বান্দরবানে অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠছে বহুতল ভবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ৮ এপ্রিল ॥ বান্দরবানে সরকারী বিধি ভঙ্গ করে একের পর এক বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন মালিকরা। এসব ভবন করার ক্ষেত্রে পৌরসভা, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে নক্সা অনুমোদনের কথা থাকলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। ত্রুটিযুক্ত এসব ভবনে যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আইনী জটিতলায় ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান শহরের ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের কাছ থেকে ভূমি ক্রয় করে জেলা শহরের স্টেডিয়ামের পাশে ৪০ শতক জায়গার উপর কপিল প্রোপার্টিজ এ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড নির্মাণ করছে অত্যাধুনিক নিউ মার্কেট। নির্মাণ শ্রমিকরা ৭তলা বিশিষ্ট ভবনটির নির্মাণের জন্য করছে পাইলিং। পাইলিং করার ভারি যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে, দিনে রাতে কাজ চলছে সমানতালে। টিন দিয়ে ঘেরা জায়গাটিতে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ। আর এই নিষিদ্ধতার আড়ালে করা হচ্ছে অনুমোদনহীন এই বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ। এই বিষয়ে শহরের ৬নং পৌর কমিশনার শেখর দাশ বলেন, কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়ায় এরা কিভাবে বহুতল ভবনের নির্মাণের কাজ শুরু করেছে বুঝতে পারছি না। আরও জানা গেছে, পুলিশ গত ২৭ মার্চ ও ৩ এপ্রিল দুই দফায় ভবনটির নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিলেও তারা প্রশাসনের নাম বিক্রি করে ফের কাজ শুরু করেছে। পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মংসুখই মার্মা স্বাক্ষরিত এই বিষয়ে দুই দফায় কাজ বন্ধ রাখার নোটিস দেয়া হয়, তারপরও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। খোদ জেলার প্রধান স্টেডিয়ামের প্রবেশদ্ধার ও গ্যালারির পাশে অনুমোদনহীন এই ভবন নির্মাণ করার কারণে স্টেডিয়ামের মতো গুরত্বপূর্ণ স্থাপনাটির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে স্থানীয় ক্রীড়ামোদীদের মধ্যে। এই বিষয়ে নির্মাণ কাজের কেয়ার টেকার নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের ভবনটি নির্মাণের অনুমোদন আছে। তবে প্রতিবেদককে অনুমোদনের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি তিনি। ফায়ার সার্ভিসের এক পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভবন মালিকরা আইন মানছেন না। পৌরসভা থেকে নক্সা অনুমোদনের পর সেই নক্সা ভবন মালিকরা ফায়ার সার্ভিসের অফিসে জমা দেবে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা নক্সা অনুমোদনের পরই ভবন নির্মাণ করতে পারবেন মালিকরা। এই ক্ষেত্রে তারা ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনের প্রয়োজন মনে করেনি। এই বিষয়ে নিউ মার্কেটের মালিক মোঃ জসিমের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইমারত নির্মাণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী বান্দরবান পৌরসভার নগর পরিকল্পনা কর্মকর্তারা নক্সা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বহুতল বা পাকা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়। এছাড়া উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে জেলা গণপূর্ত বিভাগের সুপারিশে জেলার ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড কমিটি বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়। কিন্তু বান্দরবানের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন, প্রভাবশালীরা অনুমোদন ছাড়াই শুরু করে নির্মাণ কাজ। এই বিষয়ে পৌর মেয়র ইসলাম বেবী বলেন, প্রোপার্টিজ এ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড কাগজপত্র আমাদের জমা দিয়েছে, তবে কোন ধরনের অনুমোদন পায়নি। প্রসঙ্গত, বান্দরবানের মাটিতে আর্গানিক পদার্থের উপস্থিতি এই অঞ্চলের মাটিকে ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। বান্দরবানসহ অপর দুই পার্বত্য জেলা ভূমিকম্পের জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিবেচিত হওয়ায় বান্দরবানে ৭ তলার ভবন নির্মাণের অনুমোদন প্রদান করে না পৌরসভা।