ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

লাঙ্গলবন্দে স্নান উৎসব শুরু, পুণ্যার্থীদের ঢল

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১৩ এপ্রিল ২০১৯

 লাঙ্গলবন্দে স্নান উৎসব শুরু, পুণ্যার্থীদের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জ বন্দরের লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাঅষ্টমী স্নানোৎসব শুরু হয়েছে। যা চলবে শনিবার সকাল ৮টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত। শুক্রবার বেলা ১১টা ৪৮ সেকেন্ডে এই স্নানোৎসবের লগ্ন শুরু হয়। শেষ হবে শনিবার সকাল ৮টা ৫৮ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে। শুক্রবার প্রথমদিনেই পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। এবার ১৮টি স্নানঘাটের মাধ্যমে এ স্নানোৎসব পালন করছে পুণ্যার্থীরা। এ উপলক্ষে এবারও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসন। স্নানোৎসবের তিন কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৬শ’ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানসহ দেশ-বিদেশ থেকে লাখ লাখ পুণ্যার্থী এই স্নান উৎসবে অংশ নিচ্ছে। জগতের যাবতীয় সঙ্কীর্ণতা ও পঙ্কিলতার আবরণে ঘেরা জীবন থেকে পাপমুক্তির বাসনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দে আসেন। ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর’; এ মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপ মোচনের আশায় লাখ লাখ পুণ্যার্থী আদি ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানে অংশ নেন। এ সময় স্নানমন্ত্র পাঠ করে নিজ নিজ বাসনা অনুযায়ী ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরিতকি, ডাব, আম পাতা ইত্যাদি পিতৃকুলের উদ্দেশে নদের জলে অর্পণ করেন পুণ্যার্থীরা। স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে লাঙ্গলবন্দকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে লাঙ্গলবন্দে আসা পুণ্যার্থীদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। স্নানোৎসব উদ্যাপন কমিটির নেতৃবৃন্দরা জানান, এবারও আড্ডা হরিরামপুর ঘাট, নলিত মোহন সাধু ঘাট, অন্নপর্ণা ঘাট, রাজঘাট, মাকরী সাধু ঘাট, গান্ধি (শশ্মান) ঘাট, ভদ্রেশ্বরী কালি ঘাট, জয়কালী মন্দির ঘাট, পাষাণকালী মন্দির ঘাট, মনোজকান্তি বড়াল ঘাট, প্রেমতলা ঘাট, মুনি ঋৃষিপাড়া ঘাট, ব্রহ্মমন্দির ঘাট, দক্ষিণেশ্বরী ঘাট, কালীগঞ্জ পঞ্চপান্ডব ঘাট ও সাবদী কালীবাড়ি ঘাটসহ ১৮টি ঘাটের মাধ্যমে স্নানোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রাজঘাটে পুণ্যার্থীদের ভিড় ছিল অন্যান্য ঘাটের তুলনায় অনেক বেশি। অনেকেরই রাজঘাটে স্নান করতে অপেক্ষা করতেও দেখা গেছে। আনসার, পুলিশ, র‌্যাব সদস্যের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের পুণ্যার্থীদের জন্য কাজ করতে দেখা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা পুণ্যার্থী দিপক কুমার জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে পাপমোচন হয়, ব্রহ্মার কৃপা লাভ করা যায়। তাই তিনি প্রতি বছর স্নানোৎসবে অংশ নেন। তিনি নদী পথে ট্রলার নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে সপরিবারে লাঙ্গলবন্দে এসেছেন। নির্বিঘ্নে স্নান করতে পেরে খুবই আনন্দিত হয়েছেন। রাজধানী ঢাকা থেকে আগত কৃষ্ণ চন্দ্র মন্ডল বলেন, আমরা সপরিবারে লাঙ্গলবন্দে স্নান করতে এসেছি। শান্তিতে স্নান শেষ করে আবারও ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। এবারও অন্যান্য বছরের মতো কঠোর নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। তবে কয়েক দফা বৃষ্টিতে আমাদের একটু দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রংপুর থেকে আগত পিংকী দাস জানান, নারী পুণ্যার্থীদের যথেষ্ট নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। স্নানের পর কাপড় পাল্টানোর জন্য আলাদা স্থান থাকায় কোন সমস্যা হয়নি। মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা জানান, এ বছর প্রায় ১৫-২০ লাখ পুণ্যার্থী অংশ নিবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, ৫টি মেডিক্যাল টিম ও ৫টি এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এছাড়াও ১০ শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী ২টি হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিস ও ডুবুরী দলও নিয়োজিত আছে। বন্দর থানার ওসি মোঃ রফিকুল ইসলাম সন্ধ্যায় জানান, স্নানোৎসব কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে ১৫ নং ঘাটে ৮০ বছরের বৃদ্ধা শ্যামপ্রিয় রানী দাস অসুস্থতাজনিত কারণে মারা যায়।
×