ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৭ বছর ধরে মগবাজার সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের ভাড়া পায় না ডিএসসিসি

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

  ৭ বছর ধরে মগবাজার সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের ভাড়া পায় না ডিএসসিসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ৬ বছর ৮ মাস (৮০ মাস) ধরে মগবাজার সিটি কর্পোরেশন মার্কেট থেকে ভাড়া পাচ্ছে না ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। সিটি কর্পোরেশন বলছে, মার্কেট নির্মাণে উদ্যোগী সংস্থার সঙ্গে অসম চুক্তি ও মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় প্রভাবশালী একটি মহল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভাড়া তুলছে। বেশ কয়েকটি দোকানও তারা দখলে রেখেছে। ডিএসসিসির এক নিজস্ব প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে ২৫টি দোকান বরাদ্দপত্রসহ তৎকালীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে এ জায়গাটি হস্তান্তর করে গণপূর্ত অধিদফতর। ওই সময় জায়গার পরিমাণ ছিল ১৫.৬১ কাঠা। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আরও ৮ ব্যক্তিকে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়াদের কয়েকজন এরই মধ্যে মারাও গেছেন। পরবর্তীতে এই মার্কেটে একটি আধুনিক বহুতল মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। এজন্য ২০০৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মাসুদ কর্পোরেশন নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেন ডিএসসিসির তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। চুক্তি অনুযায়ী মার্কেটর ৭৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এবং বাকি মাত্র ২৫ শতাংশ ডিএসসিসির। এই চুক্তি সম্পাদনকালে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়ার বিধান থাকলেও তা নেয়া হয়নি। আর এই চুক্তিকে বর্তমান কর্মকর্তারা অসম চুক্তি বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, মগবাজারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেখানে সিটি কর্পোরেশনের থাকার কথা ৭৫ শতাংশ সেখানে উদ্যোগী কোম্পানিকেই দেয়া হয়েছে ৭৫ শতাংশ। যা সিটি কর্পোরেশনের জন্য ক্ষতিকর। এদিকে ২০০৭ সালের ২৫ এপ্রিল ডিএমপির তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার স্থানীয় সরকারের একজন উপদেষ্টাকে বরাত দিয়ে সড়কের জন্য ভবনের সামনের কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে ভবনটির সামনের দিক থেকে ৫ ফুট অংশ ভেঙ্গে ফেলায় সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির তুলনায় এক হাজার বর্গফুট কম নির্মিত হয়। ১৫.৬১ কাঠার মধ্যে বাকি ৮.৮৩ কাঠায় ভবনটি নির্মাণ করা হয়। সড়কের জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়ায় সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ডিএসসিসির শেয়ার বুঝে নেয়ার বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি অসম চুক্তি দাবি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া বর্তমান কর্তৃপক্ষ এর দায়িত্ব বুঝে নিতে চায় না। আবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও এই অসম চুক্তির বিষয়ে অনুমোদন দিচ্ছে না। সম্প্রতি মার্কেটটির বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে মার্কেটটির লিফটসহ অন্য ইউটিলিটি সার্ভিস প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহা করা প্রয়োজন। উদ্যোগী সংস্থার সঙ্গে চুক্তিটি আগে সরকারের অনুমোদন না নেয়া হলেও পরে বিষয়টি অনুমোদন দেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় সেটি অনুমোদন করেনি। পরবর্তীতে উদ্যোগী প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে একটি রিট করে। রিটের বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ডিএসসিসি থেকে মন্ত্রণালয়কে আরও একটি চিঠি দেয়া হয়। পরে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আদালতের রায় ও এ সংক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি মামলার বিস্তারিত তথ্যসহ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠোতে সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট আইন বিভাগ থেকে এখন পর্যন্ত কোন তথ্য সরবরাহ না করায় মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রমনা থানার ঠিক উল্টা দিকে ৬তলা বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক দোকান রয়েছে। দোকানটির নিচ ও দ্বিতীয় তলার কয়েকটি রুম হোটেল ও স্টেশনারি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় তলার কিছু কিছু দোকানসহ তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলার সবকটি দোকানের ভেতরে বিভিন্ন দোকান মালিকদের মালামাল থাকলেও বাইরে থেকে সিলগালা করা তালা ঝুলছে। নিচতলার একটি রুম স্থানীয় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা গেছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এই মার্কেটে দোকান বরাদ্দ পাওয়া আরীফ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘সরকারের সব ফি দিয়ে তৎকালীন পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এই মার্কেটে একটি দোকান বরাদ্দ পেয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার দখল বুঝে পাচ্ছি না। জানিনা জীবিত থাকা অবস্থায় সেটা বুঝে পাই কিনা।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘মার্কেটটি নিয়ে উদ্যোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটা সমস্যা দেখা দেয়। পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন এ মার্কেট থেকে গত ৮০ মাস ধরে কোন ভাড়া পাচ্ছে না। আমার প্রতিবেদনে বিষয়টি নিয়ে কী করা যায় সে বিষয়ে মন্তব্য লিখেছি।’ ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসূফ আলী সরদার বলেন, ‘আমরা এখনও মার্কেটটি বুঝে পাইনি। মার্কেটটির চুক্তিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। সে কারণে এ থেকে কোন ভাড়াও পাচ্ছি না। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বুঝে নিলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’
×