ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাজারের স্বস্তি ভোটের মাঠে সুফল দেবে আওয়ামী লীগকে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

 বাজারের স্বস্তি ভোটের মাঠে সুফল দেবে আওয়ামী লীগকে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পণ্যমূল্য নিয়ে বাজারের স্বস্তি ভোটের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোক্তারা। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময় দু’একটি পণ্য ব্যতীত বছরের বেশির ভাগ সময় ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক ছিল। পণ্যমূল্য নিয়ে ভোক্তাদের স্বস্তি, আওয়ামী লীগ সরকারকে ভোটের রাজনীতিতেও স্বস্তি এনে দিবে বলে ভোক্তাদের বিশ্বাস। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার ও পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারে ভোগ্যপণ্যের ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এ প্রসঙ্গে জানান, এ বছর শীত আসার আগে সবজিতে ভরে গেছে বাজার। আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে আছে ইলিশসহ পর্যাপ্ত দেশীয় মাছের সরবরাহ। ডাল পাওয়া যাচ্ছে ৫০ টাকায়। ৩৫-৩৮ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে মোটা চাল। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ফুলকপি। বছর শেষে সব জিনিসের দাম এখন কমতির দিকে রয়েছে। ন্যায্যমূল্যে জিনিসপত্র কেনার সুযোগ থাকায় ভোক্তারা খুশি। ছুটির দিনে কাওরান বাজারে মাছ কিনছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা তারিক আহমেদ খান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক থাকা বর্তমান সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক বিষয়। ভোটের রাজনীতিতে অবশ্যই এর একটি ইতিবাচক ফল পাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। পুরো বাজার ব্যবস্থাপনায় এখন শৃঙ্খলা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, প্রকৃতিও এই সরকারের প্রতি সহায় হয়েছে। এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। চারদিকে নতুন ধানের নবান্ন উৎসব চলছে। অন্যদিকে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হয়েছে এ বছর। ইলিশসহ সব মাছের দাম এখন অন্য যে কোন সময়ের কম। সব ধরনের পণ্যের দামই এখন স্বাভাবিক রয়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ খুশি। তিনবেলা পেটভরে খেতে পারলে এদেশের সাধারণ মানুষের আর কিছুর তেমন চাহিদা থাকে না। এই বাস্তবতায় পণ্যমূল্য নিয়েও সরকার ভাল অবস্থায় রয়েছে। ওই বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, বছরের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন সবজির দাম কম। দাম কমার এই সুফল বর্তমান সরকার ভোটের মাঠে পাবে। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জিনিসপত্রের দাম কম থাকে। তিনি বলেন, সবজিসহ সব ধরনের ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম এখন কম। এমনকি মাছেরও উৎপাদন এ বছর ভাল হয়েছে। চাল ও পেঁয়াজ এখন সবচেয়ে কম দামে পাচ্ছেন ভোক্তারা। জিনিসপত্র বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের দাম কমে যাওয়া ভাল লক্ষণ। আগামী নির্বাচনে এর একটি ইতিবাচক ফল সরকারের ঘরে আসবে বলে জানান তিনি। জিনিসপত্রের স্বাভাবিক দাম বজায় থাকায় ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি বিরাজ করছে। চাল ও মাছের দাম কমে যাওয়ায় খুশি নিম্ন আয়ের মানুষ। এছাড়া শীতের সবজির দাম কমে যাওয়ায় বাজারের তেজ এখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। সামনে পণ্যের দাম আরও কমবে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। বাজারে অধিকাংশ সবজি এখন ১০-৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিজোড়া মাঝারি সাইজের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকায়। এছাড়া ৪০০-৮০০ টাকার মধ্যে প্রতিকেজি চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে। এদিকে, বাজারে প্রতিকেজি সিরাজ মিনিকেট ও মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। স্বর্ণা চাল ৩৮, মোটা চাল ৩৫, সাকি-আটাস ৪৪ থেকে ৫০ ও আমিন-আটাস ৪০ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাল বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে মোটা চালের দাম গত এক মাসের ব্যবধানে মানভেদে কেজিতে কমেছে ৪-৫ টাকা। এছাড়া উন্নতমানের মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো চালের দামও কেজিতে ২-৩ টাকা করে কমে আসছে। আমন ধানের বাম্পার ফলন ও গ্রাম পর্যায়ে দশটাকা কেজির সরকারী চাল বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে সব ধরনের চালের দাম এখন নিম্নমুখী। কাপ্তান বাজারের চাল বিক্রেতা নুরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এখন আমন ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ বছর ধানের উৎপাদন ভাল হয়েছে। এছাড়া দেশে বিপুল পরিমাণ আমদানিকৃত চাল মজুদ রয়েছে। এ কারণে সরবরাহ বাড়ায় মোটা চালের দাম হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল দেশের মধ্যে মজুদ রয়েছে। এ কারণে চালের দাম আর বাড়বে না। এদিকে, নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়, ডোবা ও পুকুরের পানি কমতে শুরু করায় দেশী জাতের মাছের সরবরাহ বেড়েছে রাজধানীর বাজারে। বছরের অন্য সময়ে মাছ বেশি দামে বিক্রি হলেও এখন দাম কম। এদিকে, বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ আমদানি ২০-৩০ টাকা, দেশীটি ২৫-৩০, প্রতিকেজি মুগ ডাল ১২০ টাকায়, ভোজ্যতেল প্রতি লিটার খোলা ৭৮-৮৪ টাকায় ও বোতলজাত ১০০-১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি ৫৫-৬০, আটা ২৬-৩৬ টাকা এবং প্রতিকেজি আদা ৮০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, কেজিতে ১০ টাকা দাম কমেছে ব্রয়লার মুরগির। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১২৫ টাকায়। এছাড়া গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা ও খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
×