ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ শুল্কহারের কারণে পুরনো ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে শুল্ক ফাঁকি

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

উচ্চ শুল্কহারের কারণে পুরনো ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে শুল্ক ফাঁকি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উচ্চ শুল্কহারের কারণে ছোট ছোট বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলো পুরনো ব্যান্ডরোল পুনরায় ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এতে যেমন সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি সঠিকভাবে ব্যান্ডরোল ব্যবহার করা বড় বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলো ক্ষতির মুখে পড়ছে। প্রতিনিয়ত লোকসান গুনে একের পর এক কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এছাড়াও নকল ব্যান্ডরোল, নকল বিড়ি বিক্রি ব্যান্ডরোল বিহীন বিড়ি ও ভারতীয় পাতার বিড়ির কারণে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অভিযোগ পাওয়া গেছে, কাস্টমসের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এই কাজ করছে ছোট ছোট ফ্যাক্টরির মালিকরা। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন শুল্কহার কমিয়ে ব্যান্ডরোলের এই পুনঃব্যবহার, নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার বন্ধ করা যেমন সম্ভব তেমনি রাজস্ব আহরণও দ্বিগুণ করা সম্ভব। শুধু পুরনো ব্যান্ডরোল বারবার ব্যবহার নয়, ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার, নকল বিড়ি উৎপাদন, ভারত থেকে চোরা পথে বিড়ি এনে বিক্রি করছে। প্রায়ই কাস্টমের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে এসব পুরনো, নকল ব্যান্ডরোল উদ্ধার করে থাকে। উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন ব্যান্ডের নকল বিড়ি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নকল, পুরনো ব্যান্ডরোল ব্যবহার করার ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চেয়ে কম মূল্যে বিড়ি বিক্রি করছেন অনেকেই। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন এবং সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলোতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বিড়ি বিক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ফ্যাক্টরির লোকদের। তারা প্যাকেটটি খোলার আগে বিশেষ কায়দায় ব্যান্ডরোলটি অক্ষত অবস্থায় খুলে ফেলেন। পরে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বাজার থেকে তা সংগ্রহ করা হয়। কোন কোন ব্যক্তি কোটি পিস পর্যন্ত ব্যান্ডরোল সরবরাহ করে থাকে। রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কারখানাতেও একই কায়দায় এই ব্যান্ডরোল সংগ্রহের কাজ করা হয়। আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) কাজী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বিড়ির ৪০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার আকিজ বিড়ির। অথচ আমরা এ খাত থেকে আসা রাজস্বের ৭৫ শতাংশ আমরা দিয়ে থাকি।’ তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিড়ি থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৫৪০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে আকিজ বিড়ি ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ ৪০৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়েছে। বাকিরা দিয়েছে ১৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এ থেকে সহজেই বোঝায় অন্যান্য বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলো রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। তারা পুরনো ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করে সেটা বারবার ব্যবহার করা ছাড়াও নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৮৪টি ব্যান্ডের বিড়ি প্রকাশ্য ভাবে নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। ৩০০টি ব্যান্ডের বিড়ি মধ্যে প্রায় ৮৪টি ব্যান্ডের বিড়ি প্যাকেট প্রতি ১১ দশমিক ৩১ টাকা খরচ হলেও বিক্রি করা হচ্ছে ৬ টাকার নিচে। ১০০টি ব্যান্ডের বিড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৯ টাকায়। পুরনো ব্যান্ডরোল পুনরায় ব্যবহার, নকল ব্যান্ডরোল প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ করেন বিড়ির মালিকরা। সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে পুনরায় ব্যান্ডরোল নেয়ার ব্যবস্থা চালু রাখার পাশাপাশি ছোট ফ্যাক্টরির স্বার্থে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ব্যান্ডরোল কেনার ব্যবস্থা রাখা, সিগারেটের মতো বিড়ির অগ্রিক আয় কর (এআইটি) ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করাসহ সিগারেটের মতো বিড়ির ব্যান্ডরোল উত্তোলনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন বিড়ি মালিকরা। এছাড়াও নকল বিড়ি প্রতিরোধে হলোগ্রাম যুক্ত স্টিকার সংযুক্ত করা ও কালার কোড চালু করা, ভারতীয় পাতার বিড়ি বন্ধে বাংলাদেশের সীমান্ত বাজারগুলোতে কাস্টমস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং নকল বিড়ি ও ব্যান্ডরোলের ব্যাপারে সরকারে প্রচারপত্র তৈরির সুপারিশ করা হয়। বিড়ি মালিকরা বলছেন, ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিড়ি থেকে সরকার রাজস্ব পেত ২৬৬ কোটি ৬৪ লাখ লাখ। এই রাজস্ব এখন ৫০০ কোটি টাকার বেশি। এছাড়াও এ খাতে ২৫ লাখ নিম্নবিত্ত মানুষ কাজ করছে। যার বেশির ভাগই বিধবা নারী ও নদী ভাঙ্গা মানুষ। যারা বাড়িতে বসে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। শুল্কহার বেশি হওয়ার কারণে অনেকে বিড়ি ব্যবসায় লাভের মুখ দেখছেন না। কারখানা বন্ধ হহেয় হয়ে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়ছে। টিকে থাকতে ছোট ছোট ফ্যাক্টরি মালিকরা অনৈতিকভাবে পুরনো ব্যান্ডরোল পুনরায় ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। এসব বন্ধের এক মাত্র উপায় হচ্ছে শুল্কহার কমিয়ে দেয়া। এতে এ সমস্যাগুলোর সমাধান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে।
×