ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন ইস্যুতে কঠোর হচ্ছে ডিএসই

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ১২ মে ২০১৯

  তিন ইস্যুতে কঠোর  হচ্ছে ডিএসই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) শেয়ারবাজারের স্বার্থে দীর্ঘদিন পরে তিন ইস্যুতে কঠোর হতে যাচ্ছে। শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সংস্থাটি মুন্নু সিরামিকে শেয়ার বিক্রি, কপারটেকের তালিকাভুক্তিতে আপত্তি এবং এসিআইয়ের লোকসান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই তিনটি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়। এর মধ্যে এসিআইয়ের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের স্বপ্নের লোকসানে বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এসিআই নিয়ে রবিবারে ডিএসই নতুন সিদ্ধান্তও আসতে পারে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। মুন্নু সিরামিকের শেয়ার বিক্রি ॥ ঘোষণা দিয়েও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মুন্নু সিরামিকের কর্পোরেট পরিচালক মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন শেয়ার বিক্রি না করার বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (সিআরও) একেএম জিয়াউল হাসান খানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ডিএসই সূত্র জানা গেছে, মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের কাছে কোম্পানির মোট ১ কোটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ৩৩০টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্য থেকে গত ১১ মার্চ মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ডিএসইর মাধ্যমে মুন্নু সিরামিকের ২৮ লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বর্তমান বাজার দরে ওই শেয়ার বিক্রি করা হবে বলে ঘোষণায় উলেখ করা হয়। তবে ঘোষণা দেয়ার পর ৩০ কার্যদিবস পার হলেও মুন্নু সিরামিকের এই কর্পোরেট পরিচালক শেয়ার বিক্রি করেননি। ডিএসইর পরিচালক মোঃ রকিবুর রহমান বলেন, ঘোষণা দেয়ার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে শেয়ার বিক্রি না করা মারাত্মক অপরাধ। এ জন্য মুন্নু সিরামিকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এখনও কোন উত্তর দেয়নি। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়, তা ক্ষতিয়ে দেখে সুপারিশ করতে সিআরও-কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আলোচনায় স্বপ্নের লোকসান ॥ এসিআই এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্বপ্ন ব্র্যান্ডের এসিআই লজিস্টিক লিমিটেডের কৃত্রিম লোকসান দেখিয়ে টাকা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে- এমন অভিযোগ ওঠায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এসিআই লিমিটেডের গত কয়েক বছরের সন্দেহজনক আর্থিক বিবরণী নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ডিএসইর গঠিত তদন্ত কমিটি এই সুপারিশ করেছে। ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়াকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন- ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি মোঃ রকিবুর রহমান, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, স্বতন্ত্র পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী, প্রফেসর ড. মোঃ মাসুদুর রহমান এবং ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল মতিন পাটোয়ারী। খতিয়ে দেখা হবে কপারটেকের আর্থিক বিবরণী ॥ তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় থাকা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে শেয়ার ইস্যুকারী এই কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠায় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন অসঙ্গতি চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জেরে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ৭ দিন সময় দেয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরিচালনা পর্ষদ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। এর আগে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্ত করা হবে না। জানা গেছে, ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) সম্প্রতি ডিএসইর কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদনের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে। তারা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর বিশেষ নিরীক্ষা চালানো এবং ওই নিরীক্ষার আগে এটিকে তালিকাভুক্ত না করার অনুরোধ জানায়। ডিবিএসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, একটি অতি দুর্বল মৌলের কোম্পানি কপারটেক কারসাজিপূর্ণ আর্থিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে ভাল আর্থিক অবস্থা দেখিয়ে আইপিওতে এসেছে। এর আগে কোম্পানিটি প্লেসমেন্টের মাধ্যমেও বড় অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করেছে। কোম্পানিটির প্রকৃত অবস্থা যা তাতে তালিকাভুক্তির কয়েক বছরের মধ্যেই এটি রুগ্ন কোম্পানির তালিকায় নাম লেখাবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। এতে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ বাস্তবতায় ডিএসই কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষভাবে পর্যালোচনা করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। তামার তার, বার, পাইপ ও তামাজাত বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি কপারেটেক ইন্ডাস্ট্রিজ আইপিওর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। আইপিও’র প্রসপেক্টাসে দেয়া তথ্য অনুসারে, আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থের একটা অংশ কোম্পানিটি ভবন ও অন্যান্য পূর্ত কাজের পাশাপাশি প্লান্টের যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপনের কাজে ব্যয় করবে। একটি অংশ ব্যয় করবে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহে। ২০১২ সালে মাত্র আড়াই কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ভেল্কী দেখিয়ে মাত্র ৫ বছরের মধ্যে মূলধন ৪০ কোটি টাকা বা ১৬ গুণে উন্নীত করে। আইপিওতে আসার আগের দুই বছরে। ২০১৭ সালে কোম্পানিটি ৩ দফায় মূলধন বাড়িয়েছে সাড়ে ৭ কোটি টাকা। তাতে পরিশোধিত মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ১০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে, যা সে সময়ে বিদ্যমান মূলধনের ২ গুণ। আইপিওকে সামনে রেখেই প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের জন্য এটি করা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
×