ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম আবাহনীর রোমাঞ্চকর জয়

প্রকাশিত: ১০:০৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

চট্টগ্রাম আবাহনীর রোমাঞ্চকর জয়

রুমেল খান ॥ একদিকে ৭০ বছর বয়সী দু’বারের লীগ চ্যাম্পিয়ন ব্রাদার্স ইউনিয়ন। অন্যদিকে ৪৭ বছর বয়সী এবং কখনও লীগ শিরোপা না জেতা (একবার রানার্সআপ, একবার তৃতীয় স্থান) চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে দু’দলই শুক্রবার মুখোমুখি হওয়ার আগ পর্যন্ত ছিল একেবারে পিঠাপিঠি অবস্থানে। তবে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দু’দলের মধ্যে খেলা শেষ হওয়ার পর প্রতিপক্ষের সঙ্গে নিজেদের ব্যবধানটা আরেকটু বাড়িয়ে লাভবান হয়েছে চট্টলার দলটিই। তারা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও রোমাঞ্চকর ম্যাচে ৩-২ গোলে হারিয়েছে ব্রাদার্সকে। যদিও খেলার প্রথমার্ধের স্কোরলাইন ছিল ১-১। নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে এটা চট্টগ্রাম আবাহনীর দ্বিতীয় জয়। ১১ পয়েন্ট তাদের। দুই ধাপ উন্নতিতে পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবস্থান এখন ষষ্ঠ। পক্ষান্তরে চতুর্থ ম্যাচে এটা ব্রাদার্সের তৃতীয় হার। এক জয়ে তাদের পয়েন্ট ৩। অবস্থান আগের মতোই নবম। খেলার শুরুতে দু’দলই খেলে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। ১২ মিনিটে সৌভাগ্যপ্রসূত গোল পেয়ে এগিয়ে যায় ‘বন্দরনগরীর দল খ্যাত’ চট্টগ্রাম আবাহনী। কর্নার পায় তারা। মিডফিল্ডার কৌশিক বড়ুয়া কর্নার করেন। কর্নারের সেই উড়ন্ত বল বিপদমুক্ত করতে লাফিয়ে হেড করেন ব্রাদার্সের মিডফিল্ডার শফিকুর ইসলাম শফি। কিন্তু তার নেয়া হেডের বলটি দুভাগ্যবশত নিজেদের জালেই ঢুকে পড়লে হতভম্ব হয়ে পড়ে ‘দ্য অরেঞ্জ ব্রিগেড’ খ্যাত গোপীবাগের দল ব্রাদার্স। আর গোল উপহার পেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে আবাহনী শিবির (১-০)। ৩৩ মিনিটে সমতায় ফেরে ব্রাদার্স। আবাহনীর সীমানায় ফ্রি কিক পায় তারা। ডিফেন্ডার খান মোঃ তারা উঁচু সেন্টার ফেলেন আবাহনীর বক্সের ভেতরে। সেখানে জটলার মধ্যে বল বিপদমুক্ত করতে দৌড়ে সামনে এগিয়ে এসে বল পাঞ্চ করতে যান গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল। কিন্তু তার আগেই লাফিয়ে উঠে হেড করেন ব্রাদার্সের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিয়েরা লিমা লিওনার্দো। তার নেয়া হেড গোল লাইন অতিক্রম করার ঠিক আগ মুহূর্তেই দৌড়ে গিয়ে তাতে পা চালিয়ে বল জালে পাঠান ব্রাদার্সের মিডফিল্ডার মান্নাফ রাব্বি (১-১)। আরেকজনের গোল ‘ছিনতাই’ করেছেন বলেই হয়তো রাব্বি কোন গোল-উদযাপন করেননি। ছিলেন নির্বিকার। তবে যিনি গোলবঞ্চিত হয়েছেন সেই ভিয়েরা কিন্তু উচ্ছ্বাসই প্রকাশ করেন। দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরুর ৪০ মিনিটের মধ্যেই (৪৬ মিনিটে) আবার গোল করে লিড নেয় চট্টলার দলটি। নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড উগোচুকউ আওয়ালা মাগালানের লম্বা থ্রু পাস পেয়ে বক্সের ভেতরে ঢুকে দুর্দান্তভাবে ফিনিশ করেন গাম্বিয়ান মিডফিল্ডার মমোদৌও বাও (২-১)। ৫৬ মিনিটে আবারও গোলের দেখা পায় আবাহনী। এক সতীর্থের কাছ থেকে লম্বা পাস পেয়ে মাগালান সেই বল পাস দেন আরেক সতীর্থ মিডফিল্ডার শাহেদ হোসেনকে। ডানপ্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে শাহেদ সেই বল ক্রস করেন। তাতে পায়ের সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা করেন মাগালান। কিন্তু সফল হননি। কারণ ততক্ষণে বিপক্ষ দলের গোলরক্ষক বাধা দিয়েছেন। সেই বল পেয়ে যান বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়া আবাহনীর মিডফিল্ডার কৌশিক বড়ুয়া। চলন্ত বলে পা লাগিয়ে কৌশিক সেটা ঠেলে দেন জালে (৩-১)। ৬৪ মিনিটে গোল করে ব্যবধানে কিছুটা কমিয়ে আনে ব্রাদার্স। ভিয়েরা বক্সের ভেতরে উড়ন্ত বল পেয়ে লাফিয়ে উঠে হেড করতে যান। তাকে বাধা দিতে একই সঙ্গে লাফিয়ে উঠে হেড করতে যান আবাহনীর নাইজিরিয়ান মুফতা লাওয়াল। কিন্তু বল তার হাতে লেগে যায়। আর সেটা চোখ এড়ায়নি রেফারি আনিসুর রহমান সাগরের। ফলে মুফতা হলুদ কার্ড দেখানোর পাশাপাশি পেনাল্টিরও নির্দেশ দেন তিনি। পেনাল্টি থেকে ডান পায়ের গড়ানো শটে অনায়াসেই গোল করেন ভিয়েরা (২-৩)। রাসেলকে রুখে দিল সাইফ ॥ এদিকে দিনের প্রথম ম্যাচে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ১-১ গোলে ড্র করে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের সঙ্গে। খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে। খেলার প্রথমার্ধে কোন দলই গোল করতে পারেনি। উভয়দলই খেলা শুরু করে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। ৭৯ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় ২০১২-১৩ মৌসুমের প্রিমিয়ার লীগ শিরোপাধারী ‘বেঙ্গল ব্লুজ’ খ্যাত রাসেল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড এ্যালেক্স রাফায়েলের কর্নার থেকে হেড করে দলকে এগিয়ে দেন উজবেক ফরোয়ার্ড আলিশের আযিযব (১-০)। এর তিন মিনিট পরই সমতায় ফেরে সাইফ। বাঁপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে প্রতিপক্ষ দলের বক্সে ঢুকে পড়েন সাইফের দক্ষিণ কোরিয়ান স্ট্রাইকার পার্ক সেউং। সেই ক্রসে পায়ের সংযোগ ঘটিয়ে বল জালে পাঠান কলম্বিয়ান মিডফিল্ডার দেইনার আন্দ্রেস কর্দোবা (১-১)। নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে এটা রাসেলের প্রথম ড্র। ১০ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে। পক্ষান্তরে সাইফেরও সমান ১০ পয়েন্ট, তাদেরও এটা প্রথম ড্র। কিন্তু রাসেলের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে ও গোল তফাতে পিছিয়ে পড়ায় তারা আছে আপাতত তৃতীয় স্থানে।
×