ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বিশ্ব মা দিবস

আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি-

প্রকাশিত: ১০:০০, ১২ মে ২০১৯

 আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি-

মোরসালিন মিজান ॥ ‘আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি;-সারাদিন ঝরে ঝরে পড়তো,/আমাদের মা ছিলো ধানখেত- সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো।/আমাদের মা ছিলো দুধভাত-তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো।/আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর-আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম...।’ আহা, মা! মাগো! সন্তানের শেষ আশ্রয় মহীয়সী এই মাকে আজ আলাদাভাবে স্মরণ করার দিন। আজ রবিবার মায়েদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর, ‘ভালবাসি’ বলার বিশেষ দিন- বিশ্ব মা দিবস। পৃথিবীর নানা দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি উদ্যাপিত হবে। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারটি মা দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। সব দেশে একই দিনে দিবসটি উদ্যাপিত হয় না। তবে অধিকাংশ দেশেই মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারটিকেই ‘মা দিবস’ হিসেবে বেছে নেয়া হয়। সে অনুযায়ী, আজ ১২ মে বিশ্ব মা দিবস। বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে উদ্যাপিত হচ্ছে মা দিবস। দিবসটি সম্পর্কে এখন প্রায় সবাই অবগত। বিশেষ করে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা দারুণ আবেগ ও আন্তরিকতার সঙ্গে দিবসটি পালন করে। আর যারা নিজেরা মা হয়েছেন, বাবা হয়েছেন তারা ফিরে যান শৈশবে। মাকে জড়িয়ে ধরে বড় হওয়ার ক্লান্তি দূর করেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাই হয়ত গেয়েছিলেন- পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব/মাগো, বলো কবে শিতল হবো।/কত দূর আর কত দূর বল মা...। গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরের গাওয়া গানেও মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তিনি গাইলেন: এক ধার দুধের দাম কাটিয়া কাটি গায়ের চাম,/পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না/এমন দরদী ভবে কেউ হবেনা আমার মা গো...। এমন দরদী আসলেই আর হয় না। দুঃখ-বেদনা ভুলিয়ে দেয়া মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার। দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করা সন্তানের জন্য কত যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তাঁকে! কবি শামসুর রাহমানের ভাষায়: যেন তিনি সব গান দুঃখ-জাগানিয়া কোন কাঠের সিন্দুকে/রেখেছেন বন্ধ ক’রে আজীবন...। মায়ের এমন ত্যাগের কথা আজ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে সন্তান। স্মৃতি তর্পণ করবে। যেমনটি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন: মাকে আমার পড়ে না মনে।/শুধু কখন খেলতে গিয়ে/হঠাৎ অকারণে/একটা কী সুর গুনগুনিয়ে/কানে আমার বাজে,/মায়ের কথা মিলায় যেন/আমার খেলার মাঝে...। নজরুল লিখেছিলেন, হেরিলে মায়ের মুখ/দূরে যায় সব দুখ। মায়ের মুখ দেখে সত্যি সব দুঃখ ভুলে থাকা যায়। আজকের বিপদসঙ্কুল পৃথিবীতে, চ্যালেঞ্জিং সময়ে আরও যেন অপরিহার্য হয়ে ওঠেন মা। হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যান। বাচ্চা লেখা-পড়া যা করে, তারও বেশি মাকে করতে হয়। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কত রাত নির্ঘুম কাটায় মা! এই গাইডটিকে, বন্ধুটিকে ছাড়া এক মুহূর্ত চলতে পারে না সন্তান। মাকে তাই মাথায় তুলে রাখে। প্রতিদিনই মায়ের জন্য উজার করে দেয় ভালবাাসা। এর পরও সত্য যে, মা দিবস শুধুই মাকে ঘিরে। বিশেষ দিবস আলাদা করে মাকে নিয়ে ভাববার ফুরসত করে দেয়। জন্মদাত্রীকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরার একটি উপলক্ষ খুঁজে পায় ছেলেমেয়েরা। মা দিবসে আজ সন্তানরা মাকে চমকিত করার সব চেষ্টা করবে। খুশি করার চেষ্টা করবে। স্কুল পড়ুয়া সন্তান যত্ন করে মায়ের ছবি আঁকবে। রং পেন্সিলে আঁকা ছবির এক কোণে লিখে রাখবে, ‘তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা।’ কেউ কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলবে, ‘মা, তোমায় অনেক ভালবাসি। হ্যাপি মাদারস ডে।’ অবাধ্য সন্তানটি হয়ত গোপনে মায়ের বালিশের নিচে রেখে আসবে চিরকুট। ‘সরি, মা’ লেখা চিরকুট পড়ে আপ্লুত হবেন মা। চোখ মুছবেন। এভাবে মা ও সন্তানের চিরন্তর সম্পর্ক, অকৃত্তিম ভালবাসার গল্পগুলো নতুন করে সামনে আসবে। মা দিবসে থাকবে কেক কাটার আনুষ্ঠানিকতাও। ভাইবোনেরা মিলে বাসায় কেক এনে রাখবে। মা হয়ত জানবেনও না। কেকের সামনে এসে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে যাবেন তিনি। লাজুক ভঙ্গীতে কেক কাটবেন। না কেটে পার পাওয়ার কোন সুযোগই থাকবে না আজ। আর যে সন্তান দূর দেশে, সে ফোন করে মাকে অভিনন্দন জানাবে। গর্ভে ধারণ করার জন্য, যত্নে লালনপালন করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মা দিবসে অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি ফোন করা হয়। মাকে কার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর রীতিও বেশ জনপ্রিয়। তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ কার্ড মা দিবসে আদান-প্রদান করা হয় বলেও জানিয়েছে এক গবেষণা। আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মাকে নিয়ে পোস্ট দেবে সন্তান। নিউজফিডে ঘুরে ফিরে মায়ের ছবি ভেসে উঠবে। মায়ের সঙ্গে সন্তানের ছবি। আবেগঘন বলা। মাকে পাশে পাওয়ার আনন্দ, হারানোর ব্যথা সব প্রকাশিত হবে। মা দিবস উপলক্ষে আজ রবিবার ঢাকায় একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। রত্নগর্ভা মায়েদের হোটেল সোনারগাঁয়ে সম্মাননা জানাবে আজাদ প্রোডাক্টস। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা জানানো হবে। মা দিবসের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, ব্রিটেনে প্রথম মা দিবস উদ্যাপন শুরু হয়। প্রতিবছর মে মাসের চতুর্থ রবিবার সেখানে ‘মাদারিং সানডে’ উদ্যাপন করা হতো। তবে এখন যে মা দিবস উদ্যাপন করা হয় তার সূচনা সতেরো শতকে। এর সূচনা করেন মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। এদিন মায়ের সঙ্গে কাটানো, উপহার দেয়ার মতো রীতি চালু ছিল। পরবর্তিতে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস উদ্যাপন করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে।
×