ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পর্কের নয়া রসায়ন

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

সম্পর্কের নয়া রসায়ন

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নয়া রসায়ন দেখল বিশ্ব। বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-উনের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দু’দফা বৈঠক করেছিলেন কিম জং-উন। কিন্তু ওয়াশিংটনের সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের সম্পর্কের তেমন রসায়ন তৈরি না হওয়ায় বিকল্পের খোঁজে মস্কো অভিমুখী হন উত্তর কোরীয় নেতা। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তকের কাছের রাস্কি দ্বীপে কিম ও পুতিনের মধ্যে প্রধমবারের মতো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। -খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও তাসের। বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচী অব্যাহত রাখতে মস্কোর সহায়তা চান কিম। বৈঠকের আগে উভয় নেতার একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রকাশিত হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত তৈরি হতে যাচ্ছে। বিবৃতিতে কিম বলেন, মস্কোর সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হতে যাচ্ছে। কারণ আমাদের মধ্যে দীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইতিহাস বিশ্ববাসী জানে। আমাদের মধ্যে অত্যন্ত স্থিতিশীল ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। পুতিন বলেন, কোরীয় উপদ্বীপে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আমার সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি স্থাপনে কিম জং-উন আমার প্রস্তাবে রাজি হবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ আমাদের মধ্যে দীর্ঘ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা এখন আরও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়তে চাই। এই বৈঠকে অংশ নিতে বুধবার ট্রেনে করে রাশিয়া পৌঁছান কিম। চলতি বছরের প্রথমদিকে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করেছিলেন কিম। কিন্তু তাদের বৈঠক কোন সমঝোতায় পৌঁছানোর আগেই ভেস্তে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর কিম এখন রাশিয়ার সমর্থন চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শীর্ষ বৈঠক শুরুর আগে পুতিন ও কিম দুই দেশের দীর্ঘদিনের মৈত্রী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। পুতিন বলেন, কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব এবং এ ইতিবাচক প্রক্রিয়ায় রাশিয়া কিভাবে সাহায্য করতে পারে কিমের এই সফরে তা বুঝতে আমাদের সহায়তা করবে। বুধবার ভ্লাদিভস্তকের কোয়ায়সাইড স্টেশনে এসে পৌঁছালে রুশ কর্মকর্তারা কিমকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। গাড়িতে উঠার আগে উত্তরের এ শীর্ষ নেতাকে ব্যান্ডের মূর্ছনায় বরণ করে নেয়া হয়। রাস্কি দ্বীপে রওনা হওয়ার সময় কিমের দেহরক্ষীরা তার গাড়ির সঙ্গে দৌড়ে কিছুদূর এগিয়ে যান। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মসূচীতে কিমের গাড়ি রওনা হওয়ার শুরুর দিকে তার দেহরক্ষীদের এভাবে দৌড়ানোর চিত্র বেশ পরিচিত। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাশাপাশি রাশিয়ারও অস্বস্তি আছে বলে খবরে বলা হয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে শুরু হওয়া ছয় জাতির আলোচনাকেই ক্রেমলিন কোরীয় উপদ্বীপের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে সমাধান খোঁজার সবচেয়ে কার্যকর উপায় মনে করে বলে জানান পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। দুই কোরিয়া, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ওই আলোচনা আপাতত বন্ধ আছে। পেসকভ বলেন, এ মুহূর্তে ছয় জাতি বৈঠকের বাইরে কার্যকর আর কোন আন্তর্জাতিক কর্মকৌশল নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর উত্তর কোরিয়ার প্রতি এখনও যে মিত্রদের শক্তিশালী সমর্থন আছে, কিমের এবারের সফর তা দেখানোর সবচেয়ে ভাল সুযোগ বলছেন পর্যবেক্ষকরা। হ্যানয়ে ফেব্রুয়ারির ওই বৈঠক সমঝোতা ছাড়াই শেষ হওয়ার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে দায়ী করে পিয়ংইয়ং। সাবেক এই সিআইএ প্রধানকে ভবিষ্যত উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার বাইরে রাখার দাবিও জানিয়েছে তারা। পিয়ংইয়ং যে তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই নির্ভর করছে না, পুতিন-কিম বৈঠকে তা দেখানোরও সুযোগ থাকছে। রুশ প্রেসিডেন্ট এর আগেও কয়েকবার উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। যদিও দুই দফা ট্রাম্প-কিম সম্মেলনে মস্কোর অবস্থান ছিল সাইডলাইনে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়া ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম মিত্র। ১৯৯১ সালে সোভিয়েতের ভাঙ্গনের পর পিয়ংইয়ং ও মস্কোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক সঙ্কুচিত হলে উত্তর কোরিয়াকে চীনের দিকে ঝুঁকতে দেখা যায়।
×