ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে আয়ু

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ৭ এপ্রিল ২০১৯

 বাড়ছে আয়ু

একদা হতদরিদ্র, দুস্থ, অর্ধাহার-অনাহারে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠা বাঙালীর জীবনধারা গেছে বদলে। অপুষ্টি, রোগে, শোকে অকাল মৃত্যুতে ঢলে পড়া বাঙালীর জীবন আর নেই। কালপ্রবাহে সবখানে এসেছে পরিবর্তন। বাঙালীর জীবনে এই বদলে যাওয়া আচানক নয়, নয় অলৌকিক। সঠিক নেতৃত্ব, সঠিক পরিকল্পনা আর দেশপ্রেমের সম্মিলনে বাঙালী বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো জাতিতে উন্নীত আজ। তার উপার্জনও বেড়েছে। তাই দেখা যায়, গত ১৬ বছরে বিশ্বে যেখানে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে পাঁচ দশমিক পাঁচ, সেখানে একই সময়ে বাংলাদেশে গড় আয়ু বেড়েছে বৈশ্বিক গড় আয়ুর চেয়ে বেশি। এই সংখ্যা সাত দশমিক সতেরো। ২০০০ সালে বাংলাদেশের গড় আয়ু ছিল ৬৫ দশমিক ৩২। এর মধ্যে নারীর গড় আয়ু ছিল ৬৫ দশমিক ৬৮ এবং পুরুষের গড় আয়ু ছিল ৬৪ দশমিক ২৯। কিন্তু ২০১৬ সালে এসে বাংলাদেশে গড় আয়ু যেমন বেড়েছে এবং তেমনি উন্নতির হিসেবে নারীর গড় আয়ুও পুরুষের চেয়ে বেশি বেড়েছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৪৯ বছরে। এর মধ্যে নারীর গড় আয়ু ছিল ৭৪ দশমিক ২৯ এবং পুরুষের ৭০ দশমিক ৮৯ বছর। অর্থাৎ এই সময়ে পুরুষের থেকে নারীর গড় আয়ু বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন বছর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ২০১৯-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে ২০০০ সালের পর ১৬ বছরে মানুষের গড় আয়ু সাড়ে পাঁচ বছর বেড়ে ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে মানুষের পূর্ণ স্বাস্থ্যের আয়ুস্কাল বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে মানুষের উপার্জন। ফলে উন্নত ও অনুন্নত দেশে মানুষের গড় আয়ুর ব্যবধান ১৮ দশমিক এক বছর। পুরুষের চেয়ে নারীর গড় আয়ু বেশি হওয়ার কারণ ক্ষেত্রবিশেষে নারীর তুলনায় পুরুষের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে অনীহা, সড়ক দুর্ঘটনা এবং প্রতিরোধযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য অসংক্রামক রোগ। যে কারণে পুরুষ বেশি মারা যায়। দেখা গেছে, বিশ্বের সর্বত্রই পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি দিন বাঁচে। বিশেষ করে ধনী দেশগুলোতে এ অবস্থা সর্বাধিক। ১৬ বছরে বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু সাড়ে পাঁচ বছর বাড়লেও একই সময়ে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে সোয়া সাত বছর। গড় আয়ুর ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পার্থক্যও রয়েছে। এই ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যেসব দেশে নারীরা স্বাস্থ্য সেবা কম পায়, সেসব দেশে নারী-পুরুষের গড় আয়ুর ব্যবধান খুব কম। স্বল্প আয়ুর দেশে যেখানে স্বাস্থ্যসেবা দুষ্প্রাপ্য, সেখানে প্রতি ৪১জন নারীর মধ্যে একজন মাতৃত্বজনিত কারণে মারা যায়। আর উন্নত দেশে প্রতি তিন হাজার তিন শ’ নারীর মধ্যে একজন নারী মাতৃত্বজনিত কারণে মারা যায়। স্বল্প আয়ের ৯০ শতাংশ দেশেই প্রতি এক হাজার প্রসূতির মধ্যে মাত্র চারজন নার্সিং এবং ধাত্রী বিদ্যার সুবিধা পায়। নারী-পুরুষের গড় আয়ুর ক্ষেত্রে স্বাস্থসেবা প্রদানে দৃষ্টিভঙ্গিও বড় ভূমিকা রাখে। যেখানে নারী ও পুরুষ একই রোগে আক্রান্ত হয়, সেখানে নারীর তুলনায় পুুরুষ কম স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে। বিশ্বের আত্মহত্যার ঘটনা নারীর তুলনায় পুুরুষের মধ্যে বেশি ঘটে। যা ৭৫ শতাংশ বেশি। ১৫ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় নারীর তুলনায় পুরুষ মারা যায় দুইগুণ বেশি। আর খুনোখুনিতে নারীর তুলনায় পুরুষ মারা যায় চারগুণ বেশি। এমনিতেই মানুষের আয়ুস্কাল নির্ধারণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে মানুষের আয়। উন্নত ও অনুন্নত দেশে প্রতি ১৪ শিশুর একটি মারা যায় তার পঞ্চম জন্মদিন পালনের আগেই। বাংলাদেশের মানুষের আয় উপার্জন যত বাড়বে, ততই তার গড় আয়ু বাড়বে। শেখ হাসিনার সরকার দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে আয়ু আরও বাড়বে। হয়তো বাঙালীর একদিন শতায়ু হবে গড় আয়ু-এমন প্রত্যাশা বাতুলতা নয়।
×