ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:১২, ১ মার্চ ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ হঠাৎ বৃষ্টি তো একেই বলে। শুধু কি হঠাৎ? বসন্তে বর্ষার চেহারা দেখা যাচ্ছে। কথা নেই বার্তা নেই, কাঁদতে শুরু করেছে আকাশ। গত কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। বাদ যায়নি ঢাকাও। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ভিজে একাকার। বুধবার সন্ধ্যায় নামা বৃষ্টি তো বেজায় ভুগিয়েছে। একেবারে বিকেল থেকেই মুখ ভার করে ছিল আকাশ। দিনের চেহারাটা আর দেখতে দেয়নি। বহু মানুষ এখানে ওখানে আটকা পড়েছিলেন। বৃষ্টি একটু থামলে বের হবেন। সে আর হয়নি। পুরোটা ভিজে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এদিকে, ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কে আগে থেকেই চলছিল খোড়াখুড়ি। ইয়া বড় গর্তের পাশ দিয়ে সতর্ক পায়ে হাঁটতে হচ্ছিল। ভারি বর্ষণে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। প্রধান প্রধান সড়কের পাশে যেন নদী নালা খাল বিল বয়ে চলেছিল। জলজট সৃষ্টি হয়েছিল নিচু এলাকাগুলোতে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বৃষ্টি থামলে জলজটের পাশাপাশি দেখা দেয় ভয়াবহ যানজট। বৃহস্পতিবার রাতেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। দিনের বেলায় সূর্য দেখা গেছে সামান্য সময়ের জন্য। সব মিলিয়ে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে। তবে এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি মন খারাপ বইপ্রেমীদের। অমর একুশে গ্রন্থমেলার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে বড় হোঁচট খেয়েছে আয়োজনটি। কী যে প্রিয় এক একটি বই, ভিজে ফুলে ফেঁপে বিকৃত হয়ে গেছে। আয়োজনের ২৭তম দিনে আর চালিয়ে যাওয়ার সম্ভব হয়নি। বেলা ৩টায় শুরু হয়ে রাত ৯টায় শেষ হওয়ার কথা। তার অনেক আগে সন্ধ্যা ৬টায় মেলা বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় আয়োজক বাংলা একাডেমি। এর আগে বৃষ্টি থামার আশায় ছিলেন লেখক পাঠক প্রকাশকেরা। অনেকে প্যাভিলিয়নে বসে গল্প আড্ডা জমিয়েছিলেন। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে ভেতরেও পানি চলে আসে। গতি বাড়তে থাকে ঝড়ো হাওয়ার। বই বাঁচাতে স্টল ও প্যাভিলিয়ন গুটিয়ে ফেলেন প্রকাশকরা। পাঠকেরাও মেলা প্রঙ্গণ ছাড়তে শুরু করে। আশা ছিল শেষ দিনে বৃহস্পতিবার রোদের দেখা মিলবে। দুপুরের দিকে কিছু সময়ের জন্য সূর্য উঁকি দিয়েছিল। পরে আবার মেঘ গুড় গুড়। আবার দোলাচল। এ অবস্থায় বিকেল ৩টায় শুরু হয় সমাপনী দিনের আয়োজন। এ সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে মন সত্যি খারাপ হয়ে যায়। একটা বিধ্বস্ত চেহারা পায় মেলা। উদ্যানের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে ছিল। অনেকদিন ধরে দেখা সাজানো গোছানো স্টল ও প্যাভিলিয়ন। এদিন আর যেন চেনা যাচ্ছিল না। বিবর্ণ অবস্থা। এ অবস্থার মধ্যেই বই সাজিয়ে পাঠকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন স্টলের কর্মীরা। বইপ্রেমীরাও চলে এসেছিলেন আগেভাগে। শেষ দিনের মেলা। বই সংগ্রহে মন ছিল সবার। এর বাইরে লেখক পাঠক প্রকাশকেরা একে অন্যের বিদায়ী সাক্ষাত করেছেন। কবি ও জার্নিম্যান বুকসের কর্ণধার তারিক সুজাত বলছিলেন, এক মাসের মেলায় কত প্রিয় মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে। গল্প আড্ডা হয়েছে। এটা তো অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাইরে কোথাও সম্ভব হয় না। তাই বেশ খারাপ লাগছে। তবে মেলার বহুবিধ অর্জন আছে। এগুলোকে কাজে লাগানোর উপর ভবিষ্যত সাফল্য নির্ভর করে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কোন কোন প্রকাশক অবশ্য মেলা আরও দু’একদিন বাড়ানোর দাবি তুলে ছিলেন। বৃষ্টির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এমন দাবি তুলেন তারা। এ প্রসঙ্গে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তা¤্রলিপির কর্ণধার তরিকুল ইসলাম রনি বলছিলেন, মেলার শেষ দুই দিনে সবচেয়ে বেশি বই সংগ্রহ করেন পাঠক। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এটি বিঘিœত হয়েছে। এ কারণে মেলা দু’ একদিন বাড়ানোর কথা বলেছিলাম আমরা। অবশ্য একুশের মেলাকে মার্চে নিয়ে যাওয়ার বিড়ম্বনা অনেক। সেদিকে যেতে চায়নি বাংলা একাডেমি। ভাষার মাসের শেষ দিনে এসে এবার আনুষ্ঠানিক সমাপনীর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বই মেলা আরও দুই বাড়ানো সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিন, মেলা মঞ্চে ছিল নানা আনুষ্ঠানিকতা। সমাপনী অনুষ্ঠানে মেলার উপর তথ্যবহুল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ -এর সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল। বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠানে নির্মলেন্দু গুণকে কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রদান করা হয় চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার। পরে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
×