ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আলোকচিত্রে আনিসুল হক বরুণের ‘অন্তর্দর্শন’

প্রকাশিত: ১১:১২, ৮ মে ২০১৯

আলোকচিত্রে আনিসুল হক  বরুণের ‘অন্তর্দর্শন’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছবিগুলো দেখলে মনে হবে কোন চিত্রকরের বিমূর্ত চিত্রকলা। তবে একটু নিবিড়ভাবে দেখলে ভেঙ্গে যাবে সে ভুল। আলোকচিত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির কৌশলে ক্যামেরাবন্দী ছবিগুলো যেন হয়ে উঠেছে চিত্রকর্ম। আলোকচিত্রীর মননের প্রভাবে প্রতিটি আলোকচিত্র ধাবিত হয়েছে প্রতীকী চিত্রকলার অভিমুখে। সেই সুবাদে দর্শকের মনে ছড়ায় দ্বিধাদ্বন্দ্বÑছবিগুলো কি আদতে পেইন্টিং না ফটোগ্রাফ? এমনটা রহস্যময়তার নেপথ্যে রয়েছে বস্তু ও জীবের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীলতার মুহূর্তকে সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করা। সেই কাজটি চমৎকারভাবে করেছেন কাজী আনিসুল হক বরুণ। ছবি তোলার বদলে যেন অদৃশ্য রংতুলির আঁচড়ে এঁকেছেন এই আলোকচিত্রী। ফ্রেমবন্দী সেই ছবিগুলোকে ছড়িয়ে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে। সেসব ছবিতে সজ্জিত প্রদর্শনীটির শিরোনাম অন্তর্দর্শন। প্রকৃত অর্থে আলোকচিত্রের আশ্রয়ে নিজের অন্তর্দর্শনকে উপস্থাপন করেছেন পেশায় অভিনেতা ও নেশায় আলোকচিত্রী বরুণ। একটি ছবি দেখলে মনে হবে একঝাঁক প্রেমিক যুগল নাচছে কোন এক আঙ্গিনায়। ছবি থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালে বোঝা যায় আসল মাজেজা। ঝিকমিকে রোদের আলোয় টিনের ওপর জংধরা একটি বিশেষ অংশকে কৌশলী উপস্থাপনে অবয়ব দিয়েছেন শিল্পী। এভাবেই চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ঘাস, লতাপাতা, বৃক্ষরাজি, ভূমি, গাছের বাকলে জমে থাকা শ্যাওলা কিংবা স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালের মাঝে অবয়বের রূপরেখা খুঁজে নিয়েছেন। ঘটিয়েছেন বিষয়ের অন্তর্গত টেক্সচারের কাব্যিক ব্যাপ্তি। এভাবেই ছবিগুলো হয়ে উঠেছে আলোক-চিত্রকলা। নিজের প্রদর্শনীর ছবি প্রসঙ্গে আনিসুল হক বরুণ বলেন, থিয়েটারে কাজ করতে এসে আমার বরাবরই মনে হয়েছে থিয়েটারের সঙ্গে চিত্রকলার একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন লাইব্রেরি ঘরে শুধু থিয়েটারের বই নয়, চিত্রকলা বিষয়ক বইও পড়েছি, দেখেছি জগতখ্যাত চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্ম। তাদের ছবিতে আলোর যে বিশ্লেষণ এবং নাটকীয়তার যে গতি তার প্রতি আজন্মের দুর্বলতা অনুভব করেছি মননে। সেই উপলব্ধিতে কার বা কিসের ছবি ধারণ করছি, এ বিষয়ে এটুকুই বলতে পারি, সময় যেসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আবর্তিত হতে হতে নিজেকেই বারবার অতীত বলে প্রমাণ করছে, সেসব নানাবিধ পরিবর্তনের মধ্যে যা কিছু দৃশ্যমান, সেসব দৃশ্যমান পরিবর্তনের ধারায় বস্তু এবং বৃক্ষরাজির মধ্যে যেসব আকার এবং আকৃতিগত পরিবর্তন, যা স্বতঃস্ফূর্ত গতিতে চলেছে, সেসব পরিবর্তনের কোন না কোন এক ক্ষুদ্রতম অংশের কোন এক মুহূর্তের ছবি ধারণের প্রচেষ্টা, যা পর মুহূর্তেই পরিবর্তিত হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে মহাকালে। বলতে ভাল লাগছে, ক্যামেরায় ছবি ধারণের চেষ্টা করছি না বরং ছবি আঁকার চেষ্টা করছি। আমি কখনই প্রকৃতির সহজাত গতিধারাকে সংযোজন-বিয়োজন করে ছবি তৈরি করছি না। বরং প্রকৃতির সহজাত সৌন্দর্যকেই ধরার চেষ্টা করেছি। শেষ হলো মঙ্গলবার।
×