ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াসার পানি পরীক্ষার রিপোর্ট না দেয়ায় হাইকোর্টের অসন্তোষ

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ১৪ মে ২০১৯

 ওয়াসার পানি পরীক্ষার রিপোর্ট না দেয়ায় হাইকোর্টের অসন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্দেশের পরও ঢাকা ওয়াসার পানি কোন কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন না দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষায় যে অর্থ খরচ হবে, তা নির্ধারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বুধবারের (আগামীকাল) মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আদালত বলেছে, বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল না করলে অতিরিক্ত সচিবকে তলব করা হবে। অন্যদিকে রাজধানীর যে ১৬ এলাকায় ওয়াসার পানি বেশি দূষিত তার তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। এলাকাগুলো হলো জুরাইন, দনিয়া, শ্যামপুর, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর, লালবাগ, রাজার দেউরি, মালিবাগ, মাদারটেক, বনশ্রী, গোড়ান, রায়সাহেব বাজার, বসিলা, পল্লবী, কাজীপাড়া ও সদরঘাট। সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ এ তালিকা দাখিল করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। সোমবার ঢাকা ওয়াসার অনিরাপদ পানি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষায় প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত বলে, ‘ঢাকা ওয়াসার ১১ পানির জোন রয়েছে। প্রত্যেকটি থেকে দুই বোতল পানি নিয়েই তো পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু কোন কথাই শুনছে না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তারা (স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়) হাইকোর্টকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছে।’ এর আগে শুনানিকালে পানি পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিলের পরিবর্তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে পানি পরীক্ষায় কমিটি গঠন ও কমিটির কার্যপরিধি তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনে ওয়াসাকে মোট এগারোটি জোনে ভাগ করে পানি পরীক্ষার কথা বলা হয়। পাশাপাশি অর্থায়ন পাওয়া গেলে চার মাসের মধ্যে পানি পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এরপর আদালত কোন কোন এলাকার পানি বেশি দূষিত ও অনিরাপদ সেসব এলাকা চিহ্নিত করে জানানোর নির্দেশ দেয়। আজ ওয়াসা বা রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিষ্ঠান এর কোন তথ্য না দিলেও রিটকারী আইনজীবী নিজেই এমন একটি তালিকা সম্বলিত তথ্য আদালতে জমা দেন। শুনানিকালে আদালতে রিটকারী আইনজীবীর কাছে অনিরাপদ পানি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বেশ কিছু প্রতিবেদন আদালতের কাছে তুলে ধরা হয়। ওসব প্রতিবেদনে ঢাকার ১৬ এলাকায় ওয়াসার পানি ব্যবহারের একেবারেই অনুপযোগী বলে তথ্য উঠে আসে। এরপর পানি পরীক্ষায় যে অর্থ খরচ হবে, তা প্রতিবেদন আকারে দাখিলের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তখন ওয়াসার পক্ষ থেকে খরচ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলে সাত দিন সময় চাওয়া হয়। কিন্তু খরচ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী বুধবারের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত বলে, ‘বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল না করলে অতিরিক্ত সচিবকে তলব করা হবে।’ এর আগে ’১৮ সালের ১১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ অনিরাপদ উৎসের পানি খায়। ৪১ শতাংশ পানির নিরাপদ উৎসগুলোতে রয়েছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ১৩ শতাংশ পানিতে আর্সেনিক। পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮২ শতাংশ। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। ওই রিট আবেদনের পর গত বছরের ৬ নবেম্বর রাজধানী ঢাকায় পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এছাড়া, কমিটিকে পানি পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
×