ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক গাছে অসংখ্য ফুল, কাঁচা হলুদ রঙের মেলা

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১০ এপ্রিল ২০১৯

এক গাছে অসংখ্য ফুল, কাঁচা হলুদ রঙের মেলা

মোরসালিন মিজান ॥ সোনাপাতি ফুলটি দেখেছেন কখনও? এমন প্রশ্নে অনেকেই চটজলদি উত্তর করবেন। বলবেন, খুব সুন্দর ফুল নাকি? দেখা হয়নি তো। আসলে দেখেছেন। না দেখে উপায় আছে? সোনাপাতির মৌসুম চলছে এখন। উঁচু গাছ। এলোমেলো ডালপালা। বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। প্রতিটি গাছকে এক একটি বাগান বলে মনে হয়! থোকা থোকা ফুলে গাছ ভর্তি হয়ে আছে। কাঁচা হলুদ রঙের ফুল। দূর থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মনে হয় শেষ ভাগে এসেও বসন্ত ঠিক বিদায় নিতে চাইছে না। আর তাই হলুদের মেলা বসিয়েছে। এবার কি চেনা যাচ্ছে? এবার ফুলটি প্রথম দেখা হলো ঢাকার ইস্কাটনে। রাস্তার দু’ পাশে অনেকগুলো বাড়ি। একটির দিকে চোখ যাচ্ছিল। সহজেই আলাদা করা যাচ্ছিল বাড়িটিকে। কারণ আর কিছু নয়, সামনের খোলা জায়গায় ফুল ভর্তি সোনাপাতি গাছ। চারপাশটাকে রীতিমতো আলোকিত করে রেখেছে। পথচারীরাও এদিকে তাকিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তবে শুধু ইস্কাটনে নয়, হাতিরঝিল, রমনা পার্ক, বিমানবন্দর সড়ক, শেরে বাংলা নগরসহ বেশ কিছু রাস্তার ধারে ফুলটি দেখা যাচ্ছে। আমরা সেনপাতি শব্দটির সঙ্গে খুব পরিচিত। কিন্তু এই ফুলের নাম সোনাপাতি। দু’য়ের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে? না, এমন কিছু প্রতিয়মান হয় না। তবে অনেকের দৃষ্টিতে সোনাপাতির রং হলুদ নয়, সোনা রং ফুল। সোনাপতি নামকরণের এটি একটি কারণ বলে ধরে নেয়া হয়। আর বৈজ্ঞানিক নামটিÑ টেকমা স্টানস। আরও কিছু নাম আছে। এই যেমনÑ ইয়োলো বেলস, ইয়োলো ট্রামপেট, ইয়োলো এলডার। আর সবচেয়ে সুন্দর নামটি সম্ভবত চন্দ্রপ্রভা। সাধারণত বর্ষা বা শরতে ফোটে বলে জানা যায়। তবে বাসন্তী রঙের ফুল বসন্তের সঙ্গেই বেশি যায়। লক্ষ্য করে দেখা গেছে, সোনাপাতি গাছ কিছুটা ঝোপের মতো হয়। একই গাছের আবার দুটি প্রজাতি। বড় প্রজাতির গাছে বড় ফুল। ছোটটিতে অপেক্ষাকৃত ছোট ফুল ফোটে। রঙের দিক থেকে উভয় প্রজাতি এক ও অভিন্ন। উপরের দিকে ছড়ানো গাছে সবুজ পাতা। সেই সবুজ রীতিমতো ঢেকে দেয় গাঢ় হলুদ রঙের ফুল। কাছে গিয়ে ভাল করে খেলায়াল করলেই এক একটি ফুলের আকৃতি অনুমান করা যায়। ফুলগুলো লম্বা মাইকের মতো দেখতে। কেউ কেউ তাই মাইক ফুল বলে চালিয়ে দিচ্ছেন! এমন বেশকিছু ‘মাইক’ নিয়ে একটি তোড়া। প্রতিটি তোড়ায় হলুদের মাখামাখী। থোকা থোকা হলুদে গোটা গাছটি বিশেষ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার গবেষণা থেকে জানা যায়, সোনাপাতি ক্রান্তীয় আমেরিকান প্রজাতি। ছোট প্রজাতির গাছ ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এর সরু ডালের দুই পাশে ঘনপাতা। দল ফানেলের আকার চওড়ায় ৩ থেকে ৪ সেমি। সোনাপাতির বড় প্রজাতিটির নাম গৌরীচৌরী। এই গাছ ৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। একই রকম যৌগপত্র। সে যাই হোক, ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করাই মূল কথা। না দেখে থাকলে খুঁজে নিন। দেখুন। সোনাপাতির চারা পাওয়া যায়। বাড়ির সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে একটা দুটো লাগিয়ে দিন। সামান্য পরিচর্যায় আপনার হয়ে যাবে গাছটি। ফুলে ফুলে ভরিয়ে রাখবে চারপাশ।
×