ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত উৎপাদনের নতুন টার্গেট নির্ধারণ করা হচ্ছে ৮০ হাজার মেও

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

বিদ্যুত উৎপাদনের নতুন টার্গেট নির্ধারণ করা হচ্ছে ৮০ হাজার মেও

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুত উৎপাদনের নতুন লক্ষ্য ৮০ হাজার মেগাওয়াট নির্ধারণ করছে সরকার। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান ২০১৬ রিভিউ করে বলা হচ্ছে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের জন্য এই পরিমাণ বিদ্যুত প্রয়োজন হবে। বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণে সমন্বয় করতে রবিবার বিদ্যুত ভবনে এ সংক্রান্ত একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ওই সেমিনারে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সকল সংস্থার সমন্বয় করার ওপর জোর দেয়া হয়। সরকার গত ১০ বছরে বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র যেমন বৃদ্ধি করেছে তেমনি দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন দেশের ৯২ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুত রয়েছে। আর বাকি আট ভাগ মানুষের ঘরে আগামী বছরের মধ্যে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে। গত কয়েক বছরে বিদ্যুত উৎপাদন এবং চাহিদার যে প্রবৃদ্ধি তাতে দেখা যায় দেশে দ্রুত বিদ্যুত চাহিদা বেড়ে চলেছে। সেমিনারে বলা হয়েছে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে দিতে ব্যাপক শিল্পায়ন প্রয়োজন। এজন্য বিদ্যুত উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই। নতুন উৎপাদন পরিকল্পায় জ্বালানি সংমিশ্রণের পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান-২০১০ কয়লা দিয়ে ৫০ ভাগ এবং অন্য জ্বালানিতে ৫০ ভাগ বিদ্যুত উৎপাদনের কথা বলা হয়। পরে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান ২০১৬ তে এর পরিবর্তন করে কয়লাতে উৎপাদনের পরিমাণ ৩৫ ভাগে নামিয়ে আনা হয়। বাকি ৭০ ভাগের মধ্যে ৩৭ ভাগ এলএনজি এবং গ্যাসে উৎপাদনের কথা বলা হয়। বাকি ৩০ শতাংশ আমদানি এবং অন্য জ্বালানিতে উৎপাদনের কথা বলা হয়। মাস্টারপ্ল্যানটি রিভিও করে কলা হচ্ছে কয়লা থেকে উৎপাদন হবে ৩৩ ভাগ, এলএনজি এবং গ্যাস থেকে উৎপাদন করা হবে ৪৩ ভাগ। বাকি ২৫ ভাগের মধ্যে আমদানি, জ্বালানি তেল এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উৎপাদন হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উৎপাদন হবে ১০ ভাগ। তবে বিদ্যুত আমদানির পরিমাণ মোট উৎপাদনের ১৫ ভাগের বেশি হবে না। তবে কোন একক দেশ বা একক উৎস থেকে ১০ শতাংশর বেশি বিদ্যুত উৎপাদন করা যাবে না। তবে বিদ্যুতের উৎপাদনের সঙ্গে বিতরণেন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে সেমিনারে। শিল্প কারখানায় গ্রিডের বিদ্যুত বেশি ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হয়। দেশে গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকলেও শীতে কমে আসে। এ সময় বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখতে হয়। এতে বিদ্যুত উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি থেমে মুক্তির জন্য শিল্প কারখানায় নিজস্ব উৎপাদন কমিয়ে এনে গ্রিডের বিদ্যুত ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হয়। তবে দেশে বড় বড় যেসব ইপিজেড নির্মাণের কাজ চলছে তা শেষ হলে এখাতে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারী হিসেবে এখন দেশের গ্রিড ভুক্ত বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ১৭ হাজার ৬৩৭ মেগাওয়াট। গ্রীষ্মে চাহিদা থাকলেও শীতে এই চাহিদা কমে যায়। এখন শীতে দিনের বেলা ৫ হাজার ৭৯৮ মেগাওয়াট এবং সান্ধ্যকালীন সময়ে ৮ হাজার ৩৫০ মেগাওয়ট বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেন, দেশের ৯২ ভাগ মানুষ বিদ্যুত পাচ্ছে। এ অগ্রগতিতে জ্বালানি বিভাগের অবদান স্মরণ করে বলেন, আরও সমন্বিতভাবে কাজ করার উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান ভবিষ্যত অগ্রগতিতে কীভাবে আরও অবদান রাখতে পারবে তা সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করা সময়ের দাবি। তিনি মনে করেন পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে সমন্বয় থাকলে লক্ষ্য বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন হবে না। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। ইলেকট্রিক চার্জিং স্টেশন বাড়াতে হবে কেননা আগামীতে ইলেকট্রিক যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। স্মার্ট গ্রীড, স্ক্যাডা, অনলাইনে সমস্যা সামাধান প্রযুক্তি সংযুক্ত করতে হবে। আমাদের এসব ক্ষেত্রে অভ্যস্ত হতে হবে এবং জনগণকে অভ্যস্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদের মধ্যে বিদ্যুত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম বক্তব্য রাখেন।
×