ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডলার সঙ্কটে বিপিসির এলসি খুলছে না ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৭:৫৯, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

 ডলার সঙ্কটে বিপিসির  এলসি খুলছে না ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ডলার সঙ্কটে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খুলতে চাইছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বিপিসির অভিযোগ, ডলারের সঙ্কটের কথা বলে বিদেশী খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি ও সিটি ব্যাংক এনএ এবং বেসরকারী খাতের ওয়ান ব্র্যাক ও প্রাইম ব্যাংক প্রায় ছয় মাস তাদের এলসি খোলা থেকে বিরত আছে। আগস্ট থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এলসি খুললেও বর্তমানে তারাও অপারগতা প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতির কথা বলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও তাদের এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করছে এবং এলসি খুলতে ডলারের মার্কেট রেট দাবি করছে। এতে জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে নবেম্বরের শেষ সপ্তাহে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি পাঠান বিপিসির চেয়ারম্যান মোঃ সামছুর রহমান। এর পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এদিকে বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে কোন ডলার সঙ্কট নেই বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, তিন থেকে চার মাস আগে ডলার সঙ্কট থাকলেও এখন নেই। এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান মোঃ সামছুর রহমান বলেন, ডলার সঙ্কটের কথা বলে ব্যাংকগুলো বিপিসির এলসি খুলতে গড়িমসি করছে। তাই এ বিষয়ে চিঠিতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলো বিপিসির এলসি খুলছে না কেন সেটি আমি বলতে পারব না। তবে বাজারে এখন ডলারের কোন সঙ্কট নেই। তিন থেকে চার মাস আগে সঙ্কট কিছুটা ছিল। তাছাড়া ডলারের যদি কোন সঙ্কট থাকত তবে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা সেটা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাত। সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় প্রায় সব ব্যাংকেরই প্রধান নির্বাহী উপস্থিত ছিলেন। তারা তো এ বিষয়ে কিছুই বলেননি। বিপিসির চিঠিতে বলা হয়, বিপিসি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি করে সরকার নির্ধারিত হ্রসাকৃত মূল্যে সারাদেশে সরবরাহ করে থাকে। এ রাষ্ট্রীয় গুরুদায়িত্ব পালনে ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিপিসিকে জ্বালানি তেল আমদানি ও অর্থায়নে সর্বাঙ্গীন সহায়তা প্রদান করে আসছে। তবে পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে বিদেশী খাতের এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও সিটি ব্যাংক এনএ এবং বেসরকারী খাতের ব্র্যাক, ওয়ান ও প্রাইম ব্যাংক ডলার সঙ্কট উল্লেখপূর্বক এলসি খোলা থেকে বিরত আছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ আগস্ট থেকে একটি করে এলসি খুলে এলেও বর্তমানে তারাও এলসি খুলতে পারবে না মর্মে বিপিসিকে অবহিত করে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক জ্বালানি তেলের এলসি খুলে এলেও তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে মর্মে ডলারের মার্কেট রেট দাবি করছে। এছাড়া বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো অন্য উৎস হতে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে না পারায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক হতে চাহিদামতো বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ না করায় প্রায় প্রতিটি এলসির পেমেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইটিএফসি) রিপেমেন্ট সময়মতো করছে না। প্রতিটি পেমেন্টেই ব্যাংকগুলো ১০ থেকে ১২ দিন বিলম্ব করছে। এতে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বিলম্বজনিত চার্জ এবং কার্গোর ফাইন্যান্সিয়াল হোল্ডের কারণে ড্যামারেজ দিতে হবে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং দেশে জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থায় জ্বালানি তেল আমদানির চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এবং যথাসময়ে আইটি এফসির ঋণ পরিশোধ, এলসি খোলা ও এলসি মূল্য পরিশোধের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাধ্যমে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করা হয় ওই চিঠিতে।
×