ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমা লঘুচাপে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি

প্রকাশিত: ১১:১৯, ৯ এপ্রিল ২০১৯

পশ্চিমা লঘুচাপে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা বায়ুর সংমিশ্রণের কারণে দেশের ওপর দিয়ে বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছে। এর কারণেই মূলত কখনও বজ্রমেঘের সৃষ্টি, কখনও ঝড়ো হাওয়া আবার কখনও ভারি বৃষ্টিপাত আবার কখনও ভ্যাপসা গরমের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আর এর ফলেই সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে আবহাওয়ার এই বিরূপ পরিস্থিতি আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত থাকতে পারে। আর কয়েকদিন পরে প্রকৃতিতে আসছে বৈশাখ মাস। বাংলা প্রথম মাসের প্রকৃতি অনুযায়ী এই মাসেই শুরু হয় কালবৈশাখী এবং বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি। কিন্তু এবার বৈশাখ আসার প্রায় ১৫ দিন আগ থেকেই কালবৈশাখী শুরু হয়ে গেছে। গত ৩১ মার্চের সন্ধ্যায় সারাদেশে ওপর দিয়ে ভয়বহ কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। এতে গাছের ডাল ভেঙ্গে নদীতে নৌকা উল্টে এবং বজ্রপাতে সারাদেশের ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তারপর থেকেই মূলত দেশের বিভিন্ন স্থানের ওপরে দিয়ে প্রায় প্রতিদিন বয়ে যাচ্ছে কালবৈশাখী। বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। এছাড়া এপ্রিল শুরু হওয়ায় আগেই প্রকৃতিতে বিরূপ আহাওয়া বয়ে যাচ্ছে। কখনও প্রচ- গরমে মানুষের হাঁসফাঁস শুরু হয়ে যাচ্ছে। আবার কখনও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে শীতল আবহাওয় বয়ে যাচ্ছে। কখনও আকাশে ঘনিয়ে আসছে কালো মেঘ। আবার কখনও ভ্যাপসা গরমে শরীর থেকে দরদর করে ঘাম বের হয়ে যাচ্ছে। আবাহওয়া অফিস জানিয়েছে, এই অবস্থার জন্য মূলত দায়ী বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা বায়ুর সঙ্গে পশ্চিমা লঘুচাপের সংমিশ্রণ। এতে বাতাসে জলীয় কণার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ভ্যাপসা গরম পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে যে মেঘ সৃষ্টি হচ্ছে সেই মেঘ থেকেই শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত এবং কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, দুই ধরনের বায়ু সংমিশ্রণের কারণেই বিরূপ আবহওয়া সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বাতাসে জলীয় কণার যোগান বাড়ছে। ফলে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, এপ্রিলের ১৩ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত এই বিরূপ আবহওয়া বিরাজ করবে। এই সময়ের মধ্যে কখনও কালবৈশাখী বয়ে যাবে। আবার বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টিও হবে। আবার জলীয় কণার যোগান বাড়লে ভ্যাপসা গরম অনুভূতি তৈরি হবে। তিনি বলেন মধ্য এপ্রিলের পর থেকে তাপমাত্রা আবার বাড়তে শুরু করবে। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন্ স্থানে তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। তবে এই মাসে সাগরে কোন নি¤œচাপ ঘূর্ণিঝড়ের কোন আশঙ্কা নেই। এদিকে আবহাওয়ার বিরূপ পরিস্থিতির কারণে প্রায় প্রতিদিন কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতা জারি করছে আবহাওয়া অফিস। বিশেষ করে বিকেল থেকে রাত অবধি এই সতর্কতা জারি করা হচ্ছে। সোমবারও তাদের এই ধরনের এক সতর্ক বার্তায় বলা হয় বেলা চারটা থেকে পরবর্তী ছয়ঘণ্টায় ঢাকা, ফরিদপুর, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল সমূহের ওপর দিয়েছে কালবৈশাখীর বজ্রঝড় এবং শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর আকাশ ছেয়েছিল কালোমেঘে। সকালে একবার গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি নামে। এরপর তিনটার পর নামে মুষলধারে বৃষ্টি। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীর ফার্মগেট, খামারবাড়ি মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতাও দেখা দেয়। কাজের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজন হঠাৎ বিপদের মধ্যে পড়ে যায়। অনেকে কাক ভেজা হয়ে পড়েন। বৃষ্টির হাত থেকে একটু আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। তবে রাজধানীতে বড় ধরনের বজ্রপাতের ঘটনা না ঘটলে বিভিন্ন স্থানে বড় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। তবে বিকেলে আধঘণ্টা বৃষ্টিপাতের পর আবার সূর্যের দেখা মেলে। সকাল থেকে কখনও কালো মেঘ থাকলেও আবার কখনও রোদের দেখা মিলেছে। কখনও ঠা-া অনুভূতি আবার কখনও গরমের অনুভূতি তৈরি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্য ছয়টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাতে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজধানীর বাইরেও ভারি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে। তারা জানায়, সোমবার সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে সীতাকু-ে ৭২ মিলিমিটার। এছাড়া কুমিল্লায় ৩৮ মিলিমিটার, ফেনীতে ৪১ মিলিমিটার সন্দ্বীপে ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ২৪ ঘণ্টা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত অবস্থান করছে। এর ফলে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণসহ বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা (১-২) ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। ঢাকায় বাতাসের গতি ও দিক ঃ দক্ষিণ-পশ্চিম/দক্ষিণ দিকে ঘণ্টায় (০৮-১২) কি.মি. যা অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ ঘন্টায় (৩০-৪০) কি.মি.। বজ্রপাতে বিদ্যুত শ্রমিক ও কৃষকের মৃত্যু ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ ও কচুয়া, চাঁদপুর থেকে জানান, বজ্রপাতে সোমবার কিশোরগঞ্জ ও চাঁদপুরে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। কিশোরগঞ্জের নিকলীতে হাওড়ে পলো দিয়ে মাছ শিকার করতে গিয়ে বজ্রপাতে বিল্লাল মিয়া (৩৫) নামে এক বিদ্যুত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোরে উপজেলার জোয়ানশাহী হাওড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, নিকলী উপজেলা সদরের পূর্বগ্রামের আব্দুস সোবান মিয়ার ছেলে বিল্লাল মিয়া পেশাদার বিদ্যুত শ্রমিক। শখেরবশে সোমবার ভোরে মাছ শিকার করতে উপজেলার জোয়ানশাহী হাওড়ে যায় বিল্লাল। ওই সময় আকস্মিক বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। কচুয়া ॥ চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতে মোসলেম নামে (৫৫) এক কৃষক মারা গেছে। সোমবার সকালে উপজেলার সাচার ইউনিয়নের ঘুগরার বিলে এই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। উপজেলার বিতারা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মৃত ফজর আলীর ছেলে মোসলেম সকালে বিলে ধান খেতের আগাছা পরিষ্কার করে বাড়ি ফেরার সময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। চরফ্যাশন ॥ ভোলার চরফ্যাশনে সোমবার বজ্রপাতে মোঃ জসিম (২৫) নামের এক শ্রমিক ও বিদ্যুতস্পৃষ্টে মোঃ আরিফ নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত জসিম উপজেলার চরমাদ্রাজ মধুমতি ব্রিক্সের শ্রমিক ও নিহত আরিফ চরকলমি গ্রামের নাসির মুন্সির ছেলে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মধুমতি ব্রিক্সের কাজ করার সময় বজ্রপাতে মোঃ জসিম নিহত হয় এবং দুপুরে উপজেলার শশীভূষণ থানার চরকলমি ইউনিয়নে বিদ্যুত দিয়ে পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে আরিফ নিহত হয়। চরফ্যাশন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আজিজ জানান, নিহতদের পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
×