ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন হেফাজতে এক মাসে দ্বিতীয় ঘটনা ॥ তদন্ত দাবি

আরেক শরণার্থী শিশুর মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

আরেক শরণার্থী শিশুর মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মার্কিন সরকারী হেফাজতে থাকা গুয়াতেমালার একটি ছেলে শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির নাম ফিলিপি এ্যালোনজো গোমেজ (৮) বলে জানিয়েছেন টেক্সাসের কংগ্রেস সদস্য। বিবিসি। এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো অভিবাসী শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। যুক্তরাষ্ট্র- মেক্সিকো সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় তাকে আটক করা হয়। আগের ঘটনাটিও গুয়াতেমালার মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে ঘটেছিল। জ্যাকেলিন ক্যাল (৭) নামে এক শিশুকে হেফাজতে নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার মৃত্যু হয়। টেক্সাসের কংগ্রেস সদস্য জোয়াকুইন ক্যাস্ট্রো ছেলেটির মৃত্যুর জন্য কংগ্রেসের তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করি এবং মার্কিন হেফাজতে থাকা যে কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদান করি। বৈধ বন্দর দিয়ে লোকজনকে প্রবেশ করা থেকে দূরে রাখতে প্রশাসনিক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, নতুবা সীমিত করা হয়েছে। এতে করে শরণার্থী পরিবার ও শিশুদেরকে বড় ধরনের বিপদে ফেলে দেয়া হচ্ছে। মার্কিন কাস্টম এ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন জানিয়েছে, গুয়াতেমালার ছেলে শিশুটি সোমবার মধ্যরাতের কিছু পরে মারা যায়। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, সোমবার শিশুটির মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়। এতে আরও বলা হয় যে, শিশুটিকে ও শিশুটির বাবাকে নিউ মেক্সিকোর আলামেদোরদোর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুটির ঠা-া ও জ্বরের জন্য আমোক্সিলিন ও আইবুপ্রোফেন দেয়া হয়। সোমবার বিকেলে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। সোমবার সন্ধ্যায় বমি করা শুরু করলে তাকে আবার হাসপাতালে পাঠানো হয়। কয়েক ঘণ্টা পরই সে মারা যায়। সংস্থাটি জানিয়েছে, মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করা হয়নি। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ইন্সপেক্টর জেনারেল ও গুয়াতেমালার সরকারকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। হাজার হাজার অভিবাসী মধ্য আমেরিকা থেকে সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে মার্কিন সীমান্তের কাছে যাচ্ছে। অভিবাসীরা বলছে, তারা নিজ দেশে নিপীড়ন, দারিদ্রতা ও সংঘাত থেকে বাঁচতে পালিয়েছে। যেসব দেশ থেকে অভিবাসীদের ঢল নামছে তার মধ্যে গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদর অন্যতম। অনেক অভিবাসী জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করা। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কমকর্তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, অবৈধভাবে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে যে কাউকে আটক, মামলা ও নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। ডিসেম্বরের শুরুতে মধ্য আমেরিকান শরণার্থীদের একটি দলের অংশ হিসেবে জ্যাকেলিন তার বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত পাড়ি দেয়। অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ায় তাদেরকে হেফাজতে নেয়া হয়। তাদের যখন হেফাজতে নেয়া হয় তখন জ্যাকেলিনের জ্বর ছিল। কয়েক দিন পরে তার যকৃত অকার্যকর হয়ে যায় এবং সে মারা যায়। ওয়াশিংটন পোস্ট সর্বপ্রথম তার মৃত্যুর খবর প্রচার করে। এক সীমান্ত কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, ডিহাইড্রেশনে যকৃত অকেজো হয়ে সে মারা যায়। হেফাজতে নেয়ার পর থেকে সে কিছুই খায়নি। শুধু পানি খেয়ে কয়েকদিন বেঁচে ছিল। তার জ্বরের তাপমাত্র ছিল এক শ’ পাঁচ দশমিক সাত ফারেনহাইট (৪০ দশমিক নয় ডিগ্রী সেলসিয়াস)। জ্যাকেলিনের বাবা নেরাই এখনও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে থাকতে পারবেন কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। এই সপ্তাহে গুয়াতেমালায় জ্যাকেলিনের মৃতদেহ ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার নিজ এলাকা সান এ্যান্তোনিও সেকোরটেজ গ্রামে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হাজার হাজার অভিবাসী আগমনের পর থেকে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে মার্কিন সীমান্ত এজেন্টরা জড়ো হওয়া অভিবাসীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ওই অভিবাসী দলের মধ্যে শিশুরাও ছিল। যারা যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছিল। এজেন্টরা জানিয়েছে যে, তাদের এক কর্মকর্তার ওপর হামলা ও পাথর নিক্ষেপ করায় তারা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সমালোচকরা ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। মেক্সিকো ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে।
×