ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাগরপাড়ে তরমুজে লাভ বেশি

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ১৯ মে ২০১৯

 সাগরপাড়ে তরমুজে লাভ বেশি

প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থাৎ কয়েক দফা বৃষ্টিপাতের পরেও পটুয়াখালী জেলায় এবার তরমুজের ফলন রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত বছরের মৌসুমে যেখানে ১৩ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। এবার সেখানে প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। বর্তমান প্রাকৃতিক অবস্থা অর্থাৎ আর মাত্র কয়েকদিন প্রখর রোদ-তাপ বিরাজ করলে গতবারের চেয়ে এবার প্রায় দ্বিগুণ ফলন আসবে। যার আর্থিক মূল্য হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন। আর ভাল ফলনের কারণে কৃষকও হবে আশাতীত লাভবান। যা সাগরপাড়ের এ অঞ্চলের জন্য তরমুজ চাষ বিশাল সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত হবে। মাঠ পর্যায়ের চাষীসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্বশেষ দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে তরমুজ চাষের ইতিহাস খুব প্রাচীন নয়। গত ২০-২২ বছরে ধীরে ধীরে তরমুজ চাষের সম্প্রসারণ ঘটেছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় তরমুজ চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষক ক্রমেই তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়ছে। প্রতিবছর বাড়ছে তরমুজ চাষে জমির পরিমাণ। যা চলতি মৌসুমে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। কৃষি বিভাগীয় কর্মকর্তা ও চাষীদের দেয়া হিসেব মতে, রবি মৌসুমে যেখানে বোরো আবাদ করলে এক হেক্টর জমিতে চাষাবাদ খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ধান উৎপাদন হয় গড়ে ৭ টন। যা ২৬ টাকা কেজি দরে অর্থাৎ সরকারী ক্রয় দর অনুযায়ী মূল্য দাঁড়াবে এক লাখ ৮২ হাজার টাকা। সেখানে একই পরিমাণ অর্থাৎ এক হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষে খরচ হচ্ছে এক লাখ টাকার সামান্য কিছু বেশি। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে তরমুজ উৎপাদন হবে কমপক্ষে ৪৮ টন। সর্বনিম্ন ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যার অর্থ একই পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের তুলনায় তরমুজে প্রায় তিনগুণ বেশি লাভ আসে। যে কারণে লাভের হিসেবে বেশি হওয়ায় কৃষকরা ক্রমে অধিক সংখ্যক হারে তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। এছাড়া বোরো ধান চাষে মহাজন-পাইকারদের কাছ থেকে কোন ধরনের আগাম দাদন বা কর্জ পাওয়া যায় না। কিন্তু তরমুজ চাষে মৌসুম শুরুর আগ থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকার-মহাজনরা এসে চাষীদের আগাম অর্থ দাদন হিসাবে দিয়ে থাকে। যা চাষীদের তরমুজ চাষে আরও উদ্বুদ্ধ করে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পটুয়াখালীর কার্যালয় থেকে দেয়া হিসাবে জানা গেছে, গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের মৌসুমে জেলায় মোট ১৩ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছিল। এতে তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬৪ টন। যা বিক্রি হয়েছিল ৬৫৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গত মৌসুমের তুলনায় এবার তরমুজের চাষ রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। এ বছর জেলায় মোট তরমুজ চাষ হয়েছে ২১ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে সাগরপাড়ের রাঙ্গাবালী উপজেলায়। এখানে ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এছাড়া গলাচিপায় ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর, কলাপাড়ায় ২ হাজার ২৫০ হেক্টর, বাউফলে ৫৫০ হেক্টর, দশমিনায় ৪৫০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৩২০ হেক্টর, মির্জাগঞ্জে ১০ হেক্টর ও দুমকি উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন এক হাজার ৪০ কোটি ৭৩৬ টন। যার প্রতি কেজি মাত্র ১০ টাকা দাম ধরা হলেও এর আর্থিক মূল্য দাঁড়াবে এক হাজার ৪০ কোটি ৭৩৬ লাখ টাকা। যদিও বাস্তবে বাজার দর অনেক বেশি। রোদের তাপ যত বাড়বে, তরমুজের চাহিদা এবং দাম তত বাড়বে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, বর্তমান প্রাকৃতিক অবস্থা আর কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে বিক্রি মূল্য অনেক বেশি হবে। এদিকে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে কিছু সংখ্যক চাষীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরপরেও অধিকাংশ চাষী কঠোর পরিশ্রমে বৃষ্টির ক্ষতি ভাল ফলনের মাধ্যমে পুষিয়ে নিয়েছেন। যারা ফলনে নজর দিয়েছেন, তারা দামও ভাল পেয়েছেন। বিশেষত ক্ষেতে জমে থাকা পানি নিষ্কাষণে যারা গুরুত্ব দিয়েছেন, তারাই লাভবান হয়েছেন। যদিও গত মৌসুমের চেয়ে এবার তরমুজের সাইজ কিছুটা ছোট হয়েছে বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন। রাঙ্গাবালী উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জুয়েল সিকদার জানান, এখন আবহাওয়া অনুকূলে। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় চাষীদের সেচ খরচ কম হয়েছে। তবে নিচু জমিতে পানি জমে একটু ক্ষতি হলেও ফলন ভাল এবং দাম বেশি হওয়ায় চাষীরা লাভবান হবেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, পটুয়াখালীর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হৃদয়েশ্বর দত্ত বলেন, এবছর আবাদ বেড়েছে। তাই উৎপাদন বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। মৌসুমের শুরুতে কয়েকদিন বৃষ্টি হয়েছে। তবে আবাদের পর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। এ অঞ্চলে দোঁআশ মাটিতে তরমুজের ফলন ভাল হয়। বৃষ্টির কারণে মাটিতে প্রচুর রস থাকায় তরমুজ আকারে বড় ও উৎপাদন বাড়বে। এছাড়া দিনের বেলা প্রখর রোদে তরমুজের রং উজ্জ্বল ও সুস্বাদু হয়। ফলে এ অঞ্চলের তরমুজ খুব সুস্বাদু এবং ক্রেতাদের কাছেও ফলটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে তরমুজ সংরক্ষণ করা গেলে চাষীরা আরও লাভবান হতো।
×