ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ওরা যেন আর ফিরে না আসে ॥ নির্বাচনে অগ্নিসন্ত্রাসীদের প্রত্যাখ্যান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১১ জানুয়ারি ২০১৯

ওরা যেন আর ফিরে না  আসে ॥ নির্বাচনে অগ্নিসন্ত্রাসীদের প্রত্যাখ্যান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ব্যর্থতার কারণ নিজেদেরই খুঁজে বের করতে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে ব্যর্থতার কারণ তাদেরই (বিএনপি) খুঁজে বের করতে হবে। যারা নমিনেশন নিয়ে ট্রেড (বাণিজ্য) করেছে, অকশন (নিলাম) করেছে, তারা কী করে আশা করে যে নির্বাচনে জয়ী হবে? যাদের নীতি ঘুষ-দুর্নীতি, লুটপাট, অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা তারা জেতার আশা করেইবা কিভাবে? বাংলাদেশের মানুষ কখনও এটা মেনে নেয়নি, নেবেও না। এ কারণেই জনগণ ওদের ভোট দেয়নি। নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিশাল পরাজয়ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সব আন্দোলনেই ব্যর্থ হয়েছে। আর আন্দোলনে যারা ব্যর্থ হয়, নির্বাচনে তারা কখনই জয়ী হতে পারে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। ’১৮ সালের নির্বাচনে সেটাই প্রমাণিত। বাংলাদেশের মাটিতে আর কখনও এই খুনী, অগ্নিসন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ ও সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশের মানুষকে আরও সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ’১৮ সালের চেয়ে ’০৮ সালের নির্বাচনেই সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। ওই নির্বাচনে কোথাও ৯০ ভাগ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। সে নির্বাচনেও জনগণ নৌকাকেই বেছে নিয়েছে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী করে আওয়ামী লীগকে দেশ সেবার সুযোগ করে দিয়েছে। এটা সবার মনে রাখা উচিত। বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, নির্বাচনে তারা (বিএনপি) নমিনেশন দিল কাকে? যেখানে উচ্চ আদালত থেকে একটি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সেই জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জনই নমিনেশন পেয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তারা যুদ্ধাপরাধীদের কখনও ভোট দেবে না; ভোট তারা দিতে চায়ও না, দেয়নিও। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, এতিমের অর্থ আত্মসাত, মানিলন্ডারিং, অগ্নিসন্ত্রাসে মানুষ হত্যা করাই যাদের নীতি তারা জেতার আশা কিভাবে করে? বাংলাদেশের মানুষ কখনই তা মেনে নেয়নি। মেনে নেবে না। নিতে পারে না। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি একে এম রহমতুল্লাহ, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের নির্বাচনে বিএনপির ব্যর্থতার কারণ কী? আমি বলব, সেটা বিএনপিকেই ভেবে দেখতে হবে। নির্বাচন বানচাল ও সরকার উৎখাত আন্দোলনের নামে তারা সন্ত্রাস, নাশকতা ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এই ’১৩, ১৪ ও ১৫ সালে তারা ৫শ’ মানুষকে হত্যা করেছে। তাদের হাত থেকে গাছপালাও রক্ষা পায়নি। তাদের সেই অগ্নিসন্ত্রাস আর এত অপকর্মের পরও তারা কিভাবে মানুষের ভোট পাবে? তিনি বলেন, তাদের আন্দোলনই ছিল মানুষ খুন করা। এই মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করাটা দেশের মানুষ পছন্দ করেনি। তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আর তারা যে আন্দোলনের নামে অবরোধ ডেকেছিল সেটা এখনও তুলে নেয়নি। অর্থাৎ সেটা এখনও আছে। তবে দেশের মানুষই সেটাকে গ্রাহ্য করেনি, করছে না। বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাসের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েও কিন্তু তারা (বিএনপি-জামায়াত) সফল হতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জনগণ তা রুখে দাঁড়িয়েছিল। জনগণ আমাদের পাশে ছিল। সেই নির্বাচনে আবার আমরা সরকার গঠন করি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন কি ছিল আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা, এটা কখনই মানুষ মেনে নিতে পারেনি। তখন জনগণই তাদের প্রতিরোধ করেছিল। যার ফলে সরকার উৎখাতের ঘোষণা, তাদের আন্দোলন, তাদের ধর্মঘট আজ পর্যন্ত কিন্তু প্রত্যাহার করা হয়নি। সেটাও অব্যাহত আছে। কিন্তু জনগণ সেটাকে আর কোন ধর্তব্যেই নেয়নি। এভাবে তাদের সকল আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আর আন্দোলন যাদের ব্যর্থ হয়, নির্বাচনে তারা কখনও জয়ী হতে পারে না, এটাই বাস্তবতা। আর সেটা প্রমাণ হয়েছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে। এই নির্বাচনে বিএনপির ব্যর্থতার কারণটা কি? এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী কেউ বাদ যায়নি তাদের সেই অগ্নিসন্ত্রাস থেকে। তাদের এই অপকর্ম থেকে তারা কিভাবে আশা করতে পারে, জনগণ তাদেরকে ভোট দেবে? যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করে। শুধু মানুষ না, তাদের এই রুদ্ররোষ থেকে গাছপালা, পশুপাখিও রেহাই পায়নি। এমন কোন অপকর্ম নেই তারা করেনি। শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে এতিমের অর্থ আত্মসাত করে বিএনপি নেত্রী এখন কারাগারে বন্দী। তার পুত্রকে বানিয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন! সে (তারেক রহমান) হলো দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি মামলার আসামি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, মানিলন্ডারিং মামলায় যেখানে এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে সেই মামলারও সাজাপ্রাপ্ত আসামি রিফিউজি বিদেশে পালিয়ে আছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপির এমন কোন নেতা তাদের দলে নেই বা দেশের ভেতরে যাকে তারা তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন বানাতে পারল না? তারা বানাল একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে। নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবির জন্য বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যও একটি কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নির্বাচনের সময় কী করেছে? প্রার্থী নির্বাচন কীভাবে করেছে? সেটা নিয়ে তো রীতিমত মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। এক আসনে তিন থেকে ৫ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে। মনোনয়ন দেয়ার পরও তারা যত বেশি টাকা দিয়েছে তারা দলের প্রতীক পেয়েছে। সকালে হয়ত একজন এক পরিমাণ টাকা দিলো, তাকে মনোনয়ন দিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল তার থেকে আরেকটু কেউ বেশি টাকা দিয়েছে, তখন আবার তাকে প্রতীক দেয়া হলো। দুপুর গড়াতে পারল না বিকেলে এসে দেখা গেল আরেকজন আরও বেশি টাকা দিল, তখন আবার আরেকটা চিঠি পেল। তখন বলা হলো, আগের সব বাদ, ইনি আছেন। এই হলো বিএনপির নমিনেশনের ট্রেড বা বিজনেস। মনে হলো নমিনেশন তারা অকশনে দিয়েছিল। উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিলেটে ইনাম আহমেদ চৌধুরী নমিনেশন পেলেন না। যে যত টাকা দিতে পারল সে নমিনেশন পেল। ইনাম নমিনেশন পেলে জেতার হয়ত একটা সম্ভাবনা ছিল। ধামরাই যেখানে আতাউর রহমান খানের ছেলে জিয়াউর রহমান, আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম, জিয়াউর রহমান নমিনেশন পাবে, নমিনেশন পেলে সে তো জিতবেই। কিন্তু তাকে না দিয়ে যে বেশি টাকা দিতে পারল তাকে নমিনেশন দিল। ঠিক সেভাবে নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকার। তাকে মনোনয়ন দিল না। সেখানে যে টাকা সাপ্লাই দিতে পারল তাকে তারা নমিনেশন দিয়েছে। চট্টগ্রামে মোর্শেদ খান, তাকে নমিনেশন দিল না, যে ভাল টাকা দিতে পারল সে পেল নমিনেশন। শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, যখন সিট (নির্বাচনী আসন) অকশনে দেয়া হয় তখন তারা নির্বাচনে জেতে কিভাবে? আমি ছোট ছোট কয়েকটা উদাহরণ দিলাম। কারণ এদের মধ্যে অনেকেই আমার সঙ্গে দেখা করে তাদের দুঃখের কথা নিজেরাই বলে গেছেন। এর মধ্যে একজন আমাদের দলে যোগদানও করেছেন। তিনি বলেন, আমরা এসব তথ্য একেবারে যারা বঞ্চিত তাদের মুখ থেকেই পেয়েছি। আরেকটা কাহিনী শুনলাম, কেউ যদি ভাইয়ার (তারেক রহমান) সঙ্গে কথা বলতে চায় তখন ভাইয়া নাকি আবার খালি ফোন নাম্বার বদলায়। সেজন্য তার সঙ্গে কথা বলতে হলে আবার পাউন্ডে সেখানে পেমেন্ট করতে হবে। আমাদের কোন এক দেশের এ্যাম্বাসিতে একজন প্রার্থী গিয়ে হাজির। সেখানে গিয়ে বলছে, সে নমিনেশন নিয়ে এসেছে, নমিনেশন সাবমিট করবে। সেখানে এ্যাম্বাসি বলেছে, আমরা তো নমিনেশন নিতে পারি না, রিটার্নিং অফিসার সে দেবে অথবা আপনি অনলাইনে পাঠাতে পারেন। তখন উনি ক্ষেপে গিয়ে বলেন, আমি লন্ডনে এতগুলি টাকা দিলাম, এত পয়সা দিলাম। আমাকে বলা হলো, এখানে নমিনেশন দেয়া যাবে আর এখন আপনারা বলছেন, দেয়া যাবে না। সে খুব ক্ষোভের চোটে তার দুঃখের কথা বলে কত দিলো কি দিলো, সব বলে-টলে চলে গেলো। যারা নমিনেশন নিয়ে এই ধরনের ট্রেড করেছে বা অকশনে দিয়েছে। তারা কি করে আশা করে তারা জয়ী হবে? কি করে আশা করে? আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, জাতির পিতা এই দেশে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ আর ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এই মোট ২৯টা বছর এই দেশের মানুষের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। অনেক কষ্ট পেয়েছে এদেশের মানুষ। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আমরা জাতির আদর্শ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি। আমরা জাতির পিতার নীতি অনুসরণ করে আমাদের দেশ পরিচালনা করে থাকি। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন আমাদের মূল লক্ষ্য। মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে, সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করেছি। আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালাও অনুসরণ করে পদক্ষেপ নিয়েছি বলেই বাংলাদেশ এত দ্রুত উন্নয়ন করতে পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, মাত্র দশ বছরের মধ্যে যদি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা উন্নত করেত পারি তাহলে অতীতে যারা এই ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা কেন পারে নাই? এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় প্রশ্ন। তার কারণ একটাই। তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেনি। যেখানে ৭৫’র ১৫ আগস্ট তারা জাতির পিতাকে হত্যা করে এই বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অর্জন মুছে ফেলতে চেয়েছিল। তাদের চক্রান্ত তাদের ষড়যন্ত্রের ফলেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের ব্যর্থতার কারণেই বাংলাদেশ অগ্রসর হতে পারেনি। যখন জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, তখনই এদেশের উন্নতি হয়েছে। মানুষের উন্নতি হয়েছে। এই উন্নয়নটা একেবারে গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে বড় সার্থকতা। যে কারণে আজকে বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। যার ফলে আমরা আবার দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পাচ্ছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণের প্রতি এবং ভোটারসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। আগামী ৫ বছর কঠিন পরীক্ষা ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ৫ বছর আমাদের জন্য কঠিন পরীক্ষা। যে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছি; এটা আমাদের অব্যাহত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। জনগণ আমাদের উপর আস্থা-বিশ্বাস রেখেছে; এই বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো-এই বিশ্বাস আমাদের আছে। তিনি বলেন, আজকে জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। তার আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই, এদেশের যে উন্নতি আমরা করেছি এবং সেটা যেন আরও অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে। এ লক্ষ্যে দলের সব নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করা প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা রাজনীতি করে গেছেন। তাঁর বই অসমাপ্ত জীবনী পড়লে দেখবেন একজন মানুষ তাঁর জীবনে কতখানি ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, একটি দেশের জন্য জনগণের জন্য। কারাগারে রোজনামচা পড়লেও দেখবেন কিভাবে তিনি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এ সময় ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন নিয়ে ‘সিক্রেটস অফ ডকুমেন্টস’ বইয়ের প্রকাশিত খন্ডগুলোও নেতাকর্মীদের পড়ার আহ্বান জানান তিনি। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, আজকে এদেশের মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে, তাদের বাসস্থান হবে। চিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ হবে। উন্নত জীবন পাবে, এটাই তো ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র উদ্দেশ্য। একটা দেশের যে জনগণ সব সময় বঞ্চিত ছিল তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা মহৎ আত্মত্যাগ করে গেছেন, সেই আত্মত্যাগ আমাদের ভুললে চলবে না। আমাদের সেটাই অনুসরণ করে চলতে হবে এবং দেশের মানুষ যদি ভাল থাকে, দেশের মানুষ যদি সুন্দর জীবন পায়-এর থেকে বড় সার্থকতা একজন রাজনীতিবিদের জীবনে আর কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, আজকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাবে। হয়ত জাতির পিতার দেখে যেতে পারলেন না। কিন্তু আমি এটা সবসময় বিশ্বাস করি, নিশ্চয়ই তিনি যে দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালবেসেছেন, হয়ত তিনি আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়ে তিনি আছেন, এই বাংলাদেশের ৫৪ হাজার বর্গমাইল জুড়ে তিনি আছেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা ছলছল চোখে আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘আমি জানি না; সেটা আমি উপলব্ধি করতে পারি, বঙ্গবন্ধু আছেন। নইলে আমার পক্ষে এত দ্রুত দেশের উন্নতি করা বা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এতটা অর্জন করা কখনও সম্ভব হতো না। আমি সবসময় মনে করি, আমার বাবা-মা, আমাকে সবসময় ছায়া দিয়ে রেখেছেন বলেই আজকে এটা সম্ভব হচ্ছে এবং নিশ্চয়ই তিনি বেহেশত থেকে দেখেন। শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা নির্বাচিত হয়েছি। আগামী ৫ বছর আমাদের জন্য কঠিন পরীক্ষা। আমাদের যে উন্নয়ন, যে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছি; এটা আমাদের অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং ২০২০ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের সময় বাংলাদেশ অবশ্যই একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলে ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়াও ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশকে আরও উন্নত করার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে। তিনি বলেন, এটা বাস্তবায়িত হতে থাকবে। বাংলাদেশেকে আর কেউ পেছনে টেনে নিতে পারবে না। বাংলাদেশের মাটিতে যেন আর কখনও ওই যুদ্ধাপরাধী, খুনী, সন্ত্রাসী, অগ্নিসন্ত্রাসী আর কখনও ফিরে আসতে না পারে দেশের মানুষকে সেইভাবে সজাগ থাকতে হবে এবং বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা শুরু, জাতির পিতার যে কথা বলে গেছেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও পারবে না। জাতির পিতার প্রতি এটাই আমাদের ওয়াদা। স্বাগত বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্র চলছে। কাজেই আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, প্রস্তুত থাকতে হবে। যাতে জনগণের এই বিজয়ের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র না হয় সেজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তার সততা ও আদর্শের যে দৃষ্টান্ত দেশ-বিদেশে স্থাপন করেছেন, সেটার ফসলই আমরা ঘরে তুলেছি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে। আমরা এ বিজয় উদযাপন করতে চাই। আগামী ১৯ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়াদী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশ সফল করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
×