ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী মাসের মধ্যে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ১১:২০, ১১ এপ্রিল ২০১৯

আগামী মাসের মধ্যে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি চূড়ান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি মাস অথবা আগামী মাসের মধ্যে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কার্যক্রম চূড়ান্ত হতে পারে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, চারটি ক্যাটাগরিতে যোগ্য হিসেবে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়াও মেডিক্যাল কলেজের মতো সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মত দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি জানি কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়, বড় বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় নানা কারণে তারা এর বিরোধিতা করে। কিন্তু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাটি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্যে খুবই জরুরী।’ বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এমপিভুক্তির দাবিতে অনেক দিন ধরে শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করেছেন। তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমরা অনেক আগেই এমপিওভুক্তির কাজ শুরু করেছি।’ এমপিওভুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে সকল তথ্য দেয়া হয়েছে তা যাচাই-বাছাই করা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তাদের দেয়া তথ্য ঠিক থাকলে আগামী মাসে আড়াই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হবে। নতুবা যোগ্য একটি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে অপরটি পেলে এ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হবে। এ কারণে সকল যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে একই সঙ্গে এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ কারণটা যদি আর্থিক হয় তবে প্রথম পর্যায়ে নতুন এমপিওভুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২৫ শতাংশ এমপিও সুবিধা দেয়া হতে পারে। যদি তা না হয়, তবে শতভাগ এমপিও সুবিধা প্রদান করা হবে।’ সরকার সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করে। ওই সময় এমপিওভুক্তির শর্ত পূরণ করা অনেক প্রতিষ্ঠান এ কার্যক্রম থেকে বাদ পড়ে। পরবর্তীতে নতুন আরও প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়া হয়। সবমিলিয়ে বর্তমানে দেশে স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে পাঁচ হাজার ২৪২। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক কর্মচারী রয়েছে, যারা এমপিওভুক্তির (বেতনের সরকারী অংশ) দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতি কেন নয়? গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত করতে পারি, তাহলে কেন অন্য ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত করতে পারব না? আমার বিশ্বাস, আমাদের যদি সবার একটু সদিচ্ছা থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা পারব। এক্ষেত্রে আমি আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সহযোগিতা দেবেন।’ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমাতে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ লক্ষ্যে সরকারকে সহযোগিতা করবে- এমন আশা প্রকাশ করে দীপু মনি বলেন, ‘অনেক হয়রানি কমে যায়, অর্থ অপচয় কমে যায়, কষ্ট কমে যায়। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব না সারাদেশে এখানে ওখানে সেখানে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া। অনেক সময় আমি শুনি, ছেলেরা মসজিদে রাতে ঘুমিয়ে পরীক্ষা দেয়। মেয়েরা কোথায় গিয়ে থাকবে? তাদের বাবা-মা এবং সব বাপ-মায়ের পক্ষে কি তা সম্ভব? এটা তো সম্ভবও নয়।’ প্রচলিত নিয়মে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। তাতে ভোগান্তির পাশাপাশি তাদের প্রচুর অর্থও খরচ হয়। কিন্তু দেশের সব মেডিক্যাল কলেজে এক দিনে একসঙ্গে এক প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদও গতবছর এক অনুষ্ঠানে গুচ্ছভিত্তিক বা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে ভাবার তাগিদ দেন। এর আগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন পক্ষের বিরোধিতার কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার আয়োজন করেও শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করে। যিনি চরম দুর্নীতিবাজ তিনিই বদলি নিয়ে আতঙ্কিত ॥ সম্প্রতি শিক্ষা প্রশাসনের রদবদল প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘বদলি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যিনি চরম দুর্নীতিবাজ, যিনি একই পদে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন কিংবা যিনি অন্যায় সুবিধা নিচ্ছেন তিনিই বদলি নিয়ে আতঙ্কিত হবেন।’ বদলি ও পদায়নে সিনিয়রিটি (জ্যেষ্ঠতা) সব সময় বিবেচ্য বিষয় নয় মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কে কোন জায়গায় ভাল করবে সেই চিন্তা থেকেই আমরা পদায়ন করেছি। তবে আমি কোন ধরনের বলয় (সিন্ডিকেট) তৈরি করে কাজ করি না।’ নজরদারিতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে কড়া নজরদারিতে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনটি একজন পরামর্শকের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অন্য আইনের সঙ্গে অসঙ্গতি আছে কি না- এই বিষয়টিই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারা আশা করছেন, যাচাই শেষে মন্ত্রণালয় থেকে এ বছরের শেষ নাগাদ পরবর্তী পর্যায়ে পাঠাতে পারবেন। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নেরও কাজ চলছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
×