ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

লন্ডন ষড়যন্ত্র ॥ শীর্ষে তারেক জিয়া

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

লন্ডন ষড়যন্ত্র ॥ শীর্ষে তারেক জিয়া

গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডসে বাংলাদেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা নিয়ে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। লন্ডনভিত্তিক সংস্থা স্টাডি সার্কেলের প্রধান এ্যাকাউন্ট্যান্ট সৈয়দ মোজাম্মেল আলীর সভাপতিত্বে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উভয় হাউজের কিছু সদস্য ছাড়া ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বেশকিছু সাংবাদিক। অনুষ্ঠানে আলোচিত বিষয়সমূহ ব্যাপক প্রচার পায়। সভায় বক্তৃতা দেয়ার জন্য নিমন্ত্রণ পেয়ে আমি দু’দিনের জন্য লন্ডন গিয়ে দুটি বিষয় অনুধাবন করলাম। প্রথমত. হাউজ অব লর্ডস এবং হাউজ অব কমন্সের উপস্থিত সদস্যগণ বাংলাদেশে উন্নয়নের জোয়ারের কথা, বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাস এবং মৌলবাদ দমনে অভূতপূর্ব ও অনুকরণীয় সাফল্যের জন্য উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো লন্ডন ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত। লন্ডনে যে এক গভীর ষড়যন্ত্র দানা বেঁধে উঠেছে পাকিস্তানী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রত্যক্ষ ইন্ধনে তা জানতে পারলাম। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী এই ষড়যন্ত্রের নেতৃত্বে রয়েছেন তারেক জিয়া। তার সঙ্গে রয়েছেন ’৭১-এর কুখ্যাত স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, ফটোগ্রাফার শহিদুল হকের ভাগিনী ড. দিলরুবা করিম, ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান প্রমুখ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইন্ধন যোগাচ্ছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং অধ্যাপক ইউনূস। ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজের মুখপত্র এশিয়ান ট্রিবিউন সাময়িকীতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এই ষড়যন্ত্রে জড়িত কুচক্রীদের মূল ভাবনা হচ্ছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ রাজনীতিকদের ওপর ভর করে শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর চেষ্টা করা। এ ষড়যন্ত্র সফল করার জন্য ব্যারিস্টার রাজ্জাক অফুরন্ত অর্থ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। লবিস্ট নিয়োগসহ অন্যভাবে এ অর্থ ব্যয় করছেন তিনি। বছর দু’য়েক আগে ব্যারিস্টার রাজ্জাক রহস্যময় কারণে দেশত্যাগ করার পর থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে একের পর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন বলেও এশিয়ান ট্রিবিউন পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে। সেখানে তিনি আমেরিকান কিছু রাজনীতিক ছাড়াও বিচারপতি সিনহার সঙ্গেও মিলিত হয়েছিলেন। লন্ডনে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের ঘনিষ্ঠজনের মধ্যে রয়েছে জামায়াতের নিযুক্ত ব্রিটিশ ব্যারিস্টার টবি কেডমেন যিনি জামায়াতের অর্থে বেশ ফুলেফেঁপে উঠেছেন এবং খালেদা জিয়া নিযুক্ত আইনজীবী লর্ড কারলাইন, যাকে ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ড. কামাল জামাতা ডেভিড বার্গম্যানের রয়েছে ব্রিটিশ মিডিয়া জগতের বেশ কিছু লোকের সঙ্গে সখ্য। ফটোগ্রাফার শহিদুল আলম, যিনি এবং যার আপনজনরা এখন তাকে পরিচিত করাচ্ছেন সাংবাদিক হিসেবে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য। তিনি লন্ডনে না থাকলেও তার কিছু আত্মীয় যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন তার ভাগিনী ড. দিলরুবা করিম, যিনি শহিদুল আলমের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছেন। এশিয়ান ট্রিবিউন শহিদুল আলমের পরিচিতি উল্লেখ করতে গিয়ে যা লিখেছেন তা হলো এই- যদিও এই ব্যক্তি কখনও কোন সাংবাদিক ছিলেন না বা মানবাধিকার কর্মীও ছিলেন না, তবুও তার সমর্থক কিছু বিতর্কিত গোষ্ঠী তাকে সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মী হিসেবে উল্লেখ করার চেষ্টায় লিপ্ত। এশিয়ান ট্রিবিউন উল্লেখ করেছে, আইএসআই সাজিদ ইস্পাহানী নামক এক ব্যবসায়ীর সাহায্য নিয়ে শহিদুল আলমকে ভাড়া করে। পত্রিকাটি আরও লিখেছে, শহিদুল এমন এক পরিবারের সদস্য যে পরিবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী ছিল অর্থাৎ পাকিস্তানী কলাবরেটর ছিল। তার মা ডাঃ আনোয়ারা মুনসুর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর কলাবরেটর ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিকের সঙ্গে জোরালো সংযোগ রক্ষা করতেন। এশিয়ান ট্রিবিউন আরও লিখেছে, শহিদুলের নানা আব্দুস সবুর খান বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এশিয়ান ট্রিবিউন অনুযায়ী আল জাজিরাই শহিদুলকে ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে যুক্ত হতে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যাতে শহিদুল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পান, যার ধারাবাহিকতায় শহিদুল বাংলাদেশের সাংবাদিকদের ‘গডফাদারে’ পরিণত হতে পারেন। সূত্রসমূহের খবরে প্রকাশ, ব্যারিস্টার রাজ্জাক প্রথমেই চিহ্নিত করেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ এমপিকে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের সঙ্গে তার সংযোগের জন্য। তিনি হাউজ অব কমন্সের কমিটি রুমে ১৭ ডিসেম্বর একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেন, যার শিরোনাম ছিল ‘আমাদের সময় বাকস্বাধীনতা’। সভায় শহিদুলের উল্লেখিত ভাগিনীও ভাষণ দেন। এই সভার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রচার ছড়ানো, যার ফলে জিহাদপন্থী জামায়াত, তাদের রাজনৈতিক এবং আদর্শিক দোসর বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী তারেক জিয়া আইএসআই’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। ইতোপূর্বে এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, বিচারপতি সিনহা যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণামূলক ভাষণ দেবেন। কিন্তু আমেরিকান ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সিনহাকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি না দেয়ায় তার আর যুক্তরাজ্যে আসা হয়নি। তাই এখন বিচারপতি সিনহা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর। কাজটি তিনি প্রতিনিয়তই করে যাচ্ছেন। তিনি তার ফেসবুক এবং টুইটারের মাধ্যমে আওয়ামী বিরোধী বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং সম্ভব হলে বিভিন্ন সভায়ও বক্তব্য দিচ্ছেন। তবে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং স্বাধীনতা বিরোধী পিস কমিটির এই সদস্যদের কথায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কেউ কর্ণপাত করে না বলেই বিজ্ঞজনদের বিশ্বাস। বিএনপি-জামায়াতও তাকে প্রচুর উপঢৌকন দিচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য মহলের কাছে তথ্য রয়েছে। উপঢৌকন প্রদানকারীদের অন্যতম হলেন যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ভ্রাতা। দুর্নীতির শিরোমণি নামে পরিচিত তারেক জিয়ার কাছে অর্থের অভাব কখনও ছিল না, এর ওপর তিনি সম্প্রতি বিএনপির নমিনেশন প্রদান করে পেয়েছেন প্রচুর অর্থ। আর ব্যারিস্টার রাজ্জাকের কাছে তো রয়েছে মির কাসেম আলী, সাকা চৌধুরী গংসহ অন্য যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদের পাহাড়। এরা দু’জন এখন এই অর্থ ব্যবহার করছে আওয়ামী বিরোধী ষড়যন্ত্রে। তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাত করার সংকল্প নিয়েই ২০ ডিসেম্বর হাউজ অব লর্ডসের সভা অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘স্টাডি সার্কেলের’ প্রচেষ্টায়। ইতোপূর্বে ওই সংস্থা বাংলাদেশে গত ১০ বছরে যেসব ক্ষেত্রে উন্নয়নের যুগান্তকারী এবং অনুকরণীয় পরিবর্তন এনে দেশকে অভূতপূর্ব উন্নয়নের দিকে নিয়ে যায়, তার তথ্য সমর্থিত বর্ণনা দিয়ে একটি বর্ণাঢ্য প্রতিবেদনমূলক পুস্তিকা প্রকাশ করে, সেটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ান, সাংবাদিক এবং বিশিষ্টজনদের মধ্যে বিতরণ করে বর্তমান সরকারের ব্যাপারে তাদের মনোভাব প্রভাবিত করতে সক্ষম হওয়ায়, তারেক গংয়ের ষড়যন্ত্র বহুলাংশেই ভেস্তে যাওয়ার পথে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ বিশিষ্টজনরা। লেখক : আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি
×