ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় কয়লার ট্রাক উল্টে ইটভাঁটির ১৩ ঘুমন্ত শ্রমিক নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

 কুমিল্লায় কয়লার ট্রাক উল্টে ইটভাঁটির ১৩ ঘুমন্ত শ্রমিক নিহত

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা ॥ কুমিল্লায় ইটভাঁটি শ্রমিকদের শেডে কয়লার ট্রাক উল্টে পড়ে ১৩ ঘুমন্ত শ্রমিক নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৩ জন। শুক্রবার ভোরে জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের করিমপুর (দোসরী ব্রিজ) এলাকায় কাজী এ্যান্ড কোং (এমরান ব্রিকফিল্ড) নামক একটি ব্রিকফিল্ডে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর ট্রাকের চালক-হেলপার ও ব্রিকফিল্ডের পরিচালক পালিয়ে যায়। ঘটনার পর জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। নির্মম এ ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২টি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয়রা জানায়, সিলেট থেকে কয়লা ভর্তি ট্রাকটি (ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-০১১৪) শুক্রবার ভোর রাতে ওই ব্রিক ফিল্ডে আসার পর হঠাৎ করে ট্রাকটি উল্টে শ্রমিকদের থাকার ঘরটিকে চাপা দেয়। এ সময় ঘুমিয়ে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে ঘটনাস্থলে ১২ জন, হাসপাতালে নেয়ার পর ১ জনসহ ১৩ জন ইটভাঁটি শ্রমিক নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৩ জন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে। নিহত শ্রমিকরা হচ্ছেন- নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার নিজপাড়া গ্রামের সুরেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে রঞ্জিত চন্দ্র রায় (৩০), তার ভাই তরুণ চন্দ্র রায় (২৫), একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মোঃ সেলিম (২৮), অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে দিপু চন্দ্র রায় (১৯), কিশোর চন্দ্র রায়ের ছেলে শংকর চন্দ্র রায় (২১), রাম প্রসাদের ছেলে বিপ্লব (১৯), কামিক্ষার ছেলে অজিত রায় (২০), শিমুল বাড়ী গ্রামের মনোরঞ্জন চন্দ্র রায় (১৯), একই গ্রামের খোকা চন্দ্র রায়ের ছেলে মৃণাল চন্দ্র রায় (২১), পাঠানপাড়া গ্রামের নুর আলমের ছেলে মোরসালিন (১৮), একই গ্রামের ফজলুল করিমের ছেলে শামসু (১৮), রাজবাড়ী গ্রামের খোকা চন্দ্র রায়ের ছেলে বিকাশ চন্দ্র রায় (২৮) ও ধলু চন্দ্র রায়ের ছেলে কনেক চন্দ্র রায় (২৫)। অপরদিকে গুরুতর আহত দুইজনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যালে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান ভূঁইয়া হাসান, পৌর মেয়র মিজানুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শেখ শহিদুল ইসলাম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেন। এদিকে ঘটনার পর থেকে ওই ব্রিক ফিল্ডের পরিচালক এনায়েত হোসেন সোহেল পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে নিহতদের শোকার্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন স্থানীয় এমপি ও সাবেক রেলপথমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক মুজিব। তদন্ত কমিটি গঠন ॥ এ ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাইজার মোহাম্মদ ফারাবীকে আহ্বায়ক করে জেলা প্রশাসনের ৪ সদস্যের কমিটির অন্যান্যরা হলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি দীপন দেবনাথ, চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল্লাহ আল-মাহফুজ ও কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল স্টেশনের সহকারী পরিচালক রতন কুমার নাথ। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ। কমিটির অপর কর্মকর্তারা হলেন চৌদ্দগ্রাম সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম এবং চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল-মাহফুজ। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, বৃহস্পতিবার কাজ শেষে রাতে ওই ব্রিকফিল্ডের লেবার শেডে ২২ জন শ্রমিক ঘুমিয়েছিলেন। ভোর ৫টার দিকে ওই ব্রিক ফিল্ডের জন্য সিলেট থেকে আনা কয়লা বোঝাই ট্রাকটি আনলোড করার সময় হঠাৎ তা উল্টে গিয়ে ব্রিক ফিল্ডের লেবার শেডের ঘুমন্ত শ্রমিকদের ওপর পড়ে। এতে কয়লা বোঝাই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই ১৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। নিহতরা সবাই ওই ব্রিকফিল্ডের শ্রমিক ছিলেন। ওসি আরও জানান, দুপুরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহতদের ময়নাতদন্তের পর তাদের মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে প্রেরণ করা হয়েছে। ট্রাকের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মাদারীপুরে প্রবাসী নিহত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার কলাবাড়ী নামকস্থানে ঢাকা বরিশাল মহসড়কে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বালুভর্তি ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী গ্রীস প্রবাসী রবিউল ফকির (৩৫) নিহত হয়েছে। শুক্রবার সকালে তার নিজ বাড়িতে জানাযার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় । পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার সমাদ্দার এলাকায় বোনের মেয়ের (ভাগ্নি) বিয়ে অনুষ্ঠানের জন্য মোটরসাইকেলযোগে মাদারীপুর থেকে মিষ্টি কিনে যাওয়ার পথে কলাবাড়ী নামক স্থানে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বালুভর্তি ট্রাক সামনা-সামনি ধাক্কা দিলে সড়কে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। সে কেন্দুয়া ইউনিয়নের ঘটকচর এলাকার নাদির ফকিরের ছেলে। কয়েক বছর গ্রীস থেকে কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশে আসে। বাগেরহাটে কলেজছাত্র নিহত ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট থেকে জানান, চিতলমারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় শেরে বাংলা কলেজছাত্র সাদী শেখ (১৭) নিহত হয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা বন্ধু ইসমাইল শেখ (১৮) ও রমজান শেখ (১৫) নামের দুই ছাত্র আহত হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে আড়ুয়াবর্নী নতুন হাটখোলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাদি শেখ উপজেলার আড়ুয়াবর্নী চরপাড়া গ্রামের অহিদ শেখের ছোট ছেলে। মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছে ধাক্কা লেগে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রাক্টর খাদে পড়ে হেলপার নিহত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের উত্তর হরিহরপুর গ্রামের আলিম মাদ্রাসা এলাকায় মাহিন্দ্র ট্রাক্টর খাদে পড়ে ট্রাক্টরের হেলপার নিহত হয়েছে। নিহত দুলাল হোসেন (৩০)-এর হরিহরপুর গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে হরিহরপুর গ্রাম থেকে একটি মাটি ভর্তি মাহিন্দ্র ট্রাক্টর ঠাকুরগাঁও শহরে আসছিল। পথে ওই গ্রামের আলিম মাদ্রাসা এলাকায় পৌঁছলে ট্রাক্টরটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে হেলপার দুলাল হোসেন নিহত হন। এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
×