ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ৪ এপ্রিল ২০১৯

ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হুবহু কাস্টমস। তাদের সবার পরনে ফরম্যাল প্যান্ট ও সাদা শার্ট। কারও গলায় আবার টাই, কাঁধে র‌্যাঙ্ক ব্যাজ। চলেনও দামী গাড়িতে। বলতে পারেন ইংরেজীও। তাদের নকল কাস্টমস কর্মকর্তা ভাবার বিন্দুুমাত্র কারণ নেই। অথচ তারাই ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা। এভাবেই প্রতারণা করে আসছে তারা বছরের পর বছর ধরে। হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এমন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রকেই হাতেনাতে ধরেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার রাতে মিরপুর থেকে এ চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো মোঃ শেখ আলম (৪৩), ফিরোজ আলম (৫৭), মোশারফ (৫৪), মাসুদ রানা (৪৩), রেনু মিয়া ওরফে রনি (৩৮)। প্রতারক চক্রের প্রধান সহকারী কমিশনার পরিচয়দানকারী নুুরুল হক (৫৭)। তার নেতৃত্বেই বাকিরা রাজধানীতে গড়ে তোলে বিশেষ আস্তানা। দামী গাড়ি হাঁকিয়ে নিজের এ পরিচয়কে বিশ্বাসযোগ্য করেন তিনি। এছাড়া এ চক্রটি নিজেদের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে, শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীদের চাকরি দেয়া ও ব্যবসায়ীদের কাছে কম মূল্যে সোনাদানা বিক্রির নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিত। এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানিয়েছে- মাঠ পর্যায়ে তাদের দু’একজন সদস্য আছে। যারা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে টার্গেট ভিকটিম ও গ্রাহক চিহ্নিত করে। তারপর মানুষ অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণ করে প্রতারণা করে। প্রতারণার কৌশল হিসেবে প্রতারক চক্রটি শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীকে কাস্টমস অফিসার হিসেবে চাকরি দেয়ার লোভনীয় অফার দিত। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করত চক্রটি। একপর্যায়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক ভিকটিমদের বিশ্বাস অর্জনে নিরাপদ স্থানে কাস্টমস র‌্যাঙ্ক ব্যাজ, ইউনিফর্ম পরিহিত, দামী ব্র্যান্ডের গাড়িতে সাক্ষাত করে। টাকার অঙ্ক নির্ধারণ হওয়ার পর নিয়োগপত্র প্রদানের জন্য তারিখ নির্ধারণ করে। এরপর সুকৌশলে প্রতারক চক্রটি ভিকটিমের নিয়োগপত্র হস্তান্তর করার তারিখের আগেই মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য করে। টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর মোবাইল সিম বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায় চক্রের সদস্যরা। এক প্রশ্নের জবাবে আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, এ প্রতারক চক্র আরেকটি প্রতারণার কৌশল অবলম্বন করত। তারা বিভিন্ন দোকানি ও ব্যবসায়ীদের কাস্টমসে জব্দ স্বর্ণের বার, বিস্কুট, জাপানী পার্টস, কটন সুতা, গোল্ডেন সুতা, স্বর্ণের চেন, মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ ইত্যাদি কম মূল্যে বিক্রির অফার দেয়। এসব পণ্য সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে আমদানি করার কারণে কাস্টমস এগুলো জব্দ করেছে বলে তাদের প্রলোভন দেখায়। লোভনীয় অফারে প্রলুব্ধ হয়ে ক্রয় করতে আগ্রহী হন ব্যবসায়ীরা। পরে চক্রটি সুকৌশলে পণ্য প্রদানের নির্ধারিত তারিখ ঠিক করে এবং মূল্যের একটি অংশ অগ্রিম হিসেবে আদায় করে, ভুয়া চুক্তিনামা তৈরি করে।
×