ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ভর্তি

প্রকাশিত: ১১:০০, ২ এপ্রিল ২০১৯

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ভর্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তার চিকিৎসার জন্য নতুন মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়াকে কেবিন ব্লকের ৬২১নং কক্ষে রাখা হয়েছে। ৬২২নং কেবিনও তার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বেগম জিয়াকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে নাজিমুদ্দীন রোডের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের কেবিন ব্লকের কাছে কালো পাজেরো জীপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৪-২১২৭) করে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় সেখানে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মাহবুবুল হক ও অতিরিক্ত পরিচালক নাজমুল করিম উপস্থিত ছিলেন। এরপর কারা কর্তৃপক্ষের সদস্য ও চিকিৎসকরা তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হুইল চেয়ারে করে ছয়তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় খালেদা জিয়ার পরনে ছিল গোলাপী শাড়ি ও স্কার্ফ। একই গাড়িতে খালেদা জিয়ার পাশে বসা ছিল তার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম। ওই গাড়ির দরজা খোলার সময়ে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে ফাতেমা পাশে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের ওপর তার আস্থা রয়েছে বলে জানান বিএসএমএমইউ পরিচালক একেএম মাহবুবুল হক। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার হাতে ও পায়ের জয়েন্টে ব্যথা আছে। তার ডায়াবেটিসের মাত্রা কিছুটা বেশি। খাওয়ায় অরুচি আছে। ঘুমও কম হচ্ছে। তিনি নিজে হাঁটাচলা করতে পারেন না। অন্যের সাপোর্ট নিয়ে তাঁকে হাঁটতে হয়। এর আগে সকাল ১১টায় পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খালেদা জিয়ার মালামাল ও স্যুটকেসসহ আসবাবপত্র একটি ট্রাকে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এসব মালামালে একটি বেড, দুইটি স্যুটকেস, চেয়ার, প্লাস্টিকের ওয়ারড্রপ, ছোট একটি ফ্রিজ ইত্যাদি। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়ার ভর্তি উপলক্ষে আগ থেকে এর চারপাশে নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকাল ১০টা থেকেই কেবিন ব্লকের কাছে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। এদিকে দলীয় প্রধানকে হাসপাতালে নেয়ার খবরে সেখানে আগেই উপস্থিত হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার। কেবিন ব্লকের ২০০ গজ দূরে পুলিশী নিরাপত্তার বাইরে মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের নেতৃত্বে একদল নেতা-কর্মীকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সেøাগানও দিতে দেখা যায়। খালেদার চিকিৎসায় মেডিক্যাল বোর্ড গঠন ॥ এদিকে সোমবার দুপুরে খালেদাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তির পর চিকিৎসায় জন্য নতুন মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক জিলন মিয়া সরকারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। এই বোর্ডকে সহায়তার জন্য খালেদার দুজন ব্যক্তিগত চিকিৎসকও রয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালক বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের চিকিৎসার জন্য গঠিত আগের মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান আবদুল জলিল অবসরে যাওয়ায় তার চিকিৎসায় মেডিক্যাল বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। দুপুরে খালেদার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ব্রিফিংকালে (বিএসএমএমইউ)’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার হাতে ও পায়ের জয়েন্টে ব্যথা আছে। তাঁর ডায়াবেটিসের মাত্রা কিছুটা বেশি। খাওয়ায় অরুচি আছে। তাঁর ঘুমও কম হচ্ছে। তিনি নিজে হাঁটাচলা করতে পারেন না অন্যের সাপোর্ট নিয়ে তাঁকে হাঁটতে হয়। ভর্তির পর তাকে নতুন করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি। গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। চিকিৎসকরা তা দেখেছেন। চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করেছেন। খালেদা জিয়ার কাছে রোগের বিস্তারিত শুনেছেন। তারা সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। তাঁর ডায়াবেটিস আগেই ছিল। এটি বেড়েছে। খাবার পর র‌্যানডম ১৪ এসেছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসায় একজন চিকিৎসক প্রতিদিন নিয়োজিত থাকবেন। তিনি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেয়ার পাশাপাশি তাঁর অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দেবেন। খালেদা জিয়া মেডিক্যাল বোর্ড সদস্যদের সামনে বসে ভালভাবে কথা বলেছেন। মেডিক্যাল বোর্ডের কাছ থেকে সুন্দরভাবে চিকিৎসাপত্র নিয়েছেন। বোর্ডের প্রতি তার আস্থা আছে বলে উল্লেখ করেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও এমন কিছু পাইনি যার জন্য তাঁর বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। এখানেই সব চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। কবে তিনি এখান থেকে আবার কারাগারে ফিরে যাবেন জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, স্বাস্থ্যের উন্নতি হলে তিনি চলে যাবেন। এদিকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যালে ভর্তির পর সেখানে উপস্থিত দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়াকে ‘বিশেষায়িত’ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য দাবি করেন সাংবাদিকদের কাছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, শঙ্কিত। বার বার বলছি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অবশ্যই বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানো হোক। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে তার চিকিৎসা কিভাবে হবে। আশা করব সরকার চেষ্টা করবে এখানে যেন সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। একই সঙ্গে তার চিকিৎসার জন্য ভাল একটি পরিবেশ যেন তৈরি করা হয়। তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি, এখানে তাকে যেন এমনভাবে রাখা না হয় যাতে তিনি আবারও মনে করেন যে বন্দী অবস্থায় তার চিকিৎসা হচ্ছে। এ কথাটাই আমরা বার বার বলেছি, তাকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নেয়া হোক। এদিকে খালেদা চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কারণে সোমবার নির্ধারিত দিনে নাইকো দুর্নীতি মামলায় হাজির না করায় মামলাটির অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১০ এপ্রিল নতুন তারিখ ঘোষণা করেন বলে জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে গত বছরের ৭ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময় প্রায় এক মাস চিকিৎসা শেষে আবার তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়। তার অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী গত ১০ মার্চের শুরুতেই খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ পরে জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন রাজি না হওয়ায় তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে নেয়া যায়নি। পরে বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বঙ্গবন্ধ মেডিক্যালের ওপর খালেদা জিয়ার আস্থা নেই, তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চান। ১৯ মার্চ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুরনো কারাগারের অভ্যন্তরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে সেদিন বিএনপির মহাসচিব গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। আদালতে আসার আগে তিনি বমি করেছেন। মাথা সোজা রাখতে পারছেন না। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে সোমবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন। এরপর থেকে তিনবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া এই হাসপাতালে এসেছেন।
×