ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘুষের ভিডিও ফাঁসের হুমকিতে শিক্ষকদের বদলিতে স্বাক্ষর

প্রকাশিত: ০৯:১০, ৩০ মার্চ ২০১৯

 ঘুষের ভিডিও ফাঁসের  হুমকিতে শিক্ষকদের  বদলিতে স্বাক্ষর

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ২৯ মার্চ ॥ সরকারী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের বদলির জন্য ঘুষ নেয়ার ভিডিও ফুটেজ ফাঁসের ভয় দেখিয়ে শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বাসা থেকে সুজানগর উপজেলার অন্তত ৩২ শিক্ষকের বদলির ফাইলে স্বাক্ষর আদায় করা হয়। শিক্ষকদের বদলির জন্য টাকা দেয়ার পরও তাদের কাজ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এরপর কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শিক্ষক জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানালে তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। অভিযোগ দিলে তাদের চাকরির সমস্যা হবে কি না এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয়। এরপর শিক্ষকরা শিক্ষা অফিসের ক্লার্ক আসাদুজ্জামানকে ব্যাপক চাপ সৃষ্টির একপর্যায়ে বদলির জন্য টাকা নেয়ার মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও চিত্র দেখিয়ে তা ফাঁসের হুমকি দেয়। এতে আসাদুজ্জামান ভীতসন্ত্রস্ত হন। তিনি রাত ১০টায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বাসা থেকে বদলির ফাইল স্বাক্ষর করান। শিক্ষা অফিসের একটি সিন্ডিকেট শিক্ষকদের বদলির শেষদিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার ৯টি উপজেলার সরকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিতে ২০ লাখ টাকারও অধিক আদায় করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। জানা গেছে, জেলায় এবার শুন্যপদসহ রেকর্ড পরিমাণ শিক্ষকদের বদলির সুযোগ সৃষ্টি হয়। ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বদলির সরকারী নিয়ম থাকায় ৯ উপজেলার বিপুলসংখ্যক শিক্ষক বদলির আবেদন করে। আর এ শিক্ষকদের টার্গেট করে শিক্ষা অফিসের ক্লার্ক আসাদুজ্জমানসহ কয়েক কর্মকর্তা বদলি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে প্রতি উপজেলার ২-৩ জন শিক্ষককে এ টাকা তুলে জমা দিতে বলা হয়। এভাবে ৯ উপজেলার শিক্ষকদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকারও অধিক টাকা আদায় করেন। সুজানগর উপজেলার শিক্ষকদের কাছ থেকে এভাবে টাকা তুলে শিক্ষা অফিসের ক্লার্ক আসাদুজ্জামানের হাতে তুলে দেয়া হয়। বদলির শেষদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিক্ষকরা অপেক্ষার পর জানতে পারেন ক্লাক এ টাকা একাই নেয়ায় ডিপিও বদলির ফাইল স্বাক্ষর না করে অফিস থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শিক্ষক জেলা প্রশাসককে ঘটনা জানায়। রাত ৮টার দিকে কয়েকজন শিক্ষক ওই ক্লার্ক আসাদুজ্জামানকে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। এর মধ্যে এক শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে তার টাকা নেয়ার কথোপকথন ও ভিডিও ফুটেজ দেখালে সে ভয় পেয়ে যায়। শিক্ষকরা তাকে নিয়ে একপর্যায়ে ডিপিও খন্দকার মোনছুর রহমানের রবিউল মার্কেটের এ্যাপার্টমেন্টের বাসার সামনের এক বিউটি পার্লারের নিচে দাঁড়িয়ে জটলা করতে থাকে। গোপন খবর পেয়ে এ প্রতিবেদক শিক্ষা অফিসের ক্লার্ক আসাদুজ্জামান ও শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করে ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারেন। ক্লার্ক আসাদুজ্জামানকে এ প্রতিবেদক জিজ্ঞাসা করলে সে ঘাবড়ে যায়। অনেক টানা পোড়েন শেষে রাত ১০টায় ডিপিও বাসায় বসে বদলির ফাইল স্বাক্ষর করলে শিক্ষকরা বাড়ি ফিরে যায়। এ বিষয়ে থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মিনা পারভিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শিক্ষকদের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে কিন্তু টাকার বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার মোনছুর রহমানের সঙ্গে বার বার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
×