ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিজনেস ফোরাম উদ্বোধন

বাংলাদেশী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:০৪, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

বাংলাদেশী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিন্ন যাত্রায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে একটি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য ব্রুনাইয়ের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার বিকেলে হোটেল এম্পায়ার এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে আয়োজিত বাংলাদেশ-ব্রুনাই বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিন্ন যাত্রায় আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে একটি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বাংলাদেশে উন্নয়ন ও ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যও আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’ খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যয়, মানব সম্পদ, অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার, বাণিজ্য সুবিধা, বিনিয়োগ সুরক্ষা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক স্থান হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উদার বৈদেশিক বিনিয়োগ সুবিধাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এসব সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে আইন দ্বারা বিদেশী বিনিয়োগের সুরক্ষা, উদার কর নীতি এবং যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর সুবিধাজনক শুল্ক ব্যবস্থা।’ শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ১০০ শতাংশ বৈদেশিক ইক্যুইটি, অবাধ প্রস্থান, লভ্যাংশ ও মূলধন পূর্ণ প্রত্যর্পণ সুবিধা প্রদান করে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইইউ, কানাডা ও জাপানসহ অধিকাংশ বিশ্ব বাজারে অগ্রাধিকার প্রবেশ সুবিধা ভোগ করি।’ তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং জিডিপির পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থান বিশ্বে ৪১তম। তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি একটি সুদৃঢ় সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, গতিশীল বেসরকারী খাত এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, বেসরকারী খাতে উদ্যোক্তা সহায়ক অব্যাহত নীতিমালা এবং অবকাঠামো ও মানব উন্নয়নে জোরালো বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য সাফল্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, গত বছর ৭.৮৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরে চলতি বছর আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮.১৩ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমাদের মাথাপিছু আয় এ বছর ১,৯০৯ মার্কিন ডলার হবে যা মধ্যম আয়ের দেশের আয়ের কাছাকাছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প খাতের দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে বাংলাদেশ কেবলমাত্র পাঁচ বছরে বার্ষিক রফতানি আয় দ্বিগুণ করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, কৃষি ও সেবা খাতে ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীলতা ও স্থিতিস্থাপকতা দিয়েছে। বেসরকারী খাতকে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশী ও বিদেশী উদ্যোক্তা ও বেসরকারী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সারা দেশ জুড়ে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি এবং আইটি খাতের উন্নয়নে কয়েকটি শিল্প পার্ক স্থাপন করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তিনি বলেন, ‘চীনের পর, আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেডিমেড গার্মেন্টস রফতানিকারক দেশ।’ শেখ হাসিনা বলেন, মানসম্মত ওষুধের জন্য একটি বড় বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশ দ্রুত গড়ে উঠছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকাসহ ১০০রও বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করছি’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাহাজ নির্মাণ করার ক্ষেত্রে বিশ্বমানের সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ করে বাংলাদেশ বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশী কোম্পানিগুলো ইউরোপসহ ১৪ দেশে যাত্রী ও মালবাহী জাহাজ সরবরাহ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, সফটওয়্যার হচ্ছে বাংলাদেশের আরেকটি প্রতিশ্রুতিশীল শিল্প। ‘বাংলাদেশে ৮০০ সফটওয়্যার ও আইটি কোম্পানি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৫০’রও বেশি বিদেশের গ্রাহকদের সেবা প্রদান করছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী আইটি পেশাদার বিশ্বব্যাপী মাইক্রোসফট, ইন্টেল, আইবিএম, ওরাকল এবং সিস্কোসহ বিভিন্ন বিশ্বখ্যাত আইটি কোম্পানিতে কাজ করছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক পণ্য, গৃহস্থ যন্ত্রপাতি, হালকা প্রকৌশল পণ্য এবং ইলেকট্রনিক গেজেট বিশ্ববাজারে স্থান করে নিচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সংক্রান্ত উদ্বেগ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ থেকে জৈব প্রক্রিয়ায় মাটিতে মিশে যেতে সক্ষম পাট ও বিকল্প পাটজাত পণ্যের প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ‘এছাড়াও আমাদের কাছে আরও প্রতিযোগিতামূলক মূল্যের অন্যান্য গুণ-মানের পণ্য রয়েছে’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ম্যাককিনসে এ্যান্ড কোম্পানি সঠিকভাবেই বাংলাদেশকে দ্রুত বিকাশমান সোর্সিং গন্তব্য, উদীয়মান উৎপাদন ও বিতরণ কেন্দ্র, এবং একটি বর্ধমান ভোগ অর্থনীতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘এ কারণে আমি আমার দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। তারা এখানে এসেছেন, দেশটি দেখবেন এবং নতুন নতুন ব্যবসা খুঁজে বের করবে।’ অনুষ্ঠনে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ব্রুনাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হুসাইন এবং এফবিসিসিআই’র সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বক্তব্য রাখেন। জামে আসর মসজিদ পরিদর্শন ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রুনাইয়ের দু’টি জাতীয় মসজিদের একটি বৃহত্তম জামে আসর মসজিদ পরিদর্শন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকেলে মসজিদটি পরিদর্শন করেন এবং সেখানে আসরের নামাজ আদায় করেন। প্রবাসীদের সংবর্ধনা ॥ বিডিনিউজ জানায়, যেসব দেশ খাদ্য আমদানি করে, বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য দিয়ে সেখানকার বাজার ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রুনাই সফররত প্রধানমন্ত্রী রবিবার দ্য এম্পায়ার হোটেল এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের বলরুমে প্রবাসীদের দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
×