ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তপন পালিত

নির্মূল কমিটির রাজাকারমুক্ত সংসদ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

নির্মূল কমিটির রাজাকারমুক্ত  সংসদ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন

আজ ১৯ জানুয়ারি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পথচলার ২৭ বছর। ১৯৯২ সালের এই দিনে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে সংগঠনটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে। তরুণ ভোটার, সমমনা রাজনৈতিক দল, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সুশীল সমাজ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই বিজয়ে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মহাজোটের এই নিরঙ্কুশ বিজয়ের প্রেক্ষাপট তৈরিতে সাহায্য করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশের চাকা পিছনের দিকে চলতে শুরু করে। তখন রাষ্ট্র ও সমাজে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী ধারার রাজনীতি চালু হয়। মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা বা প্রচার করার সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে। এমন সময়ে শহীদ জননীর নেতৃত্বে নির্মূল কমিটি যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করে। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে এবং জামায়াত ১৮টি আসন পায়। এই সুযোগে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর আমির মনোনীত করা হয়। এর প্রতিবাদে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে আহ্বায়ক করে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং কিছুদিন পর জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। নির্মূল কমিটির নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ প্রকাশ্য গণআদালতে গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার করে মৃত্যদণ্ডের রায় ঘোষিত হয়। তৎকালীন বিএনপি সরকার দণ্ড কার্যকর করার পরিবর্তে নির্মূল কমিটির ২৪ জন নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করে। ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন শহীদ জননীর মৃত্যুর পর কমিটির কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। তখন তরুণ প্রজন্মকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্মূল কমিটি পুনর্গঠন করে এর হাল ধরেন শাহরিয়ার কবির, কাজী মুকুল, মুনতাসীর মামুন প্রমুখ। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্মূল কমিটি অন্যান্য সমমনা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহায়তায় জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগী সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী প্রার্থীদের ভোট না দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রার্থীদের ভোটদানের জন্য ব্যাপক প্রচারাভিযান চালায়। কমিটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের নির্বাচন পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় জনসভা, জনসংযোগ ও প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করেন। এ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় নেতৃবৃন্দ জামায়াতে ইসলামীর সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও অপরাপর মৌলবাদী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের এলাকায় নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে দেড় লাখ পোস্টার এবং চার লাখ লিফলেট ও পুস্তিকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রধান প্রধান যুদ্ধাপরাধীরা যাতে জয়ী হয়ে সংসদে আসতে না পারে সেজন্য তাদের অতীত দুষ্কর্মের বিবরণ তুলে ধরে প্রত্যেকের নামে আলাদা লিফলেট প্রকাশ করে এলাকায় বিলি করা হয়েছে। এর ফলে দেখা যায় যে, জামায়াত মাত্র ৩টি আসনে জয়লাভ করে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার স্বরূপ, কারণ ও করণীয় সম্পর্কে নির্মূল কমিটি ৮০ পৃষ্ঠার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়। নির্বাচনে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ভোট না দেয়া এবং বেতার টেলিভিশনে তাদের সংবাদ প্রচার না করার জন্য নির্মূল কমিটি প্রচারণা চালায়। নির্বাচনী প্রচারণায় যাতে ধর্মের ব্যবহার না করা হয় সে জন্য আহ্বান জানানো হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনের পাশাপাশি সারা দেশে অসংখ্য গণহত্যার স্থান, গণকবর, নির্যাতন কেন্দ্র চিহ্নিত করার জন্য নির্মূল কমিটি সরকারের কাছে দাবি জানায়। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘রাজাকারমুক্ত সংসদ’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে নির্মূল কমিটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং রাজাকারমুক্ত সংসদ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। কিন্তু ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। নির্বাচনের পর শুরু হয় ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধেও নির্মূল কমিটি প্রতিবাদ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করেছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শাহরিয়ার কবির ও মুনতাসীর মামুনকে হাজতবাস করতে হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সিরাজগঞ্জের পূর্ণিমা শীলের ওপর বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্যাতনের কথা বেশবাসী এখনও ভুলতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা দেয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী মাত্র ২টি আসন পায়। মহাজোটের বিজয়ের প্রধান কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতি অঙ্গীকার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত শীর্ষস্থানীয় মানবতাবিরোধী অরপরাধীদের বিচার করে শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি কার্যকর করারও ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু নির্মূল কমিটির আন্দোলন, মহাজোট সরকারের পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধের ব্যবস্থা করা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য স্থাপন এবং শাহবাগের গণজাগরণমঞ্চ তরুণ প্রজন্মের মানস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী ২০১২ সাল থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পর্যায়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ইতিহাস বাধ্যতামূলক করার আন্দোলন শুরু করে। অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সকল কলেজে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং তা বাস্তবায়নও করেন। ইতিহাস সম্মিলনীর চেষ্টায় প্রফেসর আবদুল মান্নান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধীন সকল সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের জন্য মুনতাসীর মামুন ও মাহবুবর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস শীর্ষক দুটি গ্রন্থ রচনা করে দেন। গত পাঁচ বছরে প্রায় ৫০ লাখ শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ে বেড়ে উঠেছে। তাদের মনোজগতে পাকিস্তানী ধারার পরিবর্তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারা প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য বিশাল জায়গা দিয়েছেন। অন্যদিকে মুনতাসীর মামুন খুলনায় দেশের প্রথম গণহত্যা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই জায়গাও প্রধানমন্ত্রীর দান। জাদুঘরে প্রতিদিন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা পরিদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারছে যা তাদের মনোজগতে পরিবর্তন ঘটাতে সাহায্য করছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৬ মাস আগে থেকে তরুণ নির্বাচকমণ্ডলীকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা সম্পর্কে সচেতন করার জন্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি রাজাকারমুক্ত সংসদের দাবিতে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা’ শুরু করেছে। এই অভিযাত্রার অংশ হিসেবে কেন্দ্র, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্মূল কমিটি ১০১টি আলোচনা সভা, মতবিনিময় সভা ও জনসমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। এসব সভায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের প্রার্থীকে ভোটদানের জন্য নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। অতীতের নির্বাচনের পর আমরা দেখেছি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মহা-আতঙ্কে থাকেন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খালেদা-নিজামী নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও এথনিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির ওপর নজিরবিহীন নির্যাতন চালিয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দশ হাজারেরও বেশি ঘটনা ঘটলেও শতকরা ৯৯ভাগ ভিকটিম কোন ন্যায় বিচার পাননি আইনি সীমাবদ্ধতা এবং উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে। নির্বাচন কেন্দ্রিক এই সমস্যা সমাধানের জন্যও নির্মূল কমিটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ২০১৮ সালের ৩ ও ৪ আগস্ট নির্মূল কমিটির বিশেষ প্রতিনিধি সম্মেলনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপশক্তির আক্রমণ মোকাবেলার জন্য ৪টি বিশেষ ফোরাম গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা রোধে চিকিৎসা সহায়তার জন্য অধ্যাপক উত্তম বড়–য়াকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন আল মাহতাবকে সদস্য সচিব করে ‘চিকিৎসা সহায়ক কমিটি’, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে আহ্বায়ক ও ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে ‘আইন সহায়ক কমিটি’, মুক্তিযোদ্ধা সঙ্গীত শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষালকে আহ্বায়ক ও সঙ্গীত শিল্পী জান্নাত-ই-ফেরদৌসীকে সদস্য সচিব করে ‘সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ড’ এবং শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়কে আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তপন পালিতকে সদস্য সচিব করে ‘তথ্যপ্রযুক্তি যোগাযোগ সেল’ গঠন করা হয়। চিকিৎসা সহায়ক কমিটির উদ্যোগে ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর সারাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের নেতৃস্থানীয় চিকিৎসকদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নবীন চিকিৎসক এবং মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা সম্পর্কে সচেতন করার জন্য জেলা পর্যায়ে ওয়ার্কশপ ও সেমিনার আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়। নির্বাচনের সময় কোথাও কোন সন্ত্রাস ও সহিংসতার ঘটনা ঘটলে চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সদস্যরা দ্রুত ভিকটিমদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আইন সহায়ক কমিটির উদ্যোগে ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের আইনজীবীদের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন পরবর্তীকালে আইনী সহায়তা প্রয়োজন হলে প্রতি শনিবার নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলিত হয়ে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ভিকটিমদের আইনী সহায়তা প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও জেলা পর্যায়ে ভিকটিকদের সহায়তা প্রদানেরও ব্যবস্থা করা হয়। সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ডের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টি করে নির্বাচন কেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধ করার জন্য কাজ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যাতে সাম্প্রদায়িক হামলার সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য নির্মূল কমিটি ‘তথ্যপ্রযুক্তি যোগাযোগ সেল’ গঠন করে। এই সেলের উদ্দেশ্য-তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সৃজনশীল ও রুচিশীলভাবে তারুণ্যের ভাষায় দেশে ও প্রবাসে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও চেতনায় আলোকিত করা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অপপ্রচার বা অন্য কোনো কারণে দেশের কোথাও হামলার ঘটনা ঘটলে এই সেলের মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহ করে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা। এসব ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তীকালে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে নির্মূল কমিটির ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা’ সম্পূর্ণরূপে সফলতা লাভ করেছে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ রাজাকারমুক্ত হয়েছে। নির্মূল কমিটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে তা এই নির্বাচনের মাধ্যমে অনেকাংশে সফলতা লাভ করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতকে চূড়ান্তভাবে সংসদ থেকে বিতাড়িত করে রাজাকারমুক্ত সংসদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
×