ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবেশী দেশে বিনিয়োগ নিশ্চিত করার নির্দেশ

বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় এবার নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় এবার নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত উৎপাদনের মহাপরিকল্পনায় এবানবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশের জল বিদ্যুতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সেই বিদ্যুত দেশে আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হচ্ছে। ভারত নিজেদের জমি ব্যবহারের শর্ত তুলে নেয়ার পর বাংলাশে আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুত বাণিজ্যে দক্ষিণ এশিয়াতে বড় ভূমিকা রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল থেকেও প্রতিবেশী দেশের নবায়নযোগ্যা জ্বালানির উৎসে বাংলাদেশের বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এখন জোর দিচ্ছি প্রতিবেশী দেশ থেকে সাশ্রয়ী দামে জলবিদ্যুত আমদানির উপর। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আমাদের উৎস খুবই সীমিত, আমরা সোলার এবং বায়ু বিদ্যুত ছাড়া অন্য বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারি না। ফলে প্রতিবেশী দেশে বিনিয়োগ করে আমরা সেই বিদ্যুত আনতে পারলে লাভবান হতে পারি। তিনি বলেন, পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানে ২০৪১ সালের মধ্যে ৯ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুত উৎপাদনের উল্লেখ করেছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে বিশেষ করে নেপাল এবং ভুটানে জলবিদ্যুত উৎপাদন করা গেলে আমরা আরও বেশি পরিমাণে বিদ্যুত আমদানি করতে পারি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সৌরবিদু্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের জমির সঙ্কট রয়েছে। সরকার বিভিন্ন চরে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের চেষ্টা করছে। এর বাইরে সম্প্রতি বায়ুবিদ্যুত উৎপাদনের দ্বার উন্মোচন হতে যাচ্ছে। দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় বছরব্যাপী উইন্ড ম্যাপিং বা বায়ু মানচিত্র করে দেখা গেছে সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ মিটার প্রতি সেকেন্ড বায়ুর গতি রয়েছে। যা বায়ুবিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে আর জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কোন উৎস নেই। সমতল ভূমি হওয়ার পাশাপাশি দেশের মধ্যে নদীর উৎস না থাকার কারণে জলবিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসতেই বড় আশার আলো দেখছে বিদ্যুত বিভাগ। গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কাঠমান্ডুতে নেপাল-বাংলাদেশ প্রথম স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হয়। নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রথম বৈঠক হয়। গত ১০ আগস্ট নেপাল এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণে এমওইউটি সই হয়। সাধারণত দুই দেশের সহায়তা সম্প্রসারণে এর আগে যে সকল স্টিয়ারিং কমিটি এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হয়েছে তারা বছরে দুইবার এ ধরনের বৈঠকে মিলিত হয়। সেই হিসেবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে আরও একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকাতে। জানতে চাইলে জয়েন্ট নেপাল-বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপের এক সদস্য জানান, নেপাল এবং বাংলাদেশের দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি কমিটি নেপালের কোথায় কিভাবে কেন্দ্র করা যায় তা খতিয়ে দেখছে অন্য কমিটি গ্রিড লাইন নির্মাণের বিষয়টি দেখছে। আশা করছি আগামী বৈঠকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হবে। এরপর প্রকল্প তৈরি করে বিনিয়োগ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে দেশের বাইরে নেপাল এবং ভুটানে জলবিদ্যুত উৎপাদনে সরকার এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। জলবিদ্যুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন হওয়ায় এক্ষেত্রে ঋণপ্রাপ্তিও সহজ। সঙ্গত কারণে বাংলাদেশ অনেক দিন থেকেই প্রতিবেশী দেশে জলবিদ্যুত উৎপাদনে নিজেদের আগ্রহের বিষয়টি প্রতিবেশীদের বোঝানোর চেষ্টা করছে। নেপালে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও দেশটি বর্তমানে সামান্য পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এখানেও ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কয়েকটি জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর বাইরে ভুটানেও বিপুল পরিমাণ জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে ভুটানেও জলবিদ্যুত প্রকল্প করার জন্য একটি এমওইউ সই হবে। বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুত আমদানির ক্ষেত্রে নিজেদের জমি ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে গত ডিসেম্বরে নিজেদের নীতি পরিবর্তন করেছে। এর ফলে এখন দেশটির গ্রিড লাইন ব্যবহার করে অথবা নিজেরা গ্রিড লাইন করে বিদ্যুত আনা যাবে।
×