাই নয়, এরা বনের মাটিতে লাগানো ফসল, খড়, গাছের ডালও বিক্রি করে দিয়েছে। সরজমিনে দেখা যায়, ২০১৬ সালে টেন্ডার দেয়ার সময় নম্বরকৃত কোন গাছ দেখা যায়নি। ওয়ার্ক অর্ডারের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যে গাছ কেটেছে তার একটাও নম্বরকৃত গাছ নয়। এ ছাড়াও বনের মধ্যে গাছ কেটে ট্রাক বা ট্রাক্টর যাওয়ার রাস্তা করে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম টেন্ডারের বাইরেও গাছ ও বনের গাছ কেটে রাস্তা করার কথা স্বীকার করেন। জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, গ্রেফতারকৃত জাকির স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। পরিদর্শনে গিয়ে অতিরিক্ত গাছ কাটর প্রমাণ মিলেছে ও কোন গাছের নম্বর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা নওগাঁ সহকারী বন সংরক্ষক মেহেদী জামান বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নির্মলচরের বন পরিদর্শন করে এসেছি আর ডালপালার বদলে গাছ কাটার তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ পেলে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×