ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিকারিদের হাতে নিধন হচ্ছে অতিথি পাখি

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

 শিকারিদের হাতে নিধন হচ্ছে অতিথি পাখি

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ নওগাঁর সীমান্তঘেঁষা সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিল ও সীমান্তবর্তী পুনর্ভবা নদীতে প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে আসা ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি প্রতিনিয়ত শিকারিদের হাতে নিধন হচ্ছে। অবাধে পাখি শিকার করায় একদিকে যেমন বিলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে জবাই বিলের জীববৈচিত্র ও পরিবেশ। জানা গেছে, একদল শিকারি প্রতিদিন বিল ও নদী থেকে পাখি শিকার করে বিভিন্ন গ্রাম-বাজারে, শহর-বন্দরে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। পাখি শিকার যে ‘আইনত দন্ডনীয় অপরাধ’ তা জানা সত্ত্বেও পাখির মাংসের স্বাদ ও টাকার লোভে একশ্রেণীর মানুষ অবাধে পাখি শিকার করছে। বুধবার জবইবিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ জানান, বর্ষার শেষভাগে বিলে পানি কমতে শুরু করার কারণে বিলের জমি জেগে ওঠে। অল্প পরিমাণে পানি থাকায় ছোট মাছ, শামুক, পোকা-মাকড় থাকে, যা খাওয়ার লোভে অতিথি ও দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দলবেঁধে বিলে ভিড় জমায়। এ সুযোগে কিছু লোভী শিকারি বিল ও নদীর জলে ফাঁস জাল, বিশেষ ফাঁদ ও দানাদার বিষ দিয়ে, বিভিন্ন কৌশলে পাখি শিকার করে। এছাড়া বিলে একশ্রেণীর মৎস্যজীবী মাছের পাশাপাশি ভোরে কারেন্টজাল দিয়ে বালিহাঁস, বক, চাহাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকার করে। তিনি জানান, এবার শীতে অন্যান্য বছরের তুলনায় ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ দেখা গেছে। জবাই বিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বিল থেকে বিলুপ্ত ও হারানো প্রজাতির পাখি পাতি, সরালি আবার বিলে ফিরে আসছে। জবই বিল ও পুনর্ভবা নদীতে এরা দিনরাত বিচরণ করে। জবইবিল ও পুনর্ভবা নদীর সৌন্দর্য বর্ধনে অতিথি পাখির বিচরণ এবার নতুন রূপ দিয়েছে। দিনরাত কিচিরমিচির কলতানে মুখরিত বিল ও নদী যা দেখে পাখিপ্রেমীদের মন জুড়িয়ে যায়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, এই সুন্দর পাখিগুলো বিভিন্ন সময়ে শিকারির হাতে ধরা পড়ছে। রাতের আঁধারে শিকারিরা বিলে ও নদীর জলে জাল পেতে অবাধে পাখি শিকার করছে। জবইবিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা সম্প্রতি এক শিকারীকে হাতেনাতে ধরতে সক্ষম হয়। এ সময় শিকারির নিকট থেকে পাখি ও জাল আটক করা হয়। পরে আটক শিকারি ভুল স্বীকার করায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে পরিবেশবাদী সংগঠনের তৎপরতা ও স্থানীয় বন বিভাগসহ প্রশাসনের কড়া নজরদারি ও জনসচেতনামূলক কর্মকান্ড অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ে বন্যপ্রাণী ও পাখি শিকার বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার কলমুডাঙ্গা, চৌমুহনী বাজারে প্রতিদিন সকালে প্রতিজোড়া চাহা পাখি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, বালিহাঁস প্রতিটি ৩০০ টাকা, বক ও কক পাখি ৩০০ টাকা জোড়া বিক্রি হচ্ছে। জবই বিল ও পুনর্ভবা নদী এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা অতিথি পাখি শিকার বন্ধে প্রচার চালালেও জনসচেতনতার অভাবে পাখি শিকার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
×