ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার হলে পাঠানোর চিন্তা

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার হলে পাঠানোর চিন্তা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কিছু বাম সংগঠন ও ছাত্রদলের তোলা ‘নিরাপত্তাহীনতা’র অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ডাকসু নির্বাচনের দিন সকালে ব্যালট পেপার আসাসিক হলে অবস্থিত কেন্দ্রে পাঠানোর চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর দিন মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিজেদের ভাবনার কথা জানিয়েছন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান। এদিকে তফসিল ঘোষণার পর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মোট ভোটার সংখ্যা ৪৩ হাজার ১ জন। ছাত্রলীগ নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুসারে হলেই কেন্দ্র রাখার পক্ষে। ঘোষিত তফসিলেও তাই বলা আছে। তবে ছাত্রদল ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো হলে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতা করছে। ভোট কেন্দ্র হল থেকে একাডেমিক ভবনে আনার দাবি জানিয়ে ক্যাম্পাসে গণস্বাক্ষর অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে প্রগতিশীল ছাত্র জোটভুক্ত সংগঠন ছাত্র ফেডারেশন। হলে কেন্দ্র হলে ভোটের আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভর্তি করার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের বক্তব্যও একই। এমন এক পরিস্থিতিতে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, এই প্রস্তাবটা আমরা গ্রহণ করলাম। আমরা বিষয়টা নির্দিষ্ট করার জন্যই তো আলোচনাগুলো করেছি সবার সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা শিক্ষার্থী তারা নির্বিঘেœই হলে যাওয়া-আসা করছেন, যাদের হলের অফিসে কাজ থাকে, তারা সেখানে যাচ্ছে। আমাদের কাজ হচ্ছে সকল ভোটার যাতে নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে ধরনের পরিবেশটা তৈরি করা। একাডেমিক ভবনে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য আমাদের একটা গঠনতন্ত্র দেয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুসারেই নির্বাচন হবে। গঠনতন্ত্র সিন্ডিকেট পাস করেছে। সেখানে ভোট কেন্দ্র হলেই রাখা হয়েছে। আমরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার কাজটুকু শুধু করব। রেওয়াজ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই নির্বাচন পরিচালনা ও নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখভাল করবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটা সেনসিটিভ জায়গা। এটা পুলিশ কর্তৃপক্ষ যেমন জানে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও জানে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া তো পুলিশ হলে প্রবেশ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে যে পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন আছে তবে তারা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে কর্তৃত্বমূলক ভূমিকায় তারা যেতে পারবে না। ক্লাসরুমে প্রচার চালাতে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, আচরণবিধি তৈরির সময় অনুষদের ডিনরা এবং বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানরা এ বিষয়ে নিজেদের আপত্তি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ক্যাম্পেন তো হবে হল পর্যায়ে। কেউ চাইলে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বাইরেও সভা-সমাবেশ করতে পারবে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রাখতে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। এই সমস্যাটা এক দুই দিনের না, এটা দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে। এই সংস্কৃতিটা পরিবর্তনের দিকে আমাদের যেতে হবে। কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সেগুলোকে মেনে নিয়ে পরিবেশটা যাতে ঠিক থাকে আমাদের সেদিকে যেতে হবে। ভোটার ৪৩ হাজার ১ জন ॥ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মোট ভোটার সংখ্যা ৪৩ হাজার ১ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের নোটিস বোর্ড ও ডাকসুর ওয়েবসাইটে (ফঁপংঁ.ফঁ.ধপ.নফ) এই ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকায় দেখা যায়, সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৯৮৪ জন ভোটার রয়েছেন শামসুন নাহার হলে। আর সর্বনিম্ন ভোটার অমর একুশে হলে ১ হাজার ৪০৬ জন। ভোটার তালিকা অনুযায়ী, মেয়েদের হলগুলোর মধ্যে রোকেয়া হলে ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ৭১৮ জন, শামসুন নাহার হলে তিন হাজার ৯৮৪ জন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে দুই হাজার ২৫২ জন, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে এক হাজার ৯৬৯ জন ও কবি সুফিয়া কামাল হলে তিন হাজার ৪৬০ জন। ছেলেদের হলগুলোর মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ১৯৪ জন, জগন্নাথ হলে দুই হাজার ৫৫৯ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে দুই হাজার ৪৬৫ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে এক হাজার ৪৬২ জন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে এক হাজার ৮৮৪ জন, সূর্যসেন হলে এক হাজার ৯০৭ জন, বিজয় একাত্তর হলে তিন হাজার ২৫২ জন, কবি জসিমউদ্দীন হলে এক হাজার ৫৪৭ জন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে দুই হাজার ৬৫০ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে দুই হাজার ৯০ জন, ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে দুই হাজার ১৬ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে দুই হাজার ১৮৬ জন ও অমর একুশে হলে এক হাজার ৪০৬ জন। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন সামনে রেখে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটার তালিকায় ভুলত্রুটি সংশোধনের আপত্তি গৃহীত হবে। লিখিত আপত্তি সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং অফিসার বরাবর দাখিল করতে হবে। ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টায় হলের নোটিস বোর্ড ও ডাকসু ওয়েবসাইটে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
×