ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়ায় বালু উত্তোলন ॥ হুমকিতে মুজিব বাঁধ

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ৫ মে ২০১৯

বেড়ায় বালু উত্তোলন ॥ হুমকিতে মুজিব বাঁধ

নিজস্ব সংবাদদতা, পাবনা, ৪ মে ॥ বেড়া উপজেলার মাসুমদিয়া ইউনিয়নের রতনগঞ্জ ও আয়ানগেট মাঝামাঝি শ্মশান ঘাটে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় একটি চক্র শক্তিশালী মেশিনের সাহায্যে অবৈধভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বড়পিটের ২০-২৫ ফুট গভীর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এদিকে প্রায় চার মাস ধরে ভূগর্ভস্থ স্তরের একই পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করায় ধসের হুমকিতে পড়েছে তালিমনগর স্লুইসগেট, স্কুল এবং ঐতিহ্যবাহী মুজিব বাঁধ। এলাকাবাসী প্রভাবশালী নেতার ভয়ে কেউ বালুখেকোদের বিরুদ্ধে টুশব্দ পর্যন্ত করতে পারছে না। জানা যায়, পাবনা জেলাকে বন্যামুক্ত এবং এক ফসলি জমি তিন ফসলিতে রুপান্তরিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বেড়া নগরবাড়িতে নিজে মাটি কেটে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এই বাঁধের নামকরণ করা হয় মুজিব বাঁধ। পরবর্তী এ বাঁধকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করা হয় পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প। বর্তমানে সুজানগরে গাজনার বিল বহুমুখী প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রায় ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে পাম্পিং স্টেশন। বাঁধে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হওয়ায় প্রতিদিন দূরপাল্লার কোচ, ট্রাক, থ্রিহুইলার সিএনজিসহ শত শত যানবাহন ও হাজার হাজার মানুষ এ পথে চলাচল করছে। এই সড়কটি চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের কুষ্টিয়া যশোর, খুলনার সঙ্গে দূরত্ব কমেছে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, রতনগঞ্জ এলাকার ফজর প্রামাণিকের ছেলে শহীদ, একই এলাকার মৃত- খবির মিয়ার ছেলে মাসুদ মিয়া, সাবেক মেম্বর খাজা খন্দকার গত প্রায় চার মাস ধরে রতনগঞ্জ ও আয়ানগেট এর মাঝামাঝি শ্মশান ঘাটে শক্তিশালী মেশিনের সাহায্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বড়পিটের ২০-২৫ ফুট গভীর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করছে। এছাড়া ঠিকা চুক্তিতে পাইপের সাহায্যে তারা বিভিন্ন ব্যক্তির খাল পুকুর ভরাট এবং বালু বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রের পেছনে রয়েছে ক্ষমতাসী দলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা। এই চক্রের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় বলে বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কেউ টুশব্দ করার সাহস করে না। আর এ সুযোগে তারা কোটি কোটি টাকার বালু লুটে নিচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছে। সূত্র জানা, ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে বালু উত্তোলন করায় ভূগর্ভে স্থাপিত পাইপের চারদিকে ৫০০ মিটার এলাকার বালু পানির সঙ্গে চলে আসে। আর এভাবে বালু উত্তোলন করায় ভূগর্ভস্থ স্তরের বিশাল এলাকা ফাঁকা হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ জানান, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বড়পিট থেকে বালু উত্তোলন বাঁধের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বড়পিটের যে স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হয় তার চারপাশের এলাকা ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য প্রশাসনকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে।
×