ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভজন সরকার

জামায়াত মুখ, ঐক্যফ্রন্ট মুখোশ

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

জামায়াত মুখ, ঐক্যফ্রন্ট মুখোশ

বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট এ ত্রয়ী সঙ্গমে ঘুরপাক খাচ্ছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রথম থেকেই ড. কামাল হোসেন এবং তার সহযোগীরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতকে নিয়ে এক অপকৌশলী পথ অবলম্বন করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু রাজনীতি থেকে প্রায়-নির্বাসিত এসব তথাকথিত হেভিওয়েট নেতারা ভুলেই গিয়েছেন যে, সত্য বড় কঠিন এবং সে কঠিন সত্যকে মিথ্যের মোড়কে ঢেকে দেয়া কখনই সম্ভব নয়। আর সেই কঠিন সত্যই এখন কঠিনতর থেকে কঠিনতম হয়ে আঘাত করছে তাঁদের প্রগতিশীলতার মুখোশেই। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত-শিবিরের মুখ এখন মুখোশের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে ব্যঙ্গ করছে প্রগতিশীলতার আবরণে ঢাকা জনবিচ্ছিন্ন নেতা ড. কামাল হোসেন, আসম রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, কাদের সিদ্দিকী প্রমুখকে। অনেকেই এক সময় হয়ত বিশ্বাস করতে চেয়েছিলেন যে, দুর্নীতির দায়ে দ-প্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়া এবং দুর্নীতি ও নাশকতার দায়ে দ-িত পলাতক তারেক রহমানের অবর্তমানে বিএনপি তাদের রাজনৈতিক ভুল থেকে শিক্ষা নেবে। বিএনপি তাদের অনেক দিনের মিত্র জামায়াতকে ছেড়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আবার নতুন করে বাংলাদেশের রাজনীতির পথ পরিক্রমায় হাঁটবে। এমনও জনশ্রুতি ছিল যে, বিএনপির যে অংশটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তারা এই সুযোগে খালেদা-তারেকের অপরাজনীতি থেকে বিএনপিকে বের করে নিয়ে আসবেন। কিন্তু বিএনপি যে কখনই তার জন্মসঙ্গী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে ছেড়ে আসবে না সেটা ক্রমশ প্রমাণিত হচ্ছে। এটাও প্রমাণিত হচ্ছে যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সময় থেকেই ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের গোপন আঁতাত ছিল। অথচ ড. কামাল হোসেন এবং তার সঙ্গী-সাথীরা শুরু থেকেই তথাকথিত ‘গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষা’ আন্দোলনের নামে উচ্চাকাক্সক্ষী কিছু শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে কৌশলে ধোঁকা দেয়ার অপচেষ্টা করেছেন। ‘পরিবর্তন’ নামের এক বহুলচর্চিত এবং উচ্চাকাক্সক্ষী আকাশ কুসুম মেওয়া উপহার হিসেবে সামনে ধরেছেন। যে বিএনপি-জামায়াতগোষ্ঠী তাদের অতীত অপকর্মের দায়ে এতদিন গর্তে লুকিয়ে ছিল তাদের প্রকাশ্যে এনেছেন। বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মান্ধগোষ্ঠীর তা-বের সামনে আরেকবার নিক্ষেপ করেছেন। পেট্রোলবোমা-আগুন সন্ত্রাসসহ সকল অপকর্মের জন্য দায়ী কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের নির্বাচন করার সুযোগ করে দেয়ার অপচেষ্টা করেছেন। জীবনব্যাপী সুযোগসন্ধানী ড. কামাল হোসেন সে অপচেষ্টা করেছেন অত্যন্ত সুক্ষ্ম কৌশলে পূর্ব-পরিকল্পনা করেই। ড. কামাল হোসেন এবং তার সঙ্গীরা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলেন সেই বহুশ্রুত কথা; কিছু মানুষকে কিছু সময়ের জন্য ধোঁকা দেয়া যায় কিন্তু সব মানুষকে সব সময়ের জন্য ধোঁকা দেয়া কখনই সম্ভব নয়। অথচ কামাল-মান্না-রব-কাদের সিদ্দিকীরা জামায়াতমুক্ত বিএনপিকে সামনে এনে বাংলাদেশের কিছু মানুষকে নির্বাচনের সময়ে ধোঁকা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জামায়াত-শিবির অল্পদিনের মধ্যেই তাদের হিংস্র দাঁত-নখ-থাবা বের করে এনেছে। বিএনপিও তাদের বশংবদ চিরসঙ্গী জামায়াতকে কিছুদিন আড়ালে রেখে অল্প পরেই প্রকাশ্য আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরেছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি বেদীমূলে ড. কামাল হোসেনের বেসামাল অবস্থা দেখে যাঁরা বিস্মিত হয়েছেন, তারা ভুল করছেন। ড. কামাল হোসেনের অসৌজন্যবোধ ও অশালীন আচরণের দৃষ্টান্ত পূর্বেও অনেক আছে। আদালতে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তাকে ‘বাস্টার্ড’ বলে পরে ক্ষমাও চেয়েছেন ড. কামাল। তাই তাঁর মুখে উচ্চারিত ‘খামোশ’ শুধু একজন সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে ছিল না, তা ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোটি কোটি মানুষের প্রতিও। কারণ, ড. কামাল হোসেনদের গঠিত ঐক্যফ্রন্টের এবারের নির্বাচনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যই হলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা অদম্য সাহস নিয়ে ১৯৭১-এর মানবতাবিরোধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন, কামাল হোসেনরা আবার সেই যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়ার অপচেষ্টা করছেন। অথচ বাংলাদেশের মাটি থেকে ১৯৭১-এর রক্তের দাগ এখনও মুছে যায়নি। এখনও ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। ড. কামাল হোসেনরা ভুলে গেছেন ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাতির জীবন থেকে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল, সে চেতনা এখন আগের চেয়ে আরও বেগবান, আরও অপ্রতিরোধ্য। ১৯৭১-এর ঘাতক দালাল আর যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরের কবর রচনা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে বাধাগ্রস্ত করতেই জামায়াত আর বিএনপিকে নিয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের এক বহুরূপী জোট। এই মুখ ঢাকা অপশক্তিকে বাংলাদেশের মানুষ আবারও প্রতিহত করবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে। মাঝে মাঝে ভাবতেই অবাক লাগে, বাংলাদেশের মানুষকে কী ভাবেন ড. কামাল হোসেন আর তাঁর সঙ্গী-সাথীরা? জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী ইশতেহার নামের যে বিভ্রান্তিকর আহ্বান বাংলাদেশের মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন সেটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে শুধু প্রশ্নবোধক নয়, হাস্যকরও বটে। জামায়াত ও বিএনপি নামক দল দুটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের জন্য আদালতে দ-িত হয়েছেন। কারও কারও দ- কার্যকরও হয়েছে। অনেকের অপরাধই বিচারাধীন আছে। বিগত বছরগুলোতে বিএনপির সব নেতাই এই বিচারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। জামায়াতের ২৫ জন নেতা ঐক্যফ্রন্টের নামে নির্বাচন করছেন। ফাঁসিতে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া অনেক নেতার স্ত্রী-সন্তানও বিএনপি-জামায়াতের হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। অথচ এ দল দু’টোকে সঙ্গে নিয়েই নাকি ড. কামাল হোসেন মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখবেন? সত্যি কী বিচিত্র এ ঐক্যফ্রন্ট, সেলুকাস! আজ বাংলাদেশের মানুষ প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আসল উদ্দেশ্যটা কী? সেকি বাংলাদেশের সমৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করা? আবারও বাংলাদেশকে জঙ্গীবাদী-সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করা? নাকি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ের মতো অন্য কোন শক্তিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা? যে ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ যখন তাদের নিজের ভালটা বুঝতে শিখেছেন তখন তাদের কাছে কোন ষড়যন্ত্রই হালে পানি পাবে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষকে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে শিখিয়েছেন। গ্রাম থেকে শহরে খাদ্য-স্বাস্থ্য-বাসস্থানসহ সকল ক্ষেত্রেই মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়েছে। নতুন প্রজন্ম আধুনিক ডিজিটাল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। শেখ হাসিনার সাহসী ও অদম্য নেতৃত্বে যে বাংলাদেশ স্বল্প থেকে মধ্যম, মধ্যম থেকে উন্নত আয় ও জীবনমানের বাংলাদেশে রূপান্তরিত হচ্ছে, সেই অগ্রযাত্রাকে থামাবে সে শক্তি কারও নেই। বাংলাদেশের মানুষ যখন স্বপ্ন দেখতে শিখেছে, সে স্বপ্ন কেড়ে নেয়ার সাধ্য বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টের নেই। যতদিন যাবে ড. কামালদের তথাকথিত প্রগতিশীলতার মুখোশ খসে বেরিয়ে আসবে বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রদায়িক হিংস্র মুখ। লেখক : প্রকৌশলী
×