ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে ঢাকায় পোস্টার লাগাচ্ছে না বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

 নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে ঢাকায় পোস্টার লাগাচ্ছে না বিএনপি

রশিদ মামুন ॥ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে রাজধানী ঢাকায় পোস্টার টানাচ্ছেন না ধানের শীষের প্রার্থীরা। কোদাল, হাত পাখা, লাঙ্গল, নৌকার পোস্টার থাকলেও ঢাকার কোথাও ধানের শীষের পোস্টার চোখেই পড়ছে না। প্রশ্ন উঠেছে দেশের অন্য এলাকায় ভোটের প্রচারে ধানের শীষের পোস্টার থাকলেও কেন নেই ঢাকাতে! বিএনপি বলছে পোস্টার লাগাতে গেলেই পোস্টার কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিএনপি কোন ছেঁড়া বা আগুনে পোড়া পোস্টার দেখাতে পারেনি। সংবাদ মাধ্যমেও বিএনপিকে ঢাকায় পোস্টারই লাগাতে দেয়া হচ্ছে না এ সংক্রান্ত কোন খবরও প্রকাশিত হয়নি। বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে পোস্টারের একটি বিশেষ ভ‚মিকা রয়েছে। সাধারণত নির্বাচনের আগে কোন এলাকার রাস্তা দিয়ে হাঁটলেই বোঝা যায় কারা কোন প্রতীকে নির্বাচন করছেন। অতীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমানভাবে পোস্টার লাগালেও এবার ঢাকার নির্বাচনে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। রাস্তার-রাস্তায় যেভাবে নৌকার পোস্টার এবং প্রচার দেখা যাচ্ছে তার বিপরীতে কোথাও ধানের শীষের কোন পোস্টার চোখে পড়ছে না। পুলিশ বা বিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের ভয়ে পোস্টার লাগানো যাচ্ছে না এ ধরনের অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করা হয়। সাধারণত পোস্টার গভীর রাতে লাগানো হয়। এত রাতে বিপক্ষ দলের কারো পাহারা দেয়ার বিষয়টি হাস্যকর। এর আগে ঢাকার রাস্তায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনও পোস্টার লাগিয়ে গেছে। সঙ্গত কারণে পোস্টার লাগানোকে যতটা কঠিনভাবে বিএনপি প্রচার করছে আদৌও তা ঠিক নয়। একাধিক সূত্র বলছে, ঢাকা দেশের প্রাণ কেন্দ্র। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ঢাকায় রয়েছেন। এছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা প্রথমে ঢাকাতেই আসবেন। ঢাকার পরিবেশ বিরোধী দলের অনুক‚লে নেই এমনটি প্রমাণ করতে পারলেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা সহজ হবে। বিরোধী দলের প্রধান নেতা খালেদা জিয়া দুর্নীতির অভিযোগে সাজা ভোগ করছেন। তার ছেলে তারেক রহমানও দুর্নীতি এবং ভয়াবহ একুশে আগস্ট হামলায় ॥ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তৃণমূলেও দলটির বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে নির্বাচনে জয়ের আশা বা সরকার গঠনের কোন প্রত্যাশার চেয়ে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করাই বিএনপির এখন মূল উদ্দেশ্য। আর সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের একটি পদক্ষেপ হচ্ছে পোস্টার লাগানো থেকে বিরত থাকা। বিষয়টিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ধানের শীষের কোন পোস্টার দেখা যায়নি। বিভিন্ন এলাকার সাধারণ বাসিন্দারা বলছেন তারা কেউ ধানের শীষের পোস্টার লাগাতেও দেখেনি। এমনকি তুলেও ফেলতে দেখেননি। তাহলে বিএনপি যে তুলে ফেলার অভিযোগ করছে তার সত্যতা নেই বলে মনে করা হয়। ঢাকা-৯ এর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আফরোজা আব্বাস। তিনি মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী। এবার প্রথমবার তিনি ধানের শীষের মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কেন বিএনপি পোস্টার লাগাচ্ছে না জানতে চাইলে বলেন, আমাদের পোস্টার লাগাতে দেয়া হচ্ছে না। যারাই পোস্টার লাগাচ্ছে তাদেরই ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনে তার প্রচারের খবর জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ থেকে মাইক নামানো হয়েছে। তিনি নির্বাচনের মাঠে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান। শুক্রবারও তিনি নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় সন্ধ্যায় জানান, তিনি নির্বাচনী প্রচার শেষে বাসায় এসে নামাজ পড়ছিলেন। শুক্রবার নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি বলেন, তিনি প্রতিদিনই নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন, আগামীতেও একইভাবে প্রচার চালিয়ে যাবেন। এই বক্তব্যর পর প্রশ্ন উঠতেই পারে নির্বাচনে প্রচার চালানো গেলে কেন পোস্টার লাগানো যাবে না। শুধু আফরোজা আব্বাসই নয় ঢাকার নির্বাচনের মাঠে প্রতিদিনই বিএনপি প্রার্থীরা গণসংযোগ করছেন। ঢাকা-৫ এর বিএনপি প্রার্থী নবিউল্লাহ নবী শুক্রবার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি বাসায় ঘুমালেও ভোট পাবেন। গুলশান বনানীতে স্ত্রীসহ মাঠে নেমেছেন ধানের শীষের প্রার্থী আন্দালিব রহমান পার্থ। নির্বাচনী প্রচারে তিনি নিজ হাতে লিফলেট বিতরণ করলেও পোস্টার চোখে পড়েনি তারও। ঢাকা-৭ এ নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাজি সেলিম আর ধানের শীষে নির্বাচন করছে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু। এই আসনটির প্রায় সব জায়গাতে ঘুরে কোথাও ধানের শীষের কোন পোস্টার দেখা যায়নি। কিন্তু যথারীতি নৌকার পোস্টার আছে রাস্তায় রাস্তায়। বংশালের একটি সাইকেল দোকানের কর্মচারী রবিন বলেন, তিনি ধানের শীষের কোন কর্মীকে কখনওই পোস্টার লাগাতে আসতেই দেখেনি। অন্যদিকে তার মাথার ওপরই নৌকার পোস্টার তার সামনেই টানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মোস্তফা মহসীন মন্টুকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। ঢাকা-১১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী একেএম রহমত উল্লাহ আর বিএনপি প্রার্থী কমিশনার আব্দুল কাইয়ূম এর স্ত্রী শামিম আরা বেগম। আব্দুল কাইয়ূম বিদেশী নাগরিকে হত্যাকান্ডর নির্দেশ দাতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। কাইয়ূমের অনুপস্থিতে তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। আসনটির রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা এলাকা ঘুরে কোথাও ধানের শীষের প্রার্থীর কোন পোস্টার দেখা যায়নি। অন্যদিকে আসনটির প্রায় সব রাস্তায় নৌকার পোস্টার দেখা গেছে। বনশ্রী সি ব্লকের একজন ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, তাদের এখানে তিনি কখনও কাউকে ধানের শীষের পোস্টার লাগাতে দেখেননি। সকাল ৯টায় তিনি বাসা থেকে সি এবং ডি বøকের মাঝের রাস্তায় দোকানে আসেন। আর বাসায় যান রাত ১১টার পর। এর মধ্যে কোন দিনই পোস্টার লাগাতে গিয়ে কার সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এমনটি তিনি দেখেননি আবার শোনেনওনি। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ওরা (বিএনপি) নেতারা মনে করেন যারা ভোট দেবে তারা এমনিতেই দেবে পোস্টার লাগানোর কোন দরকার নেই। তাই বলে একটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির মতো বড় দল পোস্টারই লাগাবে না, এমন প্রশ্নে মাহবুব বলেন, লাগাচ্ছে তো কিন্তু তারা তো এক সেকেন্ড পরই ছিঁড়ে ফেলছে। কোথায় ছিঁড়ে ফেলছে। সেই ছেঁড়া পোস্টারওতো ঢাকার কোথাও চোখে পড়ছে না এমন উত্তরে মাহবুবুর রহমান বলেন, আসলে মানুষ যা দেখে তাই বিশ্বাস করে। তারা মনে করছে এইগুলো লাগিয়ে আরও তাদের (আওয়ামী লীগ) সঙ্গে শত্রুতা সৃষ্টি হবে। আমরা শান্তিবাদী মানুষ আমরা শন্তিতে থাকতে চাই। এর মানে কি বিএনপি আসলেই কোন পোস্টার লাগায়নি জানতে চাইলে তিনি দ্রুত ফোন কেটে দেয়ার তোড়জোড় করলে পাশ থাকে তার স্ত্রী বলেন, না না প্রতিদিনই লাগায় প্রতিদিনই ছিঁড়ে ফেলে। সেই ছেঁড়া পোস্টারও কি কোন দিন দেখেছেন জানতে চাইলে তিনি দ্রুত ফোন কেটে দেন।
×