ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আর মাত্র ১৮ দিন

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

আর মাত্র ১৮ দিন

বিভাষ বাড়ৈ ॥ প্রতীক বরাদ্দ শেষ। নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১৮দিন। জোট- মহজোটের রাজনীতির খেলায় এবার প্রার্থীরা প্রতীক হাতে জোটের সকল দলের নেতাকর্মীকে নিয়ে নেমেছেন নির্বাচনী প্রচারে। নৌকা প্রতীক পাওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে যেমন জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের শরিক নেতারা তেমনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রচারে নামা জাতীয় পার্টি ও প্রার্থীর সঙ্গে আছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। একই চিত্র এখন বিরোধী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও তাদের মূল শরিক বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের ক্ষেত্রেও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একই প্রতীকের পাশে সমমনা দলের নেতাদের নির্বাচনী প্রচারের চিত্র এবার স্বাভাবিকভাবেই বেশি দেখা যাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের ক্ষেত্রে। কারণ এই জোটে নৌকার বাইরেও অনেক আসনে লাঙ্গল ছাড়াও কিছু প্রতীক দেখা যাবে, যা বিএনপি জোটের ক্ষেত্রে হবে না। এবার জামায়াত একদল হিসেবে বেশি প্রার্থী এ জোটে নির্বাচন করলেও তাদের নেই আলাদা প্রতীক। যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতসহ ঐক্যফ্রন্টের সকল দলেই প্রতীক হচ্ছে ধানের শীষ। জামায়াতের মতো ড. কামাল, মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম আবদুর রব এমনকি কাদের সিদ্দিকীও নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই। ফলে এ জোটে একটি প্রতীকের পাশেই আছেন সবাই। কিন্তু আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বাইরে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল আছে অন্তত ২৯ প্রার্থী। যেখানে জোটের প্রার্থীই হচ্ছে লাঙ্গলের প্রার্থী। এছাড়া জাতীয় পার্টি (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) জোটের প্রার্থী হয়েও লড়বেন বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে। সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পরপরই লাঙ্গল প্রতীক হাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাপার অসংখ্য নেতাকে নিয়ে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন ঢাকা-৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তিনি ধোলাইপাড়, মীর হাজিরবাগ ও জুরাইনে জনসংযোগ করেন। পরে পোস্তগোলা রেলগেট চত্বরে এক পথসভায় বক্তব্য দেন বাবলা। সভায় বক্তব্য দেন শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মাসুদ, আওয়ামী লীগ নেতা শামিম উর রহমান অভি, কাওসার আহমেদ, ইব্রাহিম মোল্লা, শেখ মাসুক রহমান, সুজন দে প্রমুখ। পথসভায় বাবলা বলেন, ঢাকা-৪ আসনে শেখ হাসিনা ও পল্লীবন্ধু এরশাদের প্রতীক হচ্ছে লাঙ্গল। এ প্রতীক উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামী মূল্যবোধের শক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বহাল রাখতে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ঢাকা ১৮ আসনের নৌকার মাঝি এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের জন্য নৌকার ভোট প্রচারে মাঠে সরব মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা। উত্তরা-তুরাগের ব্যবসায়ী অন্যজীবন সমিতির মালিক শামীম হোসেন বলেছেন ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ভাল মনের মানুষ, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে প্রচারে জাতীয় পার্টি নেতারা মাঠে আছে-থাকবে। ঢাকা-১৮ আসনের সকল থানা কমিটির নেতাদের নিয়ে আলোচনা সভা ও মতবিনিময় সভা হয় করেছেন উত্তরা পশ্চিম থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি শরীফুল আলম সোহেল। আলোচনা সভাটি সোহেলের বাস ভবনের হলরুমে হয়েছে । ঢাকা-১৮ আসনের সকল থানার জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন তুরাগ থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলাউদ্দিন আলাল, উত্তরা পশ্চিম থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি শরীফুল আলম সোহেল, খিলখেত থানা মোহাম্মদ আলী ও মোঃ নজরুল সরদার, দক্ষিণখান থানার সভাপতি বোরহান উদ্দিন শেখ, উওরা পশ্চিম থানা সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন হাওলাদার নয়ন, বিমানবন্দর থানার নয়ন, তুরাগ থানার সাংগঠনিক সম্পাদক লেহাজ উদ্দিন সরকার, উওরখান থানার মিজানুর রহমান বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক উওরা পশ্চিম থানার সাধারণ সম্পাদক জলিলুর রহমান জলিল প্রমুখ। তারা বলেন, মহাজোটের প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। ঢাকা-৬ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের পক্ষে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ। জুবলি স্কুল মাঠে ঢাকা-৬ আসনের ১১টি ওয়ার্ডের যুবলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের সভাপতিত্বে সভায় মহাজোটের এমপি কাজী ফিরোজ প্রধান অতিথি ছিলেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, সহসভাপতি আলী আকবর বাবুল, মাহবুবুর রহমান পলাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু, জামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ দক্ষিণের সভাপতি মেহেদী হাসান প্রমুখ। সভায় যুবলীগকে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি মহাজোট মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন যুবলীগ দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। দেশের যুবসমাজ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকেই ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে। যুবলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করতে হবে। ঢাকার বাইরেও রাজশাহীতেও প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর শুরু হয়েছে একইভাবে প্রচার। সোমবার সকাল ১০টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম আব্দুল কাদের। প্রতীক নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রচার শুরু করেন অনেকেই। এছাড়াও প্রতীক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পোস্টার টানানোর হিড়িক পড়ে যায় শহরজুড়ে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় মূল দলের প্রার্থীরা আগে থেকেই পোস্টার ছাপিয়ে রেখেছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতীক বরাদ্দের পর পরই প্রার্থীদের সাদা-কালো নির্বাচনী পোস্টারে নগরী ছেয়ে গেছে। রাজশাহীর হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রাজশাহী-১ আসনে নৌকার প্রতীক পান ওমর ফারুক চৌধুরী। আর ধানের শীষ প্রতীক পান সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক। রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশাকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়। ধানের শীষ প্রতীক পান মিজানুর রহমান মিনু। রাজশাহী-৩ আসনে আয়েন উদ্দিন নৌকা, শফিকুল হক মিলন ধানের শীষ, রাজশাহী-৪ আসনে প্রকৌশলী এনামুল হক এমপি নৌকা, সাবেক এমপি আবু হেনা ধানের শীষ, রাজশাহী-৫ আসনে ডাঃ মনসুর রহমান নৌকা ও সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা ধানের শীষ এবং রাজশাহী-৬ আসনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম নৌকা ও আবু সাঈদ চাঁদ ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের ছয়টি আসনের ছয় প্রার্থী প্রতীক পেয়েছেন হাতপাখা। রাজশাহীর সদর আসনের মহাজোটের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা নিজে গিয়ে প্রতীক সংগ্রহ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মহাজোটের নেতাকর্মীরা।
×