ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বকেয়া বেতন দাবিতে চালক শ্রমিকদের বিক্ষোভ

খিলক্ষেতে বিআরটিসি বাস ডিপোতে তালা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৯ জানুয়ারি ২০১৯

খিলক্ষেতে বিআরটিসি বাস ডিপোতে তালা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নয় মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় জোয়ার সাহারা বিআরটিসির বাস ডিপোতে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করছেন চালক-শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকদের বিআরটিএ এবং চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এতে ডিপোর সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ধর্মঘটের কারণে ডিপো থেকে বিআরটিসি’র কোন বাস ছেড়ে যায়নি। উর্ধতন কর্মকর্তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে টানা ৮ ঘণ্টা পর শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়া বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। জানা গেছে, বকেয়া বেতন, বদলি বাণিজ্য বন্ধ, শ্রমিকদের জরিমানা বন্ধ করাসহ বেশ কিছু দাবিতে ডিপোতে চালক, মেকানিক ও কন্ডাক্টরসহ বিভিন্ন বিভাগের শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ডিপোর প্রধান ফটক বন্ধ করে ভেতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। এই কারণে এই বিআরটিসি ডিপো থেকে বের হয়নি কোন রুট বাস। এদিকে সকালে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিতে আসা প্রার্থীদেরও পরীক্ষা না দিয়েই চলে যেতে হয়। এর মধ্যে উত্তেজিত কিছু প্রার্থী ডিপোর প্রধান ফটক ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। শ্রমিকদের দাবি, ডিপোর প্রায় ৪০০ শ্রমিক গত নয় মাসের বেতন পাচ্ছেন না। এছাড়া বদলি বাণিজ্য এবং কারণে-অকারণে জরিমানা করা হয়। পুরনো শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করলেও নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়। তারা অভিযোগ করেন, বিআরটিএতে একটি নিয়োগ বাণিজ্য চক্র কাজ করছে। এসব সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। আর বেতন পরিশোধ এবং দাবি দাওয়া না মেনে নেয়া পর্যন্ত তাদের এই ধর্মঘট চলবে। একইসঙ্গে আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যে দাবি দাওয়া না মানলে কাল থেকে (বুধবার) দেশের সবক’টি ডিপোতে এই আন্দোলন ছড়িয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিকরা। আলাউদ্দিন নামে এক চালক বলেন, আমার চাকরির মেয়াদ বাকি আছে আর এক মাস। কিন্তু আমি নিজেই বেতন পাচ্ছি না গত দশ মাসের। জাতীয় পে- স্কেলে আমাদের বেতন হওয়ার কথা থাকলেও আমাদের বেতন হয় না। নিয়মিত বেতনের পাশাপাশি কোন ধরনের ইনক্রিমেন্ট এরিয়ার বিলসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও আমরা পাই না। সোহরাব আলী নামে আরেক চালক বলেন, বিআরটিসি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান না। কিন্তু এটিকে অলাভজনক করে দেখানো হচ্ছে। বিআরটিসির নিজস্ব যে সম্পদ আছে তা দিয়েই আমাদের বেতন দেয়া সম্ভব। আমরা প্রতিদিন বাস চালিয়ে লাভ উঠিয়ে নিয়ে এখানে দেই। কর্তৃপক্ষ পুরনো গাাড়ির মেরামত করে না। অথচ গাড়ির কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি হলে, ইঞ্জিন সিজ করলে, হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত আমাদের জরিমানা করা হয়। আমরা এক অমানবিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছি। আন্দোলনকারীরা জানান, ৯ মাসের বেতন বকেয়া। বাড়ি ভাড়া, থাকা খাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। বাচ্চাদের স্কুলের বেতন দিতে পারি না। কাজ করব, বেতন পাব না। সেটা তো হতে পারে না। বার বার কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়ে এলেও বকেয়া বেতন আর পরিশোধ করা হচ্ছে না। তাই আজ বাধ্য হয়ে তালা ঝুলিয়ে কর্মবিরতি পালন করছি। বিআরটিসির জোয়ারসাহারা ডিপো সূত্রে জানা গেছে, এই ডিপোতে একতলা, দ্বিতল এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলিয়ে ১২০টি সচল বাস রয়েছে। এসব যানবাহনের আয় থেকেই কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে লোকসানের কারণে এ ডিপোর প্রায় ৫০০ কর্মী দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাচ্ছেন না। বকেয়া বেতনের দাবিতে গত বছর জুলাই মাসেও একবার আন্দোলনে নেমেছিলেন বিআরটিসির জোয়ারসাহারা ডিপোর বাস চালকরা। তখন তাদের ১০ মাসের বেতন বকেয়া ছিল। সংস্থার চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া জানান, জোয়ার সাহারা ডিপোর কর্মীদের বেতন কেন বকেয়া, তা জানতে চেয়েছি। দ্রুত সমস্যা সমাধানে ডিপো ম্যানেজারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিআরটিসির জোয়ারসাহারা ডিপো ম্যানেজার মোঃ নূর আলম বলেন, চালক-শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি জানান, তাদের কিছু দাবি-দাওয়া আছে। এজন্য সকাল থেকেই তারা বিক্ষোভ করছেন। সকালে কোনো বাস ডিপো থেকে বের হয়নি। ডিপো ম্যানেজার মোঃ নূর আলম জানান, জোয়ারসাহারা ডিপো থেকে প্রতিদিন টঙ্গী-মতিঝিল, আবদুল্লাহপুর-মতিঝিল, কুড়িল বিশ্বরোড-পাঁচদোনা রুটে একতলা ও দ্বিতল বাস চলাচল করে। এছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্টাফ বাস হিসেবে এ ডিপোর বাস চলাচল করে। ধর্মঘটের কারণে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তিনি জানান, আমি এখানে দায়িত্বে আসার পর প্রতি মাসের বেতন দিয়েছি। আমার আগের ম্যানেজার সাত মাসে দুই মাসের বেতন দিয়েছেন। গত নয় মাসে চার কোটি টাকার বেতন বাকি। শ্রমিকদের বুঝতে হবে যে, এত বিশাল অংকের টাকা কোন সরকারের পক্ষে এক মুহূর্তে দেয়া সম্ভব নয়। কয়েক মাসের মধ্যে সরকার নতুন গাড়ি দিলে সেগুলো থেকে প্রাপ্ত লাভের টাকা দিয়ে দ্রুত বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলেও আশা করেন বিআরটিএ’র এই কর্মকর্তা। অন্যদিকে ধর্মঘটের খবর পেয়ে দুপুরে বিআরটিসির পরিচালক (অর্থ) ড. নাসিম হোসাইন এবং পরিচালক (কারিগরি) মাহবুবুর রহমান সকালে জোয়ার সাহারা ডিপোতে যান। এ ব্যাপারে খিলক্ষেত থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, বিকেল ৫টার দিকে আজকের (মঙ্গলবার) মতো ধর্মঘট প্রত্যাহার করে চলে গেছে। ওসি জানান, সকাল থেকে এখনও পর্যন্ত ভেতরে ও বাইরে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
×