ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আটক এক জঙ্গীর চিঠি গোয়েন্দাদের হস্তগত

জঙ্গীরা আবার নাশকতার ছক কষছে, টার্গেট স্পর্শকাতর স্থান, স্থাপনা

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ৯ মার্চ ২০১৯

 জঙ্গীরা আবার নাশকতার ছক কষছে, টার্গেট স্পর্শকাতর স্থান, স্থাপনা

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশে গত দুই মাস ধরে নাশকতা ও জঙ্গী হামলার ছক কষে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (পুরনো জেএমবি), নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের জঙ্গীদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। কারাগারে বন্দী জঙ্গীদের ছিনিয়ে নেয়ার উদ্দেশে ছিনতাই, ডাকাতিতে মাঠে নেমেছে জঙ্গীরা। বেশ কয়েক আত্মঘাতী সদস্যকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য মিলেছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে এই ধরনের তথ্য পাওয়ার পর জিরো টলারেন্স নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জঙ্গীবিরোধী অভিযান জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে নাশকতা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ছক কষেছিল জঙ্গী সংগঠনগুলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে নির্বাচনের সময়ে তৎপরতা ভেস্তে গেছে। দেশে আবার যাতে জঙ্গীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য পলাতক জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত দুই মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালানোর পর রংপুরে উত্তরাঞ্চলের জেএমবি প্রধান সমন্বয়কসহ ৪ জঙ্গী ও বরগুনায় ২ জঙ্গী, রাজধানীর আশপাশের এলাকা থেকে আরও চৌদ্দসহ ২০ জঙ্গীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আটক জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পলাতক জঙ্গীদের সংগঠিত হওয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (পুরনো জেএমবি), নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের জঙ্গীদের নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ওরা গোপনে নতুন সদস্য সংগ্রহ, তহবিল সংগ্রহ, প্রচার ও টার্গেট নির্ধারণে কাজ করছে জঙ্গীরা। এই ধরনের তথ্য পাওয়ার পর নতুন করে সংগঠিত জঙ্গীদের বিষয়ে নতুন করে সতর্ক নজরদারি শুরু করেছে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। গোয়েন্দা সূত্র মতে, সারাদেশে জঙ্গী বিরোধী অভিযান জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত দুই দিনে রংপুর ও বরিশালে জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনায় যেসব জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াও তাদের কাছ থেকে বিদেশী পিস্তল, বিদেশী রিভলবার, ম্যাগজিন, তাজা গুলি এবং বিপুল উগ্রবাদী বই ও লিফলেট উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গীদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলকে অবহিত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে পুলিশের ওপর হামলা মোকাবেলায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে জঙ্গীদের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জঙ্গীরা আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, সদর দফতর থেকে প্রতি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবং ইউনিটকে জঙ্গী নাশকতার বিষয়ে সতর্ক থাকার বার্তা দেয়া হয়েছে। জঙ্গীদের টার্গেটের মধ্যে পুলিশ ও পুলিশের স্থাপনাসহ স্পর্শকাতর স্থান ও ভিআইপি ব্যক্তিরা রয়েছেন। নির্দেশনার পর পুলিশ সতর্কতা বাড়িয়েছে। রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি জেলায় অভিযান চালিয়ে জেএমবি, নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। জঙ্গীপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত বগুড়ার বাঘোপাড়া বাজার এলাকা থেকে জেএমবির রাজশাহী অঞ্চলের নেতা রফিকুল ইসলাম ওরফে রাকিব, আবু বক্কর ওরফে সীমান্ত ও ইব্রাহিম ওরফে আবিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবিরের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উদ্দেশে এক জঙ্গীর হাতে লেখা পাঁচ পৃষ্ঠার পৃথক দুটি চিঠি। ওই চিঠি জেএমবির শীর্ষ আমির সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে দাদা ভাইয়ের উদ্দেশে লেখা। চিঠিটি জঙ্গীনেতা ইয়ামিন ওরফে শহীদুল্লাহর মাধ্যমে সালেহীনের কাছে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে চিঠিটি পৌঁছানোর আগেই তা গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে। কারাগারে বসে লিখেছেন ‘সজল’ (ছদ্মনাম) নামে এক জঙ্গী। চিঠিতে সজল লিখেছে, এ্যামুনেশন সংগ্রহে তৎপর হওয়া দরকার। বিভিন্ন রকম সহিংসতা হবে। এই সুযোগ কাজে লাগানো দরকার। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গী সংগঠনগুলোর গোপন জঙ্গী তৎপরতায় নাশকতা ও সহিংসতার যে ছক কষেছিল তার আগাম তথ্য ভেস্তে যায়।
×