ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামান টাওয়ারে ভয়াবহ আগুন, ব্যাপক ক্ষতি ॥ কেউ হতাহত হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

 জামান টাওয়ারে ভয়াবহ আগুন, ব্যাপক ক্ষতি ॥ কেউ হতাহত হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর পুরানা পল্টনের প্রীতম-জামান টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে ব্যাপক ক্ষতি হলেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ভয়াবহ আগুনের হাত থেকে বাঁচতে সতেরো তলা ভবনটির ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন অন্তত ২০ জন। তাদের ফায়ার সার্ভিস অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। ভবনটিতে জিটিভির মালিকাধীন সারাবাংলা ডট নেট নামের অনলাইন পত্রিকা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অফিস রয়েছে। আগুন লাগার কারণে পুরো ভবনটির সব অফিসের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি উদ্দেশ্যমূলক বলে দাবি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা যাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ভোট দেন, এজন্যই এমন গুজব ছড়াচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শুক্রবার রাজধানীর পল্টন থানাধীন পুরানা পল্টনের ২৭/২ নম্বর প্রীতম-জামান টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের এই ঘটনা। ভবনটির ছাদ থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক উদ্ধার হওয়া কিরণ (৪০) জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি ভবনটির একটি অফিসে চাকরি করেন। বসবাস করেন ভবনটিতেই। শুক্রবার থাকায় ভবনটির অধিকাংশ অফিস বন্ধ ছিল। দুপুর দেড়টার দিকে ভবনটির আট তলা থেকে সামান্য ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। ঘটনাটি স্বাভাবিক মনে করে তিনি সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তার সঙ্গে ভবনটিতে থাকা অনেকেই সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আস্তে আস্তে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। কিন্তু বেলা পৌনে দুইটার দিকে ওই ফ্লোরটি থেকে ব্যাপকভাবে ধোঁয়া বের হতে থাকে। ধারণা করা হয়, ভেতরে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। এ সময় তিনিসহ ভবনে থাকা অন্তত ২০ জন সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে প্রচন্ড ধোঁয়ার কারণে আর নামতে পারেননি। পরে তারা ভবনটির ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেন। ফায়ার সার্ভিসের দুটি মই দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকার সহকারী পরিচালক মামুন মাহমুদ জানান, ভবনটির আট তলায় থাকা ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিং কোম্পানির কার্যালয় থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বেলা পৌনে তিনটার দিকে আগুন ভবনটির ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের দশটি ইউনিট বিকেল পাঁচটার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তারপরেও ভবনটি থেকে প্রচন্ড বেগে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছিল। ভবনটির ১৫ তলায় সারাবাংলা ডট নেট নামের একটি অনলাইন পত্রিকার অফিস রয়েছে। ভবনটির ভেতরে থাকা ক্যাবলে আগুন লেগে যাওয়ার কারণে আগুন নিভে গেলেও কালো ধোঁয়া বের হচ্ছিল। ভবনটির একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভবনটির লিফটের লেভেল থ্রিতে (চতুর্থ তলায়) বিএনপি ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অফিস রয়েছে। অফিসটিতে নির্বাচন সামনে রেখে সকাল থেকেই টানা বৈঠক হচ্ছিল। যদিও বৈঠকে জাতীয় পর্যায়ের কোন নেতা উপস্থিত ছিলেন না। দুপুর একটা নাগাদ বৈঠক চলে। এরপর নামাজের জন্য এবং দুপুরের খাবারের জন্য বিরতি দেয়া হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী দুপুরের খাবারও খান ওই অফিসে। খাবার খেয়ে অনেকে অফিসেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। অনেকে চলেও গেছেন। খানিক পরেই ভবনটির আটতলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। তবে ভবনটিতে আগুন লাগার সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অফিস থাকা বা ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক হওয়ার কোন সম্পর্ক থাকার বিষয়াদি নেই। যদিও শুক্রবার বিকেলে প্রীতম-জামান টাওয়ারে অগ্নিকা-ের ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক বলে দাবি করা হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তরফ থেকে। ঐক্যফ্রন্টের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা লতিফুল বারী হামিম সাংবাদিকদের বলেন, জামান টাওয়ারের অষ্টম তলায় আগুন লেগেছে। ঐক্যফ্রন্টের অফিসের সঙ্গে আগুন লাগার কোন সম্পর্ক নেই। তবে আমরা মনে করছি এটি উদ্দেশ্যমূলক! ঐক্যফ্রন্টের কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন ঘটনা ঘটানো হতে পারে। কারণ আগুন লাগার কারণে ভবনটির বিদ্যুত, পানি ও ইন্টারনেটসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লিফট বন্ধ করা হয়েছে। এটি একটি অজুহাত তৈরি করার জন্য করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তরফ থেকে বলা হচ্ছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সারাদেশের ভোটারদের মনে জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা করছে। ভোটাররা যাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ভোট দেন, এজন্য ভোটারদের কাছে সরকার সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টই হয়ত পরিকল্পিতভাবে ভবনটিতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। নির্বাচনে ভোটারদের পক্ষে টানতেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এমন নাশকতার কৌশল নিতে পারে।
×