ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক

সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে

প্রকাশিত: ১২:০০, ৪ এপ্রিল ২০১৯

সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অনার্স পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের অজ্ঞতার কারণে কোন কোন কলেজের পরীক্ষার্থীকে ৭০/৮০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে হবে। অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষার্থীদের অধ্যয়নরত কলেজ থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের দূরত্ব বিবেচনা না করেই কেন্দ্র নির্ধারণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, যা সম্পূর্ণ অমানবিক ও ভোগান্তির কারণ শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জন্য। উল্লেখ্য, আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ৬৪ জেলায় চতুর্থ বর্ষ অনার্স পরীক্ষা ২৭০ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিকে আগামী ২০ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে প্রথম বর্ষ বিবিএস (পাস) কোর্সের পরীক্ষা। প্রশ্ন উঠেছে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান কলেজের পরীক্ষার্থীরা স্ব স্ব কলেজে পরীক্ষা দেবে কিভাবে। এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ফয়জুল করিম রবিবার বিকেলে বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারণ হয় বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও কলেজের সংখ্যার উপর। নিজ কলেজে পরীক্ষা দেয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারণে অনেক নিয়মনীতি রয়েছে। ৫/৭ কিলোমিটার দূরত্বে কেন্দ্র থাকার পরও কেন প্রায় ২৫ কিমি. দূরে কেন্দ্র দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ভাল বলতে পারবেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৪র্থ বর্ষ ¯œাতক (সম্মান) শ্রেণীর পরীক্ষা আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত চলবে। এই কেন্দ্র নির্ধারণ বিজ্ঞপ্তি তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের পরিচালককে ওয়েবসাইটে দেশের ৭ বিভাগের ৬৪ জেলায় ২৭০ পরীক্ষা কেন্দ্রের তালিকা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ২৭০ কেন্দ্রের সুপারভাইজিং কর্মকর্তা হিসেবে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব পালনের জন্য চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগীয় প্রধান, ভাইস চ্যান্সেলর দফতরের উপ-রেজিস্ট্রার ও সচিব, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার, এই তালিকা অনুযায়ী বেশ কয়েকটি কলেজের পরীক্ষার সেন্টার নির্ধারণ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম কলেজ কেন্দ্র থেকে মীরসরাইয়ের নিজামপুর কলেজের দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটারেরও বেশি, হাটহাজারী কলেজ ৩৫ কিমি, রাউজান কলেজ ৪২ কিমি, সীতাকু- কলেজ ৩৭ কিমি, বার আউলিয়া কলেজ ২৯ কিমি, ফটিকছড়ি কলেজ ৫৫কিমি, সন্দ্বীপের হাজী এবি কলেজ ও হাজী মোস্তাফিজুর রহমান কলেজ সড়কপথে ২৯ কিমি ছাড়াও স্পীড বোটে আরও আধঘণ্টার সমুদ্রপাড়ি, তাও আবার নির্ভর করে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার উপর নির্ভরশীল, ভাটিয়ারীর বিজয় সরণি কলেজের শিক্ষার্থীদের ২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম কলেজে পরীক্ষা দিতে হবে। অথচ গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিত হওয়া ২য় বর্ষ অনার্স পরীক্ষার সময়ও ফটিকছড়ি কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রায় ৩০ কিলোমিটার ও রাউজান কলেজের শিক্ষার্থীদের ২০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে হাটহাজারী কলেজে, গাছবাড়িয়া সরকারী কলেজকে ২০ কিলোমিটার ও কর্নেল অলি আহমদ বীরবিক্রম কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পটিয়া সরকারী কলেজে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ইমাম গজ্জালী কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রায় ৩০ কিলোমিটার, রাঙ্গুনিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা ৪২ কিলোমিটার, স্যার আশুতোষ সরকারী ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থীরা ৩০ কিমি এবং আনোয়ারা কলেজের শিক্ষার্থীরা ২৫ কিমি. পাড়ি দিয়ে নগরীর চাঁন্দগাঁও থানাধীন হাজেরা-তুজ কলেজে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। কিন্তু ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কেন আবার কেন্দ্র পরিবর্তন করে হয়রানি করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও শহর থেকে ৫০/৬০ কিমি. দূরে থাকাদের শহরে কোন আত্মীয় স্বজন না ধাকায় হোটেল কিংবা বোর্ডিংয়ে থাকতে হচ্ছে। এদিকে, নোয়াপাড়া কলেজের পরীক্ষার্থীদের ৩৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে নগরীর এমইএস ওমর গণি কলেজে পরীক্ষা দিতে হবে। হাটহাজারী কলেজের শিক্ষার্থীদের ৩০ কিমি, সন্দ্বীপের মোস্তাফিজুর রহমান কলেজ, সরকারী এবি কলেজ, আলহাজ মুস্তাফিজুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থীরা স্পীড বোট বা লঞ্চে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে নগরীর চট্টগ্রাম কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে হবে। তবে আকাশের অবস্থা যদি কিঞ্চিত খারাপও হয় তাহলে সন্দ্বীপের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে না। কারণ লঞ্চ ও স্পীডবোট সার্ভিস বন্ধ থাকবে। অথচ সন্দ্বীপের শিক্ষার্থীরা সেখানের যে কোন কলেজে পরীক্ষা দিতে পারত। আরও অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের ধারণা নেই দেশের কোন অঞ্চলের মানুষ কিভাবে জীবনযাপন করে। কারণ কক্সবাজারের মহেশখালী ও সন্দ্বীপের মানুষের জীবিকা দেশের অন্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন। আকাশের বা আবহাওয়া পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করেই স্পীডবোট বা লঞ্চ চলাচল করে। মহেশখালী ও সন্দ্বীপ থেকে লঞ্চে ২/৩ ঘণ্টা সময় লাগে সড়কপথে যাত্রা করতে। আর স্পীডবোটে পৌঁছাতে সময় লাগে ১০/১৫ মিনিট। মহাসড়কে আরও ২৫ কিমি. দূরে পৌঁছাতে সময় লাগবে কমপক্ষে সোয়া একঘণ্টা।
×