ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাটসুতার আন্তর্জাতিক বাজার উদ্বেগজনক

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ২৯ মার্চ ২০১৯

 পাটসুতার আন্তর্জাতিক বাজার উদ্বেগজনক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পাটসুতার আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি ভীষণভাবে উদ্বেগজনক। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্বির কারণে পাট পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বাধা হতে পারে। ফলে বাংলাদেশের পাট পণ্যের রফতানিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশ জুট স্পীনার্স এসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভায় এ আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংগঠনের কার্যালয়ে এ আশংকা প্রকাশ করা হয়। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাটকে পছন্দ করেন। তাই পাট শিল্পের উদ্যোক্তাদের আরও গতিশীল হতে হবে। এ ব্যাপারে পাট মন্ত্রণালয় সব ধরণের সহযোগিতা দেবেন। বাংলাদেশ জুট স্পীনার্স এসোসিয়েশনের ৪০তম বার্ষিক সাধারণ সভাপতিত্ব করেন এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ্জাহান। বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি বলেন. আমাদের সকলের একান্ত পচেষ্টা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে পাটসুতা শিল্প খাত দেশের অর্থনীতিতে আজ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমান পাটপণ্য রপ্তানি হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশই পাটসুতা। এর জন্য আমরা গর্বিত। আমরা সকলেই অবগত বর্তমানে পাটসুতার আন্তর্জাতিক বাজার বেশ মন্দাভাব এবং সংকটের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরনে সকল সদস্য প্রতিষ্ঠানকে ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের সকলকে পণ্য বিক্রয়ে পণ্যের যথাযথ উৎপাদন ব্যয় নির্ধারনে বিশেষ মনোযোগি হতে হবে। তিনি আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের মোট পাট সুতা রফতানির মধ্যে তুরষ্কে পাটসুতা রফতানি হয় ৩৬.১৭ শতাংশ, যা পরিমানে ২.০২ লক্ষ মেট্রিক টন, চীনে ১৫.৭ শতাংশ, যা পরিমানে ৮৪ হাজার টন এবং ভারতে ১৩.৫০ শতাংশ, যা পরিমানে ৭৫ হাজার টন, ইরানে ৫.৮৫ শতাংশ, যা পরিমানে ৩৩ হাজার টন রপ্তানি হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে পাটসুতার প্রধানতম বাজার তুরষ্ক প্রচন্ড ভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে গত এক বছরে তুরষ্কের মুদ্রার মান প্রায় ৪০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হওয়ার কারনে আমদানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। উন্নত বিশ্বের সংকোচনমূলক আর্থিক নীতি, ডলার সহ বিভিন্ন মুদ্রামানে অস্থিরতা সামনের দিনগুলোতে বাণিজ্যের গতিকে স্লথ করে দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্বির কারনে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধা হতে পারে। এ ছাড়া চীন মার্কিন পাল্টা পাল্টি শুল্ক আরোপের পর নীতি নির্ধারকরা বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা ভাবনা করছেন এবং এই সমস্ত কারনে পাটপণ্য রপ্তানি বাণিজ্যে প্রচন্ড নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, তুরষ্কের পর চীনের পাটসুতার বাজার ও নানা কারনে কোনঠাসা। চীনে সাধারণত নিম্ন মানের পাটসুতা রপ্তানি হয়ে থাকে। চীনের অর্থনীতিও নানা কারনে বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরপর ভারতে পাটসুতার বাজার ভারত কর্তৃক বাংলাদেশ হতে পাটপণ্যের আমদানির বিপরীতে এন্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপের ফলে এ বাজারও সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। বিদায়ী চেয়ারম্যান আরও বলেন, বর্তমানে ইরানের অর্থনীতি ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাণিজ্যে অবরোধ আরোপের কারনে পরিস্থিতি নাক্কারজনক। ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্য্যয়ের কারনে রপ্তানি মূল্য প্রত্যর্পনের বা আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। এ কারনে ইরানে পাটসুতা রপ্তানি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে চলেছে। পাটসুতার আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি ভীষণভাবে উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, তুরষ্ক বিশ্বের অন্যতম কাপের্ট উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশ, যার অবস্থান চীনের পরে। বিশ্বে কার্পেট ব্যবসা হয় ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখানে তুরষ্কের অংশ মোট বাজারের ৩৮.৬ শতাংশ, তুরষ্কের সর্ব বৃহৎ বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তুরষ্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কার্পেট রপ্তানি করে আয় করে ৫১৬ মিলিয়ন ডলার, সৌদি আরবে ২৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ইরাকে ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, জার্মানীতে ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও যুক্তরাজ্যে ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশের পাটশিল্প তাদের উৎপাদিত পাটপণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ রপ্তানি বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল। বর্তমান বছরে পাটসুতার রপ্তানি বাণিজ্য চরম সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে, যা আগে কখনও পরিলক্ষিত হয়নি। সম্প্রতি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময় চেয়ে প্রায় ২৪.৬৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বাংলাদেশ জুট স্পীনার্স এসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) আওতাভূক্ত মিল সমূহের পাটসুতা রপ্তানির পরিমান ছিল ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৩৫৮ টন। এ সময়ে আয় হয়েছে ৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। পূর্ববর্তী বছরে এই রপ্তানির পরিমান ছিল ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন এবং আয় ছিল ৪ হাজর ৩৮১ কোটি টাকা, যা পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছিল ১.৩৬ শতাংশ এবং আয় বৃদ্ধি পেয়েছিল ৬.১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) মিল সমূহের গত অর্থ বৎসরে মোট পাটপণ্য রপ্তানির পরিমান ছিল ৮৬ হাজার ৬৭৬ টন এবং আয়ের পরিমান ছিল ৮৩৫ কোটি টাকা। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে তাদের রপ্তানির পরিমান ছিল ৮৭ হাজার ৭৯২ টন এবং আয় হয়েছিল ৭৮৫ কোটি টাকা।
×