ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ সময়টা একেবারেই চলে এসেছে। শুধু বই নিয়ে থাকার দারুণ এক সময়! গল্প আড্ডা বসন্ত ভালবাসাÑ সবই বই হাতে নিয়ে। এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে! প্রতিবছরের মতো এবারও ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে শুরু হবে মাসব্যাপী গ্রন্থমেলা। বৃহৎ আয়োজন সফল করতে এখন দিন রাত কাজ করছে আয়োজক বাংলা একাডেমি। আগেই স্টলের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করা হয়েছিল। বুধবার অনুষ্ঠিত হয় লটারি। এর ভিত্তিতে প্রকাশকদের কার কোথায় স্টল, প্যাভিলিয়নটি কোথায় হবে তা চূড়ান্ত করা হয়। স্টল ও প্যাভিলিয়ন বুঝে পাওয়ার পরই কাজ শুরু করে দেন প্রকাশকরা। বৃহস্পতিবার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে প্রবেশ করতেই চেনা ছবিটা দেখা গেল। দূর থেকে কানে আসছিল পেরেক ঠুকার শব্দ। করাত চালাচ্ছিলেন মিস্ত্রিরা। চলছিল রং করার কাজ। এভাবে উৎসব শুরুর আগেই ছড়িয়ে পড়ছিল উৎসববার্তা। এ অংশেই আয়োজন করা হবে মূল মেলা। সব ধরনের বই পাওয়া যাবে এখানে। আর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সরকারী প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠনের স্টল সাজানোর কাজ চলছে। একাডেমি চত্বরে ঘুরে বেড়ানোর এক পর্যায়ে দেখা হয়ে যায় আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদের সঙ্গে। যথারীতি নিজের ব্যস্ততার কথা জানালেন। বললেন, এবার দুই একদিন আগেই সব প্রস্তুতি শেষ করা হবে। কাজ অসমাপ্ত রেখে মেলা শুরু করা হবে না। এ জন্য প্রকাশকদেরও সহযোগিতা আশা করেন তিনি। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করার মতো। মেলার ভেতর সুন্দর করার চেষ্টা সব সময়ই হয়। বাইরের অংশ নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা দেখা যায় না। এবার নতুন মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী এ বিষয়টি বিশেষভাবে আমলে নিয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এ সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছেন তিনি। আগামী রবিবার দুপুর ১২টায় একাডেমির মহাপরিচালকসহ কমিটির অন্য সদস্যরা মেলার দুটি ভেন্যু পর্যন্ত যাওয়া আসার রাস্তাগুলো হেঁটে পরিদর্শন করবেন। দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ বুঝতে এমন বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সকলেই জানেন, মেলার সময় বিশেষ করে শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত ফুটপাথ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। মানুষের ঢল নামে প্রতিদিন। অথচ এই ফুটপাথজুড়ে খানাখন্দ। ময়লা আবর্জনার ভাগার। দোকান। ভ্যান। ঝঞ্ঝাল গুনে শেষ করা যায় না। আর নিচে মূল রাস্তায় ছবির মতো স্থির হয়ে থাকে শত শত গাড়ি। যানজটের কারণে সেখানে নামার কোন সুযোগ থাকে না। এ অবস্থায় বাধার পাহাড় ডিঙাতে হয় দর্শনার্থীদের। এবার আর তা হবে না। বইপ্রেমীদের বহুদিনের প্রত্যাশা পূরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে কমিটি। আমাদের তা-ই প্রত্যাশা। এবার প্রয়াস সুরকারের কথা। গীতিকারের কথা। ঢাকায় জন্ম। মৃত্যুও ঢাকায়। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহরে ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। আজিমপুরের ওয়েস্টটেন্ট হাইস্কুলে পড়তেন। সে অবস্থায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। একাত্তরে ঢাকার ভেতরেই বেশ কিছু অপারেশনে অংশ নেন তিনি। দেশ মুক্ত হওয়ার পর সঙ্গীত আর সঙ্গীত নিয়েই ছিলেন শুধু। গীতিকার সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সারাদেশের মানুষের ভালবাসা কুড়ান তিনি। আর তারপর এ শহরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গানের বুলবুল। গত মঙ্গলবারের রাত গড়িয়ে বুধবারে পড়েছে যখন, সকলকে চিরবিদায় জানান তিনি। সেই থেকে শোকাচ্ছন্ন ঢাকা। কতভাবে যে শোক প্রকাশ করছে মানুষ! বুলবুলের মৃত্যুতে নতুন করে সামনে এসেছে তার শত শত জনপ্রিয় গান। ছোট্ট একটা জীবন। এই জীবনে এত জনপ্রিয় গান উপহার দেয়া কী করে সম্ভব হলো! বিস্ময় কাটছে না অনেকের। বহু গান দিনের পর দিন শুনেছেন তারা। এখনও গুণগুণ করে গেয়ে ওঠেন। কিন্তু জানতেন না যে, এই গানের সুরকার বা গীতিকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল! হারানোর ব্যথা তাই আরও বেশি করে বুকে বাজছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিশেষ আলোচিত হচ্ছেন তিনি। বলা হচ্ছে, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সত্তাকে গড়ে দিয়েছিল একাত্তর। একাত্তর তাকে ঐশ্বর্যম-িত করেছিল। তাই মুক্তিযুদ্ধকে, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া বাংলাদেশকে ধারণ করে আছে তার গান। মাতৃভূমির প্রতি প্রেম, মানুষের জন্য বুকভর্তি ভালবাসা। সবই গানে উজার করে দিয়েছেন তিনি। এ কারণেই তার গান গানের অধিক। এ কারণেই তার লেখা ও সুর করা গান জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেছে সব সময়। স্বাধীনতা বিরোধী যোদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষী দিয়েছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তার এই ভূমিকাটিও নতুন করে প্রশংসিত হচ্ছে। যারপরনাই অভিমানী ছিলেন শিল্পী। সেই অভিমানের কথা ওঠে আসছে। অসুস্থ সুরকারের প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সম্মান দেখিয়েছিলেন, যেভাবে তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রশংসা হচ্ছে তারও। এভাবেই মানুষের ভালবাসায় বেঁচে থাকবেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তার এত এত সৃষ্টি যে, চাইলেও কেউ তাকে ভুলতে পারবে না। এমন বাঁচা ক’জন বাঁচতে পারে? রাজধানীতে চলমান ট্রাফিক সপ্তাহের কথা বলে শেষ করা যাক। বিশেষ সপ্তাহের প্রথম দিন থেকেই সড়কে শৃঙ্খলা আনার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। সঙ্গে রয়েছে স্কাউট ও গার্লস গাইডের সদস্যরাও। আইন ভঙ্গকারীদের কখনও বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কখনও করতে হচ্ছে মামলা। বুধবারের তথ্য মতে, শুধু ওই একদিনে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ৫ হাজার ৮৪৪ মামলায় ২৮ লাখ ২১ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযানকালে ১৬টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৮৭০টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, উল্টোপথে গাড়ি চালানোর কারণে ১১২৬টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করার দায়ে মামলা করা হয়েছে ৯৭টি। হুটার ও বিকনলাইট ব্যবহার করার জন্য ১০টি, মাইক্রোবাসে কালো গ্লাস লাগানোর জন্য ১৮টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করার কারণে ২৫১৪টি মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা ও ১১৪টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করার অপরাধে চালকদের বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা দেয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে আবারও স্পষ্ট হয়ে যায়, ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা কত! এই বিশৃঙ্খলা আইন অমান্য করার মন্দ প্রবণতা থেকে কবে আর বের হবে ঢাকা? কবে?
×