ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবারের শীত হেলেদুলে সময় পার করছে জোটবদ্ধ বসন্তের সঙ্গে

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

এবারের শীত হেলেদুলে সময় পার করছে জোটবদ্ধ বসন্তের সঙ্গে

সমুদ্র হক ॥ দিন কয়েক আগেও শীত ছিল না। হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরবঙ্গে শীত না আসায় উদ্বিগ্ন ছিলেন অনেকে। অবশেষে ‘পেথাই’ নামের এক ঘূর্ণিঝড় পৌষের মাঝপথে এসেই শীত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এবারের শীত হেলে-দুলে আরাম-আয়েশে কোন রকমে সময় পার করে দিচ্ছে। আবহাওয়াবিদগণ বলছেন, শৈত্যপ্রবাহ বইবে। আকাশের মেঘের ভাষা বলছে আরেক কথা। জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলদেশের ঋতুর অবস্থা কাহিল। গ্রীষ্মটা বোঝা যায়। আষাঢ়ের বর্ষা যে কখন আসে! শরত হেমন্ত মুখ লুকিয়েই থাকে। শীতের অবস্থাও ওদের মতো। এই এলো আর গেল। ঋতুর রেল স্টেশনে থামতে হবে বলে থেমেছে। বসন্ত টিকিয়ে রেখেছে তরুণ-তরুণী আর কবি সাহিত্যিকরা। বহু আগে ইংরেজ কবি পার্সি বিসি (পিবি) শেলী লিখেছেন ‘ইফ উইন্টার কামস ক্যান স্প্রিং বি ফার বিহাইন্ড (শীত যদি আসে বসন্ত কি খুব পেছনে)’। কবিতার এই পঙ্ক্তি বুঝি একবিংশ শতকের শীত। বলছে- বসন্ত তো আমার সঙ্গেই। যেন জোটবদ্ধ প্রকৃতি। বাংলাদেশে এবারের শীত এনেছে নির্বাচন। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এই নির্বাচন উষ্ণতা নিয়ে আসে। এবারও নির্বাচনী উষ্ণতা শীতের থাবাকে থামিয়ে দিচ্ছে। গ্রাম থেকে নগরী, শীতকে ঠেকিয়ে দিয়ে চলছে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম। এখন মৌসুমের ছোট দিন। কুয়াশায় ঢাকা। গোধূলি বেলার দেখা নেই। বিকেলও বোঝা যায় না। দ্র‍ুত ধেয়ে আসে সন্ধ্যা। মাথায় হাত দিলে টের পাওয়া যায় শিশির। মাঝ রাতে বগুড়া শহরতলি এলাকায় শিয়ালের ডাকও শোনা যায়। তবু থেমে নেই নির্বাচনী উষ্ণ হাওয়া। এর বাইরে মৌসুমি শীতকাল নগরী মহানগরীতে প্রায় অনুপস্থিত। কংক্রিটের বনের ঢাকা মহানগরীতে জলাশয় কমে যাওয়া, যান্ত্রিক যানবাহনের নিত্যদিনের ইঞ্জিনের সৃষ্ট তাপ মিলিয়ে তাপাঞ্চল সৃষ্টি করেছে। তাপমাত্রা সব সময়ই বাড়তি থাকে। যে কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ঢাকা মহানগরীতে শীত কিছুটা কম অনুভ‚ত হয়। তবে গ্রাম ও নদী তীরবর্তী এলাকায় আহা উহু শব্দে ও ঠকঠক করে কাঁপুনিতে শীত অনুভব করা যায়। গায়ে সোয়েটার চাঁদর চড়িয়ে চলতে হয়। গৃহস্থ ও কিষাণ বাড়ির উঠানে খড়, লতাপাতা জ্বালিয়ে চারধারে বসে গল্পগুজবে শরীর উষ্ণ করে নেয় লোকজন। গ্রাম এখন উন্নত। সেদিনের সেই খড়ের চালার বেড়ার ঘর নেই। বেশিরভাগ বাড়ি টিনশেডে ইটের গাঁথুনির। জানালা দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকে লেপ কাঁথার মধ্যে ঢুকলেই হলো। শীত জেঁকে বসতে পারে না। প্রবীণরা বলছেন- সেই শীত কী আর আছে! নিকট অতীতে শীত বছরে মাস তিনেক থাকত। আর এখন! এই এলো আর গেল! আবহাওয়াবিদগণ তাই বলছেন, শীতের সময়কাল কমে যাবে। কারণ! জলবায়ু পরিবর্তন। এভাবে প্রকৃতিতে পরিবর্তনের পালা শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মেও কুয়াশাপাত হয়েছে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এবারের শীতের আগের ঋতু হেমন্ত শান্ত থাকেনি। হেমন্তে ছিল চড়া রোদ ও বৃষ্টি। বোঝাই যায়নি এটা কোন ঋতু। সাধারণত শীতের ছোঁয়া মেলে অগ্রহায়ণে। কুয়াশাপাত ছিল এলোমেলো। অনেকে বুঝতেই পারেনি পৌষের শুরুটা। আবহাওয়া বিভাগ জানাচ্ছে, শীতের প্রবেশ দুয়ার হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলে উত্তরে বাতাস সক্রিয় হলে জলীয় বাষ্প শুষে নেবে। তখন শীত বাড়বে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। জানুয়ারির মধ্যভাগে (মাঘ মাস) তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শীত মৌসুমে গ্রামীণ জীবনের বিনোদন ও মেলাগুলো এবার দেরিতে শুরু হচ্ছে। ব্রিটিশ কবি এডিথ সিথওয়ে লিখেছেন-শীত হলো স্বাচ্ছন্দ্য উষ্ণতা ভাল খাবারের সময়। আগুনের পাশে বসে গল্প করার সময়। শীত দ্রুত ঘরে ফিরে আনে। শীতের দুধের পিঠা, নারকেলের পিঠা, পাটি সাপটা, কুসলি পিঠা, ভাঁপা পিঠা, কত রকমের বাহারি নক্সি পিঠা। বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে শীতের ওপর। বিশ্ব উষ্ণায়নের পথে যাচ্ছে। কার্বন, মিথেন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি গ্যাস বাতাসে জমা হয়ে সূর্যতাপকে ধরে রাখছে। ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাযুমন্ডল। গলে যাচ্ছে জমাট বরফ। হিমালয়ের বরফ গলতে শুরু করেছে। অস্বাভাবিক পরিবর্তন হচ্ছে জলবাযুর গতি প্রকৃতি। গোটা বিশ্বের জলবায়ুর প্যাটার্ন পাল্টে গিয়েছে। বাংলাদেশেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বেড়ে ২ থেকে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ঠেকেছে। বাতাস উত্তপ্ত হচ্ছে। বায়ুমন্ডলে আর্দ্রতা বেড়ে যাচ্ছে। আরেকদিকে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতও তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। জলবায়ুর এই অবস্থায় শীত আর টেকে কেমন করে!
×