ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দর্শক সঙ্কট নিরসনে মানসম্পন্ন নাটক নিয়মিত মঞ্চস্থ করতে হবে ॥ ড. চঞ্চল সৈকত

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ২৮ মে ২০১৯

দর্শক সঙ্কট নিরসনে মানসম্পন্ন নাটক নিয়মিত মঞ্চস্থ করতে হবে ॥ ড. চঞ্চল সৈকত

ড. চঞ্চল সৈকত। দেশের অন্যতম গুণী নাট্যজন। নাট্যকার, নির্দেশক, মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং দক্ষ সংগঠক। বাংলাদেশের অন্যতম নন্দিত নাট্য সংগঠন নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। পাশাপাশি একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে কর্মরত। সব কিছু ছাপিয়ে তিনি গুণী একজন সংস্কৃতি কর্মী। সাম্প্রতিক ব্যস্ততা এবং সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আপনার পথ চলার শুরুর দিকটা জানতে চাই। ড. চঞ্চল সৈকত : পারিবারিকভাবেই আমার সাংস্কৃতিক পরিম-লে বেড়ে ওঠা এবং তার নিয়মিত যাত্রা শুরু হয় স্কুল জীবন থেকে। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান বাজনা, নাটক এ সবে আমার নিয়মিত অংশগ্রহণ ছিল। কলেজ জীবনের শুরুতেই আমি উদীচীর সঙ্গে যুক্ত হই। তারপর কিছুদিন সুবচন নাটসংসদের সঙ্গে আমার পথচলা শুরু । সেখান থেকে যুক্ত হই নাগরিক নাট্যাঙ্গনের সঙ্গে। সেই থেকে নাটকের সঙ্গে আমার নিয়মিত পথচলা। এ পর্যন্ত আপনার অভিনীত, রচিত ও নির্দেশিত নাটকের সংখ্যা কত? ড. চঞ্চল সৈকত : এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টির মতো মঞ্চ নাটকে আট শ’র অধিক রজনীতে আমার অভিনয় করার সুযোগ হয়েছে। এর মধ্যে নিজ ও বিভিন্ন দলের জন্য চারটির মতো নাটক লিখেছি এবং ছয়টি নাটকের নির্দেশনা দিয়েছি। আপনি তো টিভি ও চলচ্চিত্রেও নিয়মিত অভিনয় করছেন? ড. চঞ্চল সৈকত : টেলিভিশনে ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই শ’র অধিক নাটকে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটক ‘ভুল পথের পথিক’, ‘কেমনে ভুলিব তাহারে’, ‘কাক্সিক্ষত প্রত্যাশা’, ‘দিনলিপি’, ‘বিবাহ বাসনা’, ‘সুবোধ ও সন্ধানী’ অন্যতম। চলচ্চিত্রে আমার প্রথম অভিষেক হয় শেখ নিয়ামত আলির হাত ধরে ‘দহন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এর পর থেকে ২০টি অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। তার মধ্যে ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’, ‘রাজপুত্তুর’, ‘একাত্তরের হায়না’, ‘আয়না সুন্দরী’, ‘দেশা দ্য লিডার’, ‘কাটা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। থিয়েটার নিয়ে আপনার বর্তমান ব্যস্ততা কেমন? ড. চঞ্চল সৈকত : আমার দল নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল আমার নির্দেশনায় ‘ব্রেন ওয়াশ’ নাটকের নিয়মিত প্রদর্শনী করছে। পাশাপাশি দলের অন্য একটি প্রযোজনা ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ নাটকে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় করছি। দলের আগামী প্রযোজনার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে যার নির্দেশনার দায়িত্ব পালন করছি আমি। এছাড়া বর্তমানে আমি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আন্তর্জাতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। অভিনয়, নির্দেশনা নাকি রচনা কোনটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন? ড. চঞ্চল সৈকত : অভিনয়, নির্দেশনা ও রচনা এই তিনটি বিষয়ের অভিজ্ঞতা আমার আছে। তিন রকম অভিজ্ঞতা মনে হলেও মূল বিষয়টি হলো নাটক করা। নাটক করতে গিয়ে সেটা অভিনয় হোক, রচনা হোক, নির্দেশনা হোক বা সাংগাঠনিক দায়িত্ব পালন হোক আমার মনে হয় আমি শিল্প সৃজনের সঙ্গে যুক্ত একজন নাট্যকর্মী। এখানে আসলে আলাদা করে ভাবার অবকাশ আমার মনে কখনও কাজ করেনি। মূল বিষয় যেটি কাজ করেছে তা হলো আমি থিয়েটার করছি। মঞ্চ নাটকের দর্শক বাড়াতে ফেডারেশন বা দলগুলোর একক উদ্যোগ কতটা জরুরী বলে মনে করেন? ড. চঞ্চল সৈকত : মঞ্চ নাটকের দর্শক বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। আমি মনে করি শুধু ফেডারেশন নয়, এর পাশাপাশি নাট্য দলগুলোকেও কাজ করে যেতে হবে। জোরালোভাবে বলতে চাই দর্শক সঙ্কট নিরসনে মান সম্পন্ন নাটক নিয়মিতভাবে মঞ্চস্থ করতে হবে। নাট্য ঐতিহ্য রক্ষায় সৃজনশীল তরুণ প্রজন্ম তৈরিতে অগ্রজদের ভূমিকা অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ! আপনি কি এই প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাবেন? ড. চঞ্চল সৈকত : প্রসঙ্গটি আমি মোটেও এড়িয়ে যেতে চাই না। তবে শুধু এটুকু বলতে চাই আমাদের দেশে নাট্যচর্চা একটি পরম্পরা ব্যাপার। সিনিয়রদের মধ্য থেকেই এটা আসে। আমাদের সিনিয়রদের দেখে যেমন আমরা শিখেছি আমাদের জুনিয়ররাও তেমনি আমাদের দেখে শিখছে। এছাড়া বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের উদ্যোগে নিয়মিত লেকচার ওয়ার্কশপ, অভিনয় কর্মশালাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নতুন নতুন নাট্যকর্মী তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। থিয়েটার বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? ড. চঞ্চল সৈকত : আমি সংস্কৃতি ও অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি করেছি এবং এখনও নিয়মিত সংস্কৃতি চর্চার উৎকর্ষ সাধনে গবেষণা অব্যাহত রেখেছি। আমি চাই থিয়েটারের মাধ্যমে আগামীতে তার প্রতিফলন ঘটুক। আমাদের থিয়েটার এখনও প্রফেশনাল নয় এবং সেই ক্ষেত্র আমরা তৈরি করতে পারিনি। অবশ্য এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে আমি চাই আগামীতে সব প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটিয়ে পুরোপুরি পেশাদারি নাট্যচর্চা আমাদের দেশে শুরু হবে। আমাদের নাট্যকর্মীরা শুধু থিয়েটার করেই জীবন নির্বাহ করতে পারবে। সংস্কৃতি অঙ্গনে তরুণ বা আগ্রহী নাট্যকর্মীদের উদ্দেশে আপনার কোন সাজেশন আছে কি? ড. চঞ্চল সৈকত : তরুণ নাট্যকর্মীদের উদ্দেশে বলব যে, সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের অগ্রজ নাট্যজনরা গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন শুরু করেছিলেন নতুনরা নিয়মিত সৎ নাট্যচর্চার মাধ্যমে সেই আন্দোলনকে আগামীর পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। -সাজু আহমেদ
×