ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি- দোষী সাব্যস্ত ফিলিপিনো ব্যাংকার

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১১ জানুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি- দোষী সাব্যস্ত ফিলিপিনো ব্যাংকার

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংক কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) সাবেক কর্মকর্তা মায়া সান্তোস দেগিতোকে দোষী সাব্যস্ত করেছে দেশটির একটি আদালত। ফিলিপিন্স স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির মাকাতি আঞ্চলিক আদালতের বিচারক সিজার উনতালান বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন। খবর ওয়েবসাইটের। রায়ে বিচারক মুদ্রা পাচারের আট দফা অভিযোগে দেগিতোকে দোষী সাব্যস্ত করায় প্রতিটি ধারায় তার ৪ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। সেই সঙ্গে তাকে জরিমানা করার আদেশ দিয়েছে আদালত, যার পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তিন বছর আগে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয়া ওই সাইবার চুরির ঘটনায় এই প্রথম কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়া হলো। রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা দেগিতোই ছিলেন এ মামলার একমাত্র আসামি। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেয়া হয় ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায়। সে সময় ওই শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন দেগিতো। ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ এই সাইবার জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হলে ফেব্রুয়ারির শুরুতে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের মানুষ বিষয়টি জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গবর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। ফিলিপিন্সে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলরেম মানি রেমিটেন্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তার হদিস আর মেলেনি। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে এখনও তেমন কোন অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপিন্সে ঢোকার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে দেশটির সিনেট কমিটি তদন্ত শুরু করে। ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার পর আরসিবিসি তাদের শাখা ম্যানেজর দেগিতোকে বরখাস্ত করে। আর ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে। অর্থ পাচারে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে দেগিতো সিনেটের শুনানিতে বলেছিলেন, আরসিবিসির একেবারে উঁচু পর্যায়ের নির্দেশনাতেই সব হয়েছে। আর তাকে বানানো হচ্ছে বলির পাঁঠা। তবে মাকাতি আঞ্চলিক আদালতের বিচারক তার রায়ে বলেছেন, মুদ্রা পাচারে সংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগ দেগিতোর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সিএনএন ফিলিপিন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরসিবিসির ওই শাখায় চারটি ভুয়া এ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে আসা টাকা জমা করা এবং পরে তোলার ক্ষেত্রে দেগিতোকে দায়ী করেছে আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেগিতোর আইনজীবী দিমিত্রিও কাস্টোডিও বলেছেন, তার মক্কেল ব্যাংকের ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন বলে ওই অপরাধের জন্য তাকে দায়ী করা যায় না। সরকার শুধু একজন নিচের দিকের কর্মকর্তার বিচার করছে। এ ঘটনার সঙ্গে আরও অনেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার দায় রয়েছে। আপীলের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেগিতো জামিনে থাকবেন জানিয়ে এই আইনজীবী বলেছেন, জরিমানার টাকা দিতেও তাকে বাধ্য করা যাবে না।
×