ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

জরাজীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

জরাজীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়

শিক্ষাকে দেশ ও জাতির মেরুদ- হিসেবে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয়ভাবে প্রায়ই অভিহিত করা হলেও সত্য যে, সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা সর্বাধিক শোচনীয়, জরাজীর্ণ, দুর্দশাগ্রস্ত। সম্প্রতি দেশের কয়েকটি স্থানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদ ও পলেস্তারা ধসে পরার কারণে একাধিক শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় টনক নড়েছে সরকার তথা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এ রকম ঘটনায় হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে নিহত ও আহতদের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। প্রধানত নিম্নমানের কাজ, মানহীন নির্মাণ সামগ্রী, দীর্ঘদিন সংস্কার না করা সর্বোপরি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায়ই বিদ্যালয়ের ছাদ, পলেস্তারা ও দেয়াল ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে থাকে। অন্যদিকে প্রবল বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা-বন্যা-ভূমিকম্প হলে তো কথাই নেই। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই)-এর হিসাবে সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো রয়েছে জরাজীর্ণ ও ভঙ্গুর অবস্থায়। এর মধে ১০ হাজার বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই নাজুক। রাজধানীতেও রয়েছে এ রকম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব। এলজিইডির অধীনে নির্মিত ভবনগুলোর স্থায়িত্ব ৫০ বছর ধরা হলেও মাত্র ১৫-২০ বছরেই শেষ হয়ে যায় এগুলোর স্থায়িত্ব নি¤œমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে। তবে আশার কথা এই যে, সাড়ে পাঁচ হাজার বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সংস্কারের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দেড় শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। দুঃখজনক হলো, এমপিওভুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকরা দফায় দফায় অনশনসহ অবস্থান কর্মসূচী পালন করলেও বিদ্যালয়ের অবকাঠামোসহ আনুষঙ্গিক দাবি আদায়ের জন্য কিছু করেন না কখনোই। দেশে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। নতুন করে আরও প্রায় ২৪০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। সরকার পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করলেও দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির দাবি কতটা যুক্তিসঙ্গত সেই প্রশ্ন তোলা অনিবার্য। কেননা, দেশে বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার মান ও ফল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে, এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। নতুন শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করার সরকারী ঘোষণা থাকলেও সর্বশেষ অবস্থা হয়েছে লেজেগোবরে। শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একদিকে পরীক্ষামূলকভাবে ৬২৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুই বছর আগে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মৌখিকভাবে ন্যস্ত করলেও প্রশাসনিক জটিলতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় তা হস্তান্তর করতে পারছে না। অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, জরাজীর্ণ ভবন, অপর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ, অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নেই। রাতারাতি এসব গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। বাজেট ঘাটতির বিষয়টিও সুবিদিত। শিক্ষকদের দুর্বলতার বিষয়টিও মনে রাখতে হবে। ফলে যথাযথ অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার না করে ঢালাওভাবে এমপিওভুক্তি সমর্থনযোগ্য নয়।
×