ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় দুই কলেজে দেড় শতাধিক ভুতুড়ে প্রবেশপত্র

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ২ এপ্রিল ২০১৯

বগুড়ায় দুই কলেজে দেড় শতাধিক ভুতুড়ে প্রবেশপত্র

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ সোমবার থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় এবার বগুড়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে (ভুতুড়ে) অতিরিক্ত প্রবেশ পত্র আসা নিয়ে নানা প্রশ্ন, তোলপাড় এবং রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। ফরম ফিলাপ না হলেও শিক্ষার্থীর নামে ভৌতিক প্রবেশ পত্র কলেজে চলে এসেছে আপনা আপনি। পরীক্ষার্থী সংখ্যার তুলনায় বোর্ড থেকে অতিরিক্ত প্রবেশ পত্র সংশ্লিষ্ট কলেজে আসার পর পরীক্ষা শুরুর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে বিষয়টি ধরা পড়ে। আর এ নিয়ে দেখা দেয়া নানা বিভ্রান্তি। বগুড়ার ২টি কলেজে এরকম ভৌতিক প্রবেশ পত্র আসার প্রমাণ মিলেছে। সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে বোর্ড অনুমোদিত আসন সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত ভর্তি ও ফরম ফিলাপ (পূরণ) করা শিক্ষার্থী। যারা বোর্ডের অনুমতি নিয়ে কলেজ পরিবর্তন করে (টিসি নিয়ে) অন্য কলেজ থেকে ফরম ফিলাপ করে পরীক্ষা দিচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এক শ্রেণীর কর্মচারী কর্মকর্তার যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী ফরম পূরণের আগে কলেজ পরিবর্তন করে ভর্তি ও ফরম পূরণ করায় কোন কোন কলেজের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর আসন সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করায় (টিসি নিয়ে) বগুড়া সরকারী শাহ সুলতান কলেজের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রের বারান্দায় পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বগুড়া সরকারী শাহ সুলতান কলেজে পরীক্ষার মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে অতিরিক্ত ৮০ প্রবেশ পত্র আসার বিষয়টি ধরা পড়ে। যাদের নামে এই প্রবেশ পত্র এসেছে তারা আবার ঠিকই শাহ সুলতান কলেজের ছাত্র। তবে নিয়মিত ও অনিয়মিত এই শিক্ষার্থীরা এবার কলেজ থেকে ফরম পূরণই করেননি বলে দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষের। এই কলেজের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র বগুড়া কলেজ। বগুড়া কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব মঈন উদ্দিন জানান, ১৮ মার্চ তাকে বোর্ড থেকে তার কেন্দ্রের প্রবেশ পত্র দেয়া হলে তিনি সংশ্লিষ্ট কলেজে পাঠিয়ে দেন। শাহ সুলতান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ এজাজুল হক জানান, প্রবেশ পত্র বিতরণের পর ৩০ মার্চ যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে অতিরিক্ত ৮০ প্রবেশ পত্র আসার বিষয় টের তারা টের পান। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের ১৯টি, মানবিকে ৩৯টি ও ব্যবসা শিক্ষার ২২টি অতিরিক্ত প্রবেশপত্র রয়েছে। ফরম পূরণের বাইরে অতিরিক্ত আসা প্রবেশ পত্র কলেজ কর্তৃপক্ষ বাতিলের জন্য ফেরত দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহীর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর ৩০ মার্চ চিঠি পাঠান। কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, যে ৮০ জনের অতিরিক্ত প্রবেশ পত্র এসেছে, তারা শাহ সুলতান কলেজের নিয়মিত ও অনিয়মিত ছাত্র। তবে এরা কেউই ফরম পূরণ করেননি বলে জানান। কিভাবে এই ভুতুড়ে প্রবেশ পত্র এলো সে বিষয়ে তিনি জানান, এটা বোর্ডই বলতে পারবে। এক্ষেত্রে তার দায় নেই। অপরদিকে বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজেও অতিরিক্ত ৭১ প্রবেশ পত্র এসেছে বলে জানিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শাজাহান আলী জানান, ৩০ মার্চ তিনি অতিরিক্ত প্রবেশ পত্র বোর্ডে ফেরত পাঠিয়েছেন। যে ৭১ জনের নামে প্রবেশ পত্র এসেছিলো তারা কেউই আজিজুল হক কলেজের ছাত্র নয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বোর্ডের ভুলে এটা হতে পারে। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফরম পূরণ ছাড়া প্রবেশ পত্র ইস্যু হওয়া সম্ভব না। বিষয়টি তিনি জানেন না। কিভাবে এটা হয়েছে এটা জেনে বলতে পারবেন। এদিকে অতিরিক্ত প্রবেশ পত্র আসার সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে আসন সংখ্যার বিপরীতে কলেজ থেকে অতিরিক্ত কলেজ পরিবর্তনের নামে কৌশলে অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করে ফরম পূরণ। বগুড়া সরকারী শাহ সুলতান কলেজে ফরম পূরণের নির্ধারিত তারিখের আগে অন্য কলেজ থেকে টিসি নিয়ে ভর্তি ও ফরম পূরণ করায় কলেজের পরীক্ষার্থী বেড়েছে অস্বাভাবিক। এই কলেজে ১৪শ’ আসনে বিপরীতে এবার (২০১৭-১৮ শিক্ষা বর্ষে) ৩ শতাধিক অতিরিক্ত ছাত্রর ভর্তি ও ফরম পূরণ হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছে, তারা শুধু অন্য কলেজ থেকে আসা ছাত্র ভর্তি করাননি তার কলেজের ছাত্রও অন্য কলেজে গিয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের আগে এই অস্বাভাবিক ভর্তির বিষয়ে তার দাবি, বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে বলেই তারা ভর্তি করেছেন আর এটি শুধু ফরম পূরণের আগে হয়নি, প্রথম বর্ষেও হয়েছিল। মাগুরা নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, সোমবার থেকে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় মাগুরা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসা শাখার ৫৭ পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র না আসায় তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। পরীক্ষার ফরম যশোর বোর্ডে না যাওয়ায় তাদের প্রবেশ পত্র কলেজে না আসায় এই পরীক্ষার্থীরা এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। তবে আদর্শ কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছেন এরা টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ না করে নেতাদের টাকা দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের চেষ্টা করেছিল। অভিযোগে প্রকাশ, মাগুরা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের বিজ্ঞান মানবিক ও ব্যবসা শাখার ৫৭ পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই নেতা ফরম ফিলাপ করে পরীক্ষা দেবার ব্যবস্থা করে দেবার কথা বলে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রবেশ পত্র কলেজে না আসায় এই পরীক্ষাথীরা এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। মাগুরা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সূর্যকান্ত বিশ্বাস জানান, মাগুরা আদর্শ কলেজের টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা কিছু পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের ফরম ফিলাপের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ নেয় কথা বলে কয়েকজন টাকা নিয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি জানাতেন না। ১৫/২০ পরীক্ষার্থী তাদের কাছে এসে এ ঘটনা বলেছে। তাদের প্রবেশ পত্র আসেনি। কলেজের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা টাকা নিয়েছে। এটা অন্যায়। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের শায়েস্তা করা হবে।
×