ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোনা রশিদ

মীমের মীনা জয়ের গল্প

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

মীমের মীনা জয়ের গল্প

মীম নোশিন নাওয়াল খান। বয়স অল্প হলেও নামের মতোই লম্বা মেয়েটির অর্জনের তালিকা। এ বছর ষষ্ঠবারের মতো দ্বাদশ শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েটি জিতে নিয়েছে ইউনিসেফের মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড। দৈনিক জনকণ্ঠের ঝিলিমিলি পাতায় প্রকাশিত সায়েন্স ফিকশনধর্মী শিশুতোষ গল্প ‘টুপিটুন’-এর জন্য এ বছর মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ডের প্রিন্ট মিডিয়া-সৃজনশীল, অনুর্ধ ১৮ বিভাগে প্রথম পুরস্কার জিতে নিয়েছে মীম। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেস্ট। মীমের লেখার হাতেখড়ি খুব ছোটবেলা থেকেই। প্রকৃতি, পরিবেশ এবং কল্পজগতকে একই সুতোয় গেঁথে মীম বুনে চলছে গল্প-ছড়ার মালা। ক্লাস থ্রি-তে পড়াকালীন তার প্রথম বই ‘কনকচাঁপা’ প্রকাশের মাধ্যমে মীম সে সময়ে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপরের বছরেই সে জিতে নেয় সম্মানজনক মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ডের প্রথম পুরস্কার। এরপর মীম আরও ৭ বার মীনা এ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পেয়েছে এবং ৫ বার জিতে নিয়েছে সম্মানজনক পুরস্কারটি। এ প্রসঙ্গে মীম জানায়, ক্লাস ফোরে যখন পড়ি, তখন পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে একদিন হুট করেই মীনা এ্যাওয়ার্ডের সার্কুলার চোখে পড়ে। সেখানে মীনার ক্রেস্টের ছবি ছিল। সেটা দেখে আমার খুব আগ্রহ জন্মাল। একটা গল্পই জমা দিয়েছিলাম। ওই গল্পটাই প্রথম পুরস্কার পেয়ে গেল। পুরস্কার পাওয়ার পর থেকে থেমে থাকেনি মীম। একের পর এক জিতে নিয়েছে মীনা এ্যাওয়ার্ড। এছাড়াও ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত রাইটিং কম্পিটিশনে অন্যতম সেরাসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছে। শুধু লেখালেখিই নয়, গুণী এই মেয়েটি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে ফটোগ্রাফি, উপস্থিত বক্তৃতা, কবিতা আবৃত্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি সোসাইটি আয়োজিত দ্বিতীয় জাতীয় আলোকচিত্র উৎসবে স্কুল বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয় মীম। এছাড়া স্কুল-কলেজের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিষয়ে পুরস্কারের ঝুলি ভারি হচ্ছে তার। দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত লেখার জন্য এ বছর মীনা এ্যাওয়ার্ড পাওয়া প্রসঙ্গে মীম বলল, এই লেখাটা পড়েই ঝিলিমিলির বিভাগীয় সম্পাদক ইব্রাহিম নোমান ভাইয়া বলেছিলেন, গল্পটা তুমি এ বছর মীনা এ্যাওয়ার্ডের জন্য সাবমিট করবে। সাধারণত আমার কোন গল্পটা মীনা এ্যাওয়ার্ডের জন্য সাবমিট করবো তা আমার মা বাছাই করে দেন। এছাড়া গল্পটা ছাপা হওয়ার পর থেকেই অনেক সাড়া পাচ্ছিলাম। ফোন, ফেসবুক, ইমেইলে অনেকেই ভাললাগার কথা জানিয়েছিলেন। পাঠকের ভাললাগাই লেখকের সার্থকতা। তাই এই গল্পটা লেখা সার্থক মনে হচ্ছিল। আর এ গল্পটাই পুরস্কার পেয়ে যাওয়ায় ভীষণ ভাল লাগছে। কখন থেকে লেখালেখির শুরু জানতে চাইলে মীম জানায় এক বিস্ময়কর তথ্য। লেখা নয়, বলা দিয়ে শুরু তার সাহিত্য জগতে পথচলা। প্রথম যখন কথা বলতে শেখে, তখন থেকেই মীম ছন্দ মিলিয়ে কথা বলত। আর তার কথাগুলো রেকর্ড করে রাখতেন তার মা। এভাবে স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেই মীমের মুখে মুখে বলা ছড়া প্রকাশিত হয় ফরিদপুরের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে। লেখালেখি মীমের কাছে অক্সিজেনের সমতুল্য। তার মতে, অক্সিজেন ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না, সে লেখালেখি ছাড়া একদমই থাকতে পারে না। আর তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সমান তালে চলছে তার সাহিত্যচর্চা। শুধু নিজের প্রতিভা নিয়েই ব্যস্ত নয় মীম, দেশ এবং সমাজ নিয়েও তার চিন্তা-ভাবনা। মাদকবিরোধী আন্দোলন, পথশিশু এবং বৃদ্ধদের নিয়ে নানা কার্যক্রমসহ অনেক ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে বেঁধে নিয়েছে মেয়েটি। ছোট ছোট পদক্ষেপ থেকেই আসবে বড় পরিবর্তনÑ এই ভাবনাকে কেন্দ্র করে মীম প্রতিষ্ঠা করেছে ‘দ্য কাইন্ড সোউল’ নামে একটি সংগঠন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলে লাইব্রেরি তৈরি করে তাদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করা, প্রাথমিক চিকিৎসাবিষয়ক কর্মশালা করে এই স্কুলগুলোতে ফার্স্ট এইড কিট বিতরণসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে সংগঠনটি।
×