ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেসি শুধুই বার্সিলোনার!

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ৬ এপ্রিল ২০১৯

 মেসি শুধুই বার্সিলোনার!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফুটবল সমগ্র বিশ্বের কোণায় কোণায় জনপ্রিয় এক খেলা। এই খেলার তারকাদের পরিচিতি সর্বখানে আকাশছোঁয়া। এই একটিমাত্র খেলার মাধ্যমেই অনেক ফুটবলার তার দেশকে সারাবিশ্বে পরিচিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। দিয়াগো ম্যারাডোনার মাধ্যমে আর্জেন্টিনার নাম বহির্বিশ্বে সর্বসাধারণের হৃদয়ে ধারণ করে নেয়াটা এর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত। ম্যারাডোনার সেই কাজটি বতর্মানে স্বার্থকতার সঙ্গে করে চলেছেন তার যোগ্য উত্তরসূরি লিওনেল মেসি। বার্সিলোনার এ ডায়মন্ড বিগত প্রায় এক যুগ ধরেই ক্লাবের হয়ে অসাধারণ ফুটবল নৈপুণ্য প্রদর্শন করে চলেছেন। যার স্বীকৃতিস্বরূপ অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন। কিন্তু পাঠক জানেন কি বছরের পর বছর বিস্ময় জাগানিয়া ধারাবাহিক পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে চলা মেসির শুরুর পথটা মসৃণ ছিল না। এক সময় অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় ঝরে পড়ার উপক্রম হয়েছিল বিস্ময়কর এ প্রতিভার। ১৯৮৭ সালে আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্ম নেয়া মেসির বেড়ে ওঠার গল্পের সঙ্গে আজকের অবস্থান মেলাতে গেলে আপনি বিভ্রান্তিতে পড়তে বাধ্য। কেননা সে সময় মেসির বাবা-মা ছিলেন নিতান্তই গরিব। বাবা জর্জ মেসি কাজ করতেন ফ্যাক্টরিতে আর মা সিলিয়া ছিলেন পার্টটাইম ক্লিনার। এমন অস্বচ্ছল পরিবার থেকেই মেসির আকাশছোঁয়া স্বপ্নের বীজ বপন করেন তার বাবা জর্জ। মূলত বাবার প্রচ- উৎসাহ আর আগ্রহেই মাত্র পাঁচ বছর বয়সে স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দলিতে ফুটবলে হাতেখড়ি হয় মেসির। কিন্তু ১৯৯৫ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সেই জীবন নিয়ে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় তার। এ সময় শারীরিক বৃদ্ধিজনিত হরমোনশূন্যতায় ভুগছিলেন মেসি। তখন মেসির ঠিকানা ছিল নিউওয়েলস বয়েজ। ওই অবস্থায় তাকে দলে নিতে যাচ্ছিল রিভারপ্লেট। দলটির পক্ষে মেসির চিকিৎসার খরচ যোগানো অসম্ভব ছিল। সঙ্গত কারণে মেসির বাবা-মায়েরও মাসে ১৫০০ ডলার খরচ করার মতো অবস্থা ছিল না। অবস্থা এমন সৃষ্টি হলো যে মেসির বেঁচে থাকাটাই দায়। সেখানে আবার ফুটবল খেলা। কিন্তু না, মেসিকে অকালে ঝরে পড়তে হয়নি। অসামান্য এক ফুটবল প্রতিভাকে রক্ষা করতে ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসে বার্সিলোনা। তারা মেসির প্রতিভা চিনতে পেরে বিশেষ করে বার্সার সে সময়কার স্পোর্টিং ডিরেক্টর কার্লেস রেক্সাস মেসিতে মুগ্ধ হয়ে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করেন। এটিও ছিল এক যুগান্তকরী ঘটনা। মেসির সঙ্গে বার্সিলোনার চুক্তি হয়েছিল ব্যতিক্রমী আমেজে। মেসিতে মুগ্ধ হয়ে রেক্সাস চটজলদি চুক্তি সম্পন্ন করেন। কেননা অন্য কেউ যদি তাকে ছিনিয়ে নেয়। এ তাড়া থেকেই অদ্ভুতভাবে মেসির সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেন রেক্সাস। দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি সম্পন্নের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজন পড়ে একটি সাদা কাগজের। কিন্তু ধারে কাছে কোন সাদা কাগজ ছিল না। এরপরও চুক্তি থেমে থাকেনি। কিন্তু কিসের ওপর স্বাক্ষর করে চুক্তি হলো? হ্যাঁ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল ন্যাপকিনে অর্থাৎ টিস্যু পেপারে। মেসির সঙ্গে বার্সিলোনার ওই ঐতিহাসিক চুক্তিতে নেপথ্য ভূমিকা রেখেছিলেন হোরাসিও গ্যাগগিওলি। সেই থেকে নবজীবন পেয়ে জন্ম হয়েছে নতুন মেসির। এরপর থেকে মেসির উত্থান রূপকথার গল্পের মতোই। এখন পর্যন্ত ক্ষুদে জাদুকর বার্সিলোনা ছাড়া অন্য ক্লাবের কথা ভাবতেই পারেন না। ক্লাবটির সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্টোমেউও চান মেসি চিরকাল ন্যুক্যাম্পে থাকুক। এক সাক্ষাতকারে তিনি এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সাল পর্যন্ত মেসির জাদু দেখতে পাবেন ন্যুক্যাম্পের দর্শকরা। কারণ সেই সময় পর্যন্তই বার্সার সঙ্গে চুক্তি আছে বর্তমান অধিনায়কের। কিন্তু তারপর কী হবে? মেসি যদি নতুন করে চুক্তি না করেন? শুধু মেসির আগ্রহ থাকলেই কিন্তু হবে না। ২০২১ সালে যখন বর্তমান চুক্তি শেষ হবে, তখন মেসির বয়স হবে ৩৪। ক্যারিয়ার থাকবে শেষের পথে। ফুটবলের বিচারে ‘বুড়ো’ একজন ফুটবলারের জন্য আবার কাঠখড় কেন পোড়াবে বার্সার মতো ক্লাব? ৩৪ হোক আর যাই হোক, মেসিকে মোটেও বুড়ো ভাবতে রাজি নন বার্টোমেউ। তিনি বলেন, আমরা চাই মেসি যেন নিজের ক্যারিয়ার লম্বা করে ফুটবলটা নিজের মতো করে উপভোগ করে। সে প্রত্যাশার সীমানা ভেঙ্গে দিয়েছে। সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে। এমনকি প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের চোখেও শ্রদ্ধার পাত্র। বার্সা সভাপতি বলেন, আসল কথাটা হলো আমরা তার সঙ্গে চুক্তিটা নবায়ন করতে চাই। সে এখনও তরুণ, এটা তার পারফর্মেন্স দেখলেই বুঝতে পারবেন। আমাদের সঙ্গে এখনও তার দুই বছরের চুক্তি বাকি আছে। দিন দিন তার উন্নতি হচ্ছেই, নিত্য নতুন কিছু আবিষ্কার করছে। আমি বিশ্বাস করি তার সামনে এখনও লম্বা একটা সময় পড়ে আছে। বার্সিলোনাতে তাকে ধরে রাখতে আমরা সামনের মাসে বসতে চাই।
×